ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নূরের সমর্থকদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীদের ফের সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  নূরের সমর্থকদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীদের ফের সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে ভিপি নুরুল হক নূরের অবস্থান, ভিডিও বার্তায় সরকার ও ভারত বিরোধী উগ্রবাদী বক্তব্যের জেরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যথারীতি এবারও ভিপি নুরুল হক নূর ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্র্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন। ডাকসু ভবনের ভিপির কক্ষেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনার জন্য আহত ভিপি নূর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন। তবে বহিরাগতদের ডাকসুতে নূরের তৎপরতা ও সরকার ও ভারত বিরোধী উগ্রবাদী বক্তব্যের জন্য সংঘর্ষের কথা জানালেও নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ। নূর ও তাদের অনুসারীদের বক্তব্য, প্রতিদিনের মতোই ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর তার সমর্থকদের নিয়ে তার কক্ষে অবস্থান নেন। দুপুর একটার দিকে মুুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরাও ডাকসু ভবনের সামনে অংশ নেন। এ সময় ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ভিপি নূরের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা ভিপি নূরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থীতিশীল না করার আহ্বান জানান। এরপর তারা চলে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার জন্য তাই ছাত্রলীগের নির্দেশ আছে বলে মনে করছেন নূরের পক্ষ। নূর ও তার অনুসারীরা দাবি করেছেন, সংঘর্ষ চলাকালীন ডাকসু ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া নিচ থেকে এক পক্ষের ছুড়ে মারা ইট-পাটকেলে ডাকসু ভবনের জানালার কাচ ভেঙ্গে যায়। পরে আহতদের এ্যাম্বুলেন্স ও রিক্সা করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষে আহত সকলের নাম পরিচয় স্পষ্ট করতে পারেননি নূরের সমর্থকরা। যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও কোটা আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক এপিএম সোহেল (২৭), বাংলা কলেজের অর্থনীতির ৩য় বর্ষের ছাত্র ও কোটা আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াদ হোসেন (২১), ঢাবির ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ও আহ্বায়ক হাসান মাহমুদ (২৩), ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগ ফাইনালের ছাত্র মোঃ রাসেল সরকার (২৫), ঢাকা কলেজের ছাত্র সুমন (২২), কবি নজরুল কলেজের পদার্থ বিভাগের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (২৫), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফুল ইসলাম (২৫) ও ঢাবির মশিউর রহমান (২৩)। দুই পক্ষের হামলা পাল্টা হামলার এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী এসে দরজা খোলার ব্যবস্থা করেন। এরপরেই আহতদের এ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসা নিতে ঢামেক পাঠিয়েছেন প্রক্টর। তিনি বলেন, ডাকসুতে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছিল। ভিপির কক্ষে অনেক ভাংচুর হয়েছে। সেখানে অনেকেই বহিরাগত ছিল। ছাত্রসুলভ আচরণ কারোর মধ্যে দেখিনি। কোন পক্ষেরই না। আমরা আগেই নূরকে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় তার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তবে আজ কোন পক্ষকেই ছাত্রসুলভ আচরণ কারোর মধ্যে দেখিনি। এদিকে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও ডাকসু নির্বাচিত সিনেট সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস বলেছেন, ভিপি নূর বহিরাগত ও শিবির কর্মী নিয়ে ডাকসু ভবনে প্রবেশ করেছেন। এ নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছি। অথচ এই আহ্বান জানাতে গেলে নূর আমার কাছে জানতে চায় আমি কে? আসলে নূর চেয়েছে এখানে অস্থিরতা হোক। বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবনে অবস্থান করা দিনের পরদিন সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে সে। সরকার বিরোধী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আশীর্বাদ পেয়ে সে অব্যাহতভাবে এসব করছে বলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্যে সব সময় অসন্তোষ ছিল। আজকে আবার একই কাজ করার কারণে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির দাবি, নূরের পক্ষে শিবিরের ছেলেরা ছিল বলেই আহত হয়ে সকলের পরিচয় দিতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলেও আমরা তথ্য পাচ্ছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। এখানে ভিপির কক্ষে সব সময় কিভাবে ৪০-৪৫ জন বহিরাগত থাকে? তারা কারা? তবে হামলায় ছাত্রলীগের কেউ ছিল না বলে দাবি করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, ভিপি নূরের আর্থিক লেনদেনের কথোপকথন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর তার প্রতি শিক্ষার্থীদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে আগেও এ ধরনের হামলা হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দুপুর ১২টার দিকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস পাঠানোর প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে তারা ডাকসু ভবনের দিকে যান। এ সময় সেখানে ভিপি নুরুল হক নূর তার অনুসারীদের মধ্যে বহিরাগতদের নিয়ে অবস্থানকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ এনে নুরুল হককে ডাকসুতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জিএস গোলাম রাব্বানী। ডাকসুতে ভিপি নূরকে আর ঢুকতে দিবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রবিবার সংঘর্ষের পর এই ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুকে ব্যবহার করে অরাজকতা করছেন ভিপি নূর। সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে জড়ো হন তিনি। ডাকসুর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই তিনি এ কাজটি করেছেন। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠি ছিল। অন্যদিকে আহতদের বিষয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন বলেন, আহত অবস্থায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত হাসপাতালে এসেছেন। সবারই কিল ঘুষি ও লাঠির আঘাত। কারও অবস্থা গুরুতর নয়। কারও শরীরে কোনও ধারাল অস্ত্রের আঘাত নাই। সবাইকে অভজারভেশনে রাখা হয়েছে। যারা হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অনুভব করছেন তাদের এক্সরে, ইসিজি করে দেখা হচ্ছে। আহত ফারাবি লাইফ সাপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূর এবং তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় আহত তুহিন ফারাবিকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে। রবিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার তুহিন ফারাবি রাজধানীর চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের- সম্মিলিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক। এ কে এম নাসির উদ্দীন বলেন, ফারাবির খিঁচুনি ছিল। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ফারাবি বাদে বাকি তিনজন যারা ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের ছিল তাদের মধ্যে দুইজনকে কেবিনে নেয়া হয়েছে। বাকি একজনকে সেখানেই আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরে নুরুল হক নূর ও তার সহযোগীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ঢাবির ডাকসু ভবনে ভিপির কক্ষে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নূর ও তার সংগঠনের অন্তত ১৭ জন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ছাত্রলীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিএনপি ও ড. কামালের নিন্দা নুরুল হক নূর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আহুত সংহতি ও প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামধারী ছাত্রলীগের হামলায় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর, হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, ফারুক হাসানসহ অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। নুরুল হক নূর ও তার সহযোগীদের ওপর ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা হয়েছে দাবি করে নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল বলেন, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
×