ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চোখ রাঙ্গাচ্ছে লাঠিয়াল বাহিনী

চরফ্যাশনে পাকা ধান লুটের শঙ্কায় কৃষক

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  চরফ্যাশনে পাকা ধান  লুটের শঙ্কায়  কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, চরফ্যাশন, ২২ ডিসেম্বর ॥ ভোলার চরফ্যাশনের চরাঞ্চলের পাকা আমন কাটা শুরু হয়েছে। লাঠিয়াল বাহিনী কৃষকের পাকা আমন ধানে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। চরাঞ্চলের কৃষক এখন পাকা ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন। লাঠিয়াল বাহিনীর তৎপরতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চরাঞ্চল। রসুল গ্রামের আবদুল কাদের জানান, চর শশীভূষণ মৌজার ৩৪নং তৌজিভুক্ত, ৯৯নং জেএল, ৩৬৫নং এসএ খতিয়ানে ১৪৪৮, ১৪৪৯, ১৪৫০, ৩৬৩১, ৩৬৩২নং এস এ দাগে, ৬৫০নং ডিয়ারা খতিয়ানে ২২৭৩, ২২৭৪ নং দিয়ারা দাগে ৭ একর ৪২ শতাংশ জমি খরিদ সূত্রে মালিক হয়ে আকতার হোসেন দেওয়ান, আবু তাহের ও মালেক গং ১৯৭৪ সাল থেকে ওই জমি ভোগ দখলে আছেন। দিয়ারা জরিপে ৬৫০নং খতিয়ানে ওই জমি তাদের নামে শুদ্ধভাবে রেকর্ড হয়। সম্প্রতি ওই জমি বিরোধীয় জমি দাবি করে শশীভূষণ ২নং ওয়ার্ডের সামসুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, রফিকসহ একদল লাঠিয়াল বাহিনী জমি দখল করে ধান লুট করার চেষ্টা কর আসছে। এতে আবু তাহের বাদী হয়ে সামসুদ্দিন, শাহাদাত, রফিকদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২৬৭/১৯ মামলা দায়ের করেন ওই মামলায় গত ২২ এপ্রিল ১৯ তারিখে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সামসুদ্দিন গংয়ের উপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। মামলাটির ৮৯(এ) ধারায় প্রতিকার ও নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২ মার্চ ‘২০ তারিখ ধার্য করেছেন। এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সামসুদ্দিন গং লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে পাকা আমন ধান লুটের চেষ্টা করছে। অপরদিকে থানায় অভিযোগ দিয়ে ধান কাটায় বাধা দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সামসুদ্দিন গংয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া যায়নি। শশীভূষণ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম জানান, ওই জমি তাহের গংয়ের দখলে রয়েছে, তবে দু’পক্ষের কোন পক্ষই পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ওই জমির পাকা ধান নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দু’পক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। চর আইচা গ্রামের মমিন জানান, চর কচ্ছপিয়া মৌজায় এসএ ৩০৭ খতিয়ানে ১১৮৮ দাগে (বর্তমানে ডিয়ারা দাগ ৪১৭৫, ৪১৭৬, ৪১৭৮, ৪১৮৪) ক্রয় সূত্রে আমরা ৩ একর জমির মালিক হয়ে দীর্ঘ ৫০/৬০ বছর ধরে ওই জমি ভোগ দখলে আছি। ওই জমিতে চর কচ্ছপিয়া গ্রামের আলোচিত ভূমিদস্যু আলী হোসেন (চুট্টো) জাল জালিয়াতি করে তার ছেলে জয়নালের নামে বন্দোবস্ত কাগজ তৈরি করে ওই জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমাদের জমির কৃষক মিজান পাটোওয়ারীসহ তার স্বজনদের নামে ধান কাটার মিথ্যা মামলা করেছেন। আলী হোসেন তার নামে, তার ছেলে শহিদ, জয়নাল, জসিম ও তাদের স্ত্রীসহ বিভিন্ন জনের নামে স্ব নামে, বে-নামে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমির উপর বন্দোবস্ত কেইস তৈরি করে অনেক কৃষকের জমি দখল ও ধান লুট করেছে। চরকচ্ছপিয়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, চরমানিকা মৌজার ৩৩৬নং খতিয়ানে ৩০২৩ দাগে খরিদা সূত্রে ৩ একর জমির মালিক হয়ে দীর্ঘ বছর ভোগ দখলে আছি। আলী হোসেন চুট্টোসহ একটি জালিয়াত চক্র জাল দলিল করে ওই জমি দখলের চেষ্টা করে এবং আমার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি আর ১৬৫ মামলা দায়ের করা হয়েছে। চরফ্যাশনের বাজার ব্যাবসায়ী আবদুর রব জানান, চরকচ্ছপিয়া মৌজায় দেড় একর জমি তার পিতা নজুবল হক জীবিত থাকা অবস্থায় ক্রয় করেন। ওই জমি দীর্ঘ ২৫ বছর ভোগ দখল করে আসছি, সম্প্রতি আলী হোসেন (চুট্টো) ওই জমিতে বন্দোবস্ত কার্ড করেছে দাবি করে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ওই জমি দখল করে ধান কেটে নিয়ে গেছে। চর আইচা গ্রামের কাশেম সুকানী জানান, চরকচ্ছপিয়া মৌজা থেকে দেড় একর জমি বেচে দেয় আলী হেসেন। পরে প্রতারণা করে ওই জমি দখল না দিয়ে অন্যজনের কাছে আবার বিক্রি করে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, চরকচ্ছপিয়া গ্রামের আলী হোসেন ও ইসমাঈল ফকির জাল-জালিয়াতিকারী, প্রতারক, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী। আলী হোসেন ও ইসমাঈল ফকির অসংখ্য মানুষের জমির মধ্যে স্ব নামে, বে-নামে ও তার স্বজনদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বন্দোবস্ত কাগজপত্র, খতিয়ান তৈরি করে অনেককে জমি থেকে উৎখ্যাত করেছেন। কেটে নিয়েছেন কৃষকে ক্ষেতে ফলানো পাকা ধান। তাদের অত্যাচারে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত। আলী হোসেন ও ইসমাঈল ফকিরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য এলাকাবাসী সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ জানান, আলী হোসেন চুট্টো ও ইসমাঈল ফকিরের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
×