স্টাফ রিপোর্টার ॥ বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকরা। উত্তরা দক্ষিণখানের আটিপাড়া এলাকার ‘টপ জিন্স’ নামের একটি পোশাক কারখানার প্রায় চার শ’ শ্রমিক সকালে রাস্তায় নেমে এলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় চরম ভোগান্তির শিকার হন পথচারীরা। এক দিকে সড়ক অবরোধ অন্যদিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে সীমাহীন দুর্দশায় পড়েন নারী ও শিশুরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ টানা তিন ঘণ্টা শ্রমিকদের এমন অরাজকতায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিকদের চরম সমালোচনা করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পথচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠলে পুলিশ এসে উভয়পক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। পুলিশ মালিক শ্রমিকদের সমঝোতায় আসার আহ্বান জানালে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়ে দেয়। তবে সমাধানের নামে কালক্ষেপণ করলে আবারও রাস্তায় নামার হুমকি দেয় শ্রমিকরা।
সড়ক অবরোধের সময় ওই এলাকায় আটকে পড়া ইব্রাহিম খলিল রেজা জানান, তিনি জরুরী কাজে দিয়াবাড়ি বিআরটিএ অফিস থেকে দুপুর ১২টায় রওনা হয়ে দু’ঘণ্টায়ও আব্দুল্লাহপুর পৌঁছতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি তিন কিলোমিটার হেঁটে বিমানবন্দর এলাকায় পৌঁছেন। এখানে এসেও তিনি যানজটে আটকা পড়েন। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৩টায় অবরোধ প্রত্যাহার করার পর বাস ধীর গতিতে চলা শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার সময় তিনি গুলশান পৌঁছান।
জাকিয়া নামের এক গর্ভবতী উবারে যাচ্ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। টঙ্গী ব্রিজ পার হওয়ার পর ড্রাইভার তাকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে বাগ্বিত-া শুরু হয়। সামনে গেলে শ্রমিকদের হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তিনি শেষ পর্যন্ত জাকিয়াকে নামিয়ে সেখানেই এক পার্শে নিরাপদে অপেক্ষা করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে টপ জিন্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর সড়কের দুই পাশেই অবস্থান নেন তারা। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, বেতন নিয়ে সৃষ্ট এ সমস্যা নিরসনে বিজিএমইএ প্রতিনিধি, মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও পুলিশ মিলে আলোচনায় বসি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছে। মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা যদি কারখানা বন্ধ করতে চায় তাহলে আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সমস্যা সমাধানে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। পুলিশের চাপে শ্রমিকরা আলোচনায় বসে সাময়িক সমাধান হিসেবে শনিবার এ অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও যে কোন সময় ফের সড়কে নামার হুমকি দিয়েছেন কজন শ্রমিক। এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক সাংবাদিকদের সড়ক অবরোধের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, পাওনা দিতে সামান্য দেরি হলেই শ্রমিকরা হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে আসে। এ জন্য আগাম কোন কর্মসূচীও তারা ঘোষণা করে না। ওদের আচরণ দেখে মনে হয় আমরা সবাই তাদের কাছে জিম্মি। তুচ্ছ অজুহাতে কথায় কথায় তারা অবরোধ ডেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ডেকে আনে। পুলিশও এসব বিষয়ে স্থায়ী ও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: