ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকদের প্রথম হার, জয়ের স্বাদ পেল মোসাদ্দেকরা

খুলনা টাইগার্সের জয়রথ থামাল সিলেট থান্ডার

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

খুলনা টাইগার্সের জয়রথ থামাল সিলেট থান্ডার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ পচা শামুকে পা কাটা হয়তো একেই বলে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল খুলনা টাইগার্স। একমাত্র অপরাজেয় দল হিসেবে হ্যাটট্রিক জয় তুলে নিয়েছিল তারা। আর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) শুরু থেকেই খেই হারিয়ে ফেলে বিপর্যস্ত সিলেট থান্ডার টানা ৪টি পরাজয় দেখেছে। সেই সিলেটের কাছেই শনিবার ৮০ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে খুলনা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২৩২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় সিলেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই মারকুটে ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচার ও জনসন চার্লসের ব্যাটিং তা-বে এই সংগ্রহ পায় তারা। ফ্লেচার চলতি আসরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৫৭ বলে ১১ চার, ৫ ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন। আর চার্লস মাত্র ৩৮ বলে ১১ চার ও ৫ ছক্কায় করেন ৯০ রান। জবাবে দুর্বার খুলনা দুই দক্ষিণ আফ্রিকান রাইলি রুশো ও রবি ফ্রাইলিঙ্ক ব্যতীত বাকিদের ব্যর্থতায় ১৮.৩৬ ওভারে ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায়। এটি পঞ্চম ম্যাচে সিলেটের প্রথম জয় আর খুলনার চতুর্থ ম্যাচে প্রথম হার। টস জিতে আগে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় খুলনা। প্রথম ওভারেই ওপেনার আব্দুল মজিদকে (২) ফ্রাইলিঙ্ক বোল্ড করে দিলে দারুণ শুরু পায় খুলনা। তবে এরপর খুলনার বোলারদের কাঁদিয়ে ছেড়েছেন ফ্লেচার ও চার্লস। তাদের বিধ্বংসী রূপে আবির্ভাব অন্যরকম এক সিলেটকে উপস্থাপন করে চট্টগ্রামের দর্শকদের সামনে। ৭০ বল দু’জন মিলে মোকাবেলা করেছেন, জুটিতে তুলেছেন ১৫০ রান। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৭২ এবং মাত্র ৮.১ ওভারে ১০০ রান তুলে ফেলে সিলেট। ফ্লেচারের চেয়েও বেশি আগ্রাসন চালিয়েছেন চার্লস। তিনি ২৫ বলে ফিফটি পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেছেন ৩৮ বলে ৯০ রান করে। তখনও ইনিংসের ৪৪ বল বাকি ছিল। নিশ্চিত একটি সেঞ্চুরি মিস করেছেন তিনি। তারচেয়ে কিছুটা সতর্ক থেকে ঠিকই চলতি বঙ্গবন্ধু বিপিএলে প্রথম শতকটা হাঁকিয়েছেন ফ্লেচার। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি। তবে চার্লসের বিদায় ঘটার পর অপরপ্রান্তে মোহাম্মদ মিঠুন (৩), অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১১) ও নাজমুল হোসেন মিলন (১১) দ্রুতই সাজঘরে ফিরেছেন। এরপরও ফ্লেচারের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সিলেটের বিশাল সংগ্রহ গড়া আটকাতে পারেনি খুলনার বোলাররা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৩২ রান তুলেছে তারা। এটি এ আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ও বিপিএলে সার্বিকভাবে চতুর্থ সেরা সংগ্রহ। শুক্রবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বিপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং এবারের সর্বাধিক সংগ্রহ পায়। ৪ উইকেটে ২৩৮ রান তোলে তারা কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে। ফ্লেচার ৩৮ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বিপিএলে এটি ১৯তম সেঞ্চুরির ঘটনা। ফ্লেচারের প্রথম। ফ্রাইলিঙ্ক ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। চলতি আসরে এটি পঞ্চম দুই শতাধিক রানের দলীয় ইনিংস। এক আসরে সর্বাধিক ৭টি দুই শতাধিক রানের দলীয় সংগ্রহ দেখা গিয়েছিল ২০১৭ বিপিএলে। ২০১৩ সালে হয় ৫টি। এবার মাত্র ১৫টি ম্যাচ হতেই ৫টি দুই শতাধিক রানের দলীয় সংগ্রহ দেখা গেল। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচের ৫টিতেই হয়েছে দুই শতাধিক রানের ইনিংস। তবে প্রথম যে দলটি এমন সংগ্রহ পেয়েছে প্রতিপক্ষরা জবাব দিতে নেমে প্রায় সমান তালেই ব্যাট চালিয়েছে। শনিবার অপ্রতিরোধ্য খুলনাও সেই লক্ষ্যেই ব্যাট করতে নামে। তবে ব্যাটসম্যানদের দারুণ সাফল্যে সিলেটের বোলাররাও জ্বলে উঠেছেন এদিন। যদিও মনির হোসেনের প্রথম বলটি ছিল ওয়াইড। কিন্তু পরের সঠিক ডেলিভারিতেই তিনি খুলনার আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে (০) সাজঘরে ফিরিয়ে দেন। তবে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় ভালভাবেই সফল হয়েছিলেন সাইফ হাসান ও রুশো। তারা দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েন ৫১ বলে। যদিও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে প্রত্যাশিত রান আসেনি- ৫৭ রান করতে পেরেছে খুলনা। পরে সাইফও ২০ বলে ২ চারে ২০ করার পর রান আউট হয়ে গেছেন। এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম (৮ বলে ১২) ও শামসুর রহমান শুভ (৭) সাজঘরে ফিরেছেন দ্রুত। আর এতেই বিশাল লক্ষ্য ছুঁতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে খুলনা। একাই দাপট দেখানো রুশোও অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩২ বলে ৪ চার, ৪ ছক্কায় ৫২ রান করে নবীন উল হকের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। বাকিটা সময় ফ্রাইলিঙ্ক একাই যে লড়াই চালিয়েছেন তাতে ব্যবধানটাই শুধু কমেছে। শেষ পর্যন্ত ৯ বল বাকি থাকতেই মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা। আঘাতপ্রাপ্ত শফিউল ইসলাম ব্যাট করতে পারেননি। ফ্রাইলিঙ্ক ২০ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৪৪ রান করেন। ৮০ রানে হেরে দর্প চূর্ণ হয় দুর্বার মুশফিকদের। ক্যারিবীয় পেসার ক্রিশমার সান্তোকি ৩৭ রানে ৩টি এবং মনির ও এবাদত হোসেন ২টি করে উইকেট নিলে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয় সিলেট। স্কোর ॥ সিলেট থান্ডার ইনিংস- ২৩২/৫; ২০ ওভার (ফ্লেচার ১০৩*, চার্লস ৯০; ফ্রাইলিঙ্ক ২/৩৭)। খুলনা টাইগার্স ইনিংস- ১৫২/১০; ১৮.৩ ওভার (রুশো ৫২, ফ্রাইলিঙ্ক ৪৪, সাইফ ২০; সান্তোকি ৩/৩৭, এবাদত ২/১৭, মনির ২/৩১)। ফল ॥ সিলেট থান্ডার ৮০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আন্দ্রে ফ্লেচার (সিলেট থান্ডার)।
×