ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ ফুটবল ক্লাব ৩-১ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ

আরামবাগকে হারিয়ে পুলিশের হাসি

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

আরামবাগকে হারিয়ে পুলিশের হাসি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৭ পৌষ, শনিবারের পড়ন্ত বিকেল। সময় সাড়ে ৪টা। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল এই মুহূর্তে ঢাকার তাপমাত্রা হচ্ছে ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু শীতের যে তীব্রতা, তাতে তাপমাত্রার এই পরিমাণটি সঠিক কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে কর্মরত ক্রীড়া সাংবাদিকরা। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে ‘এ’ গ্রুপে এদিন অনুষ্ঠিত একমাত্র ম্যাচে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের। খেলার একপর্যায়ে রেফারি সোহবার হোসেন ‘কুলিং ব্রেক’ দিলে দুই দলের ফুটবলাররা জল পান করছিলেন। তখন প্রেসবক্সের একজন মজা করে বললেন, ‘যে শীতে খেলা চলছে, এটাকে কুলিং ব্রেক না বলে হট ব্রেক বলা উচিত।’ খেলার শেষ আট মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল এবং একটি বল পোস্টে লেগে ফিরে আসা ... সবমিলিয়ে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা যেন শীতের পরিবর্তে উষ্ণ পরিবেশের আমেজের সৃষ্টি করছিল। আর এমন জমজমাট খেলার বিজয়ী দলের নাম পুলিশ। তারা ৩-১ গোলে হারায় ২০১৬ আসরের রানার্সআপ আরামবাগকে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে এগিয়েছিল ১-০ গোলে। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটা পুলিশের ইতিহাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় জয়। ম্যাচ শেষে পুুলিশের সাইপ্রাসের কোচ নিকোলা ভিতোরোভিচ বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ীই আমরা খেলেছি। যেসব সুযোগ পেয়েছি তা বেশিরভাগই কাজে লাগাতে পেরেছি। তবে সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আরও বেশি গোল করতে পারতাম। এখনও আমাদের কোয়ার্টারে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ ২ খেলায় ১ জয় ও ১ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে আছে পুলিশ। তাদের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে আবাহনী। ১ ম্যাচ খেলে তাতে হেরে পয়েন্টশূন্য থাকায় আরামবাগ আছে তিনে বা তলানিতে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে আরামবাগ মোকাবেলা করবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে। ওই ম্যাচে আরামবাগ পয়েন্ট নষ্ট করলেই আবাহনীর সঙ্গে শেষ আটে চলে যাবে এই মৌসুমের নতুন দল পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবটি বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাথলেটিক ক্লাব নামেও পরিচিত। ক্লাবটি ঢাকায় অবস্থিত ও বাংলাদেশ পুলিশের অর্থায়নে পরিচালিত। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে সার্ভিসেস দলটি খেলেছিল। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লীগে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় পুলিশ এফসি। শনিবারের ম্যাচে পুলিশের জয়ের নায়ক ছিলেন রিভেরা সিডনি এ্যাডাম। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাকার সতীর্থ ফুটবলার ছিলেন পুয়ের্তো রিকোর এই ফুটবলার। চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লীগের দল অরল্যান্ডো সিটিতে ব্রাজিলের কাকার সঙ্গে খেলেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে আরামবাগের কোচ শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মাত্র চারদিনের অনুশীলনে দলের কম্বিনেশন ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি। তারপরও হারলেও আমার খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলেছে তাতে আমি খুশি। তিনটি গোলই আমরা বাজেভাবে হজম করেছি। পুলিশ একমাস অনুশীলন করে খেলেছে, তারা তো জিততেই পারে। এই ফেডারেশন কাপ আমাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আসর। আমাদের মূল লক্ষ্য লীগে সংগ্রাম করে টিকে থাকা। কেননা আপনারা জানেন ক্যাসিনো কা-ে আরামবাগ ক্লাব বিপর্যস্ত অবস্থায়। কোন রকমে এলাকার মানুষদের সহায়তায় দল গঠন করা হয়েছে।’ ৯ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় পুলিশ। আরামবাগের বক্সের ভেতরে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড এমএস বাবলু। গোলরক্ষক রাকিবুল ইসলাম শাওনকে ফাঁকায় পেয়ে যান। ডান পায়ের তীব্র শট নেন বাবলু। কিন্তু সেই শট রাকিবুলের পায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোলবঞ্চিত হয় পুলিশ। ১০ মিনিটে আরামবাগ আক্রমণ করে বাঁ প্রান্ত দিয়ে। ডিফেন্ডার জাহিদুল ইসলাম বাবুর বাড়ানো পাস ধরে বক্সের ভেতরে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন হাসানুজ্জামান কায়েস। ক্রস। বল ধরে আবদুল বাতেন কোমল মজুমদার বাঁ পায়ের শট নেন। পুলিশ গোলরক্ষক আরিফুজ্জামান হিমেল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ধরে ফেলেন বল। ৩২ মিনিটে গোলের দেখা পায় পুলিশ। টানা দুটি কর্নার পায় তারা। দ্বিতীয় কর্নার থেকে গোল করে এগিয়ে যায় তারা। মিডফিল্ডার নাইমুর রহমান শাহেদের উড়ন্ত কর্নারের বলটি জটলার ভেতরে কেউই স্পর্শ করতে পারেননি। লাফানো সেই বলটি সাইডপোস্টের পাশ কেটে বের হয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কোণায় দাঁড়ানো সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ড রিভেরা সিডনি এ্যাডাম পা লাগিয়ে দেন। ফলাফল বল জালে (১-০)। ৪৮ মিনিটে পুলিশের মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড লুকা রটকোভিচ বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে আরামবাগের বক্সে ঢুকে পড়েন। তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আরামবাগের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার এলেটা বেঞ্জামিন জুনিয়র। বাঁ পায়ের জোরালো শট নেন লুকা। সেই বল ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করেন গোলরক্ষক রাকিবুল। ৮২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে পুলিশ। তাদের ডিফেন্ডার ঈসা ফয়সাল বাঁ পায়ের উঁচু শট নেন। আরামবাগের বক্সের ভেতরে সেই বল বুক দিয়ে রিসিভ করেন তার সতীর্থ আরেক ডিফেন্ডার কিরগিজস্তানের আইদার মামবেতালিয়েভ। সেই চলতি বলে ডান পায়ের জোরালো ভলি শটে আরামবাগের জাল কাঁপান আবারও সেই রিভেরা (২-০)। ৮৯ মিনিটে আরামবাগের বদলি ফরোয়ার্ড জাকির হোসেন জিকু বক্সে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো গড়ানো শট নেন। কিন্তু সেই পুলিশের ডিফেন্ডার আইদারের পায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায় (১-২)। ব্যবধান কমায় আরামবাগ। ৯০ মিনিটে পুলিশের ফরোয়ার্ড লুকা বক্সে ঢুকে যে শটট নেন তা সাইডপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ইনজুরি টাইমে পুলিশের আক্রমণ। তাদের ডিফেন্ডার আইদার লম্বা উড়ন্তু পাস বাড়ান। রিভেরা সেই বল ধরে ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে গড়ানো ক্রস করেন ডানপ্রান্ত থেকে। আরামবাগের ক্যামেরুনের ডিফেন্ডার ইয়ন্তা মাইকেল সেটা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। বল পেয়ে যান পুলিশের বদলি ফরোয়ার্ড মোঃ স্বাধীন। দেরি না করে ডান পায়ের উঁচু ভলি শটে লক্ষ্যভেদ করেন (৩-১)।
×