ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাহা ইসলাম

শীতের কাপড় ব্যবহারের আগে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

শীতের কাপড় ব্যবহারের আগে

বছর ঘুরে আবারও চলে এসেছে শীতের মৌসুম। চারদিকে এখনই হিম হিম আবহ ঘিরে ধরেছে। বাতাসে বইছে শীতের আমেজ। রাতে ঘুমানোর সময় এখন কাঁথা কম্বলের দরকার পড়ে যায়। আর যারা ভোর বেলা হাঁটাহাঁটি করেন তারা দেখতে পান কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের স্নিগ্ধ সকাল। সেই সঙ্গে শিশির ভেজা ঘাস, রাস্তাঘাট, গাছপালা। কুয়াশা ঘেরা ঠাণ্ডা আবহাওয়াই জানান দিচ্ছে যে কিছু দিনের মধ্যেই জেঁকে ধরবে শীত। কাজেই সবাই এখন আলমারি থেকে তাদের শীতের কাপড় নামানো প্রায় শুরুই করে দিয়েছেন। কিন্তু শীতের কাপড় আলমারি থেকে বের করে সরাসরি ব্যবহার করাও উচিত না। কারণ বছর ধরে আলমারি বা বক্সে পড়ে থাকা অব্যবহৃত গরম কাপড়গুলো ভ্যাপসা একটা ভাব হয়ে নেতিয়ে থাকে। এছাড়া পোকা আক্রমণেরও সম্ভাবনাও থাকে আর সঙ্গে গুমোট একটা গন্ধতো আছেই। কাজেই এসব কাপড় আলমারি থেকে বের করে সরাসরি গায়ে দেয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত না। এতে করে শরীরে এ্যালার্জিজনিত সমস্যা, র‌্যাশ ওঠা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কাজেই শীতের কাপড় ব্যবহারের পূর্বে বিশেষ কিছু দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শীতের কাপড় বলতে তো সোয়েটার, জ্যাকেট, মোজা, টুপি, কাঁথা, কম্বল, লেপ এসবই। সুতরাং দীর্ঘদিন বস্তা বন্দী এসব গরম কাপড়গুলো ব্যবহারের পূর্বে ভালভাবে ২/৩ দিন কড়া রোদ লাগিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে আর যেগুলো ধোয়ার উপযোগী সেগুলো ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও আরও বিস্তারিত জানতে চলুন একটু ডিটেইলে যাওয়া যাক! সোয়েটার সোয়েটার ব্যবহারের আগে ধুয়ে নেয়া ভাল। সোয়েটার মূলত উলের বা পশমের হয়ে থাকে। কাজেই এটা ধুতে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করে ঠা-া পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ধোয়া উচিত। আর সঙ্গে অল্প পরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে নিলে কাপড়টা আরও ঝকঝকে থাকবে, তবে সাদা কাপড়ের বেলায় পানিতে ভিনেগার না মিশানোই ভাল। তার বদলে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও বাজারে উলেন কাপড় ধোয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লিকুইড সামগ্রী পাওয়া যায়, যা কাপড়ের যতেœ অনেক উপকারী। সোয়েটার কখনই ব্রাশ বা হাত দিয়ে রগরিয়ে ঘষে বা কেচে ধোয়া উচিত নয়। তাতে করে সোয়েটারের আকার নষ্ট হয়ে যাবে। যতটা সম্ভব ওয়াশিং মেশিন এড়িয়ে চলাই ভাল তবে নিতান্তই দরকার পড়লে উলেন অপশনে দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করুন। ধোয়ার পর অন্যান্য কাপড়ের মতো না চিপে হালকাভাবে নিংড়ে নিয়ে রোদে শুকাতে দিন। ফ্লানেলের কাপড় ও অন্যান্য চাদর এসব কাপড়ের ক্ষেত্রেও সাবান ও ডিটারজেন্ট দিয়ে না ধুয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে এবং ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রেখে একটু কচলে নিলেই ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে বেশি ময়লা হলে এক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সামান্য কচলে নিলেই ময়লা উঠে যাবে, পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। কোট বা লেদারের কাপড় কোট আর লেদারের কাপড় ঘরে না ধুয়ে লন্ড্রিতে ড্রাই ক্লিন করিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এসব কাপড় ব্যবহারের সময় যতটা যতœশীল হতে হয় তেমনি ব্যবহারের পর হালকাভাবে নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। লেপ ও কম্বল লেপ ব্যবহারের পূর্বে কড়া রোদ লাগিয়ে কভারে ভরে গায়ে দিতে হবে। আর কম্বল ব্যবহারের আগে ড্রাই ক্লিন করিয়ে নিলে ভাল। সপ্তাহে একবার লেপ কম্বল দুটোই রোদ লাগিয়ে ঝেড়ে রাখতে হবে। কম্বলে খুব দ্রুতই ময়লা জমে আর এটা ধোয়ার মতো জিনিসও না। কাজেই কম্বলে কভার লাগিয়ে ঢেকে রাখলে ময়লা হবে না। নিয়মিত কম্বল আর লেপের কভার ধুয়ে পরিষ্কার রাখলেই হবে। কাশ্মীরী ও পশমী চাদর এগুলো ব্যবহারের আগে ভালভাবে রোদ লাগিয়ে গায়ে দিতে হবে। এই চাদরগুলো সারাসরি পানি দিয়ে ধোয়া উচিত না। এগুলো কেবল ড্রাইওয়াশ করাতে হয়। মোজা, মাফলার ও টুপি শীতে সোয়েটার, চাদরের চেয়ে বেশি ময়লা হয় মোজা, টুপি ও মাফলার। কাজেই কয়েকদিন পরপর এগুলো সাবান অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। কাঁথা কাঁথার জন্য আলাদা কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না। ব্যবহারের আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে এবং যতবার ময়লা হবে ততবারই একই পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলেই কাঁথার যত্ন নেয়া হয়ে যায়। এই সাধারণ বিষয়গুলো অনুসরণ করলেই শীতের কাপড় নিয়ে তেমন একটা ঝামেলায় পড়তে হবে না এবং এ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের মতো কোন সমস্যাও হবে না! সেই সঙ্গে শীতে সুস্থ ও নিরাপদে থাকতে পারবেন। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন!
×