ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শীতের সন্ধ্যায় পিয়ানো-চেলোর সুরে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

শীতের সন্ধ্যায় পিয়ানো-চেলোর সুরে মুগ্ধ শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেমে আসে শীত, জমে ওঠে উৎসব কিংবা অনুষ্ঠান। সেই সুবাদে শহরজুড়েই এখন চলছে নানা উৎসব-আয়োজন। শুক্রবার ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবটি শেষ হতেই শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে আরেকটি চমৎকার সুরসন্ধ্যা। শহুরে সুররসিকদের অনেকেই সমাগত হয়েছিলেন যন্ত্রসঙ্গীতের সে আসরে। পিয়ানো আর চেলোর সমন্বিত সুরের মুগ্ধতায় কেটেছে তাদের সুসময়। চেলো বাজিয়েছেন দেশের শিল্পী ফিলিপ হাজরা আর পিয়ানোয় সুর ছড়িয়েছেন রাশিয়ান পিয়ানোবাদক জুলিয়া ঈভদোকিমোভা। ‘চেলো-পিয়ানো-ওডিও ৩’ শীর্ষক সঙ্গীতায়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের লা গ্যালারিতে। সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজক ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা। পিয়ানো ও চেলোর হৃদয়রাঙা সুরের টানে প্রায় ঘণ্টাব্যাপ্তির পরিবেশনায় মিলনায়তন ছিল পরিপূর্ণ। আলিয়ঁসের ছিমছাম পরিবেশে ঘণ্টাব্যাপী আয়োজনে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করেন খ্যাতনামা চেলিস্ট ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার রেসিডেন্ট সঙ্গীতশিল্পী ফিলিপ হাজরা এবং রাশিয়ান পিয়ানোবাদক জুলিয়া ঈভদোকিমোভা। দুই শিল্পীর যৌথ পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল একক পরিবেশনা। উপস্থাপিত হয় কালজয়ী বিভিন্ন পরিবেশনা। সেগুলোর মধ্যে ছিল পশ্চিমা সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকারদের অমর সৃষ্টিসমূহ, যেমন লুডউইগ ভ্যান বিথোভেনের মিনুয়েট, ক্যামিল সেন্ট-সায়েন্সের দ্যা সোয়ান, স্কুমানের ট্রুমেরেই। বাংলাদেশে ভায়োলিন, ভিয়োলা, চেলোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রচারে ফিলিপ হাজরার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০০৭ থেকে তিনি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় ভায়োলিন ও চেলো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে জুলিয়া ঈভদোকিমোভা ২০ বছর ধরে পিয়ানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার পিয়ানোর বাদন শ্রোতার কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। হ্যামলেট নাটকের ১৩তম মঞ্চায়ন ॥ বিশ্বখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী সৃষ্টি হ্যামলেট। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটকটির ১৩তম মঞ্চায়ন হয়।। শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত হ্যামলেট নাটকের অনুবাদ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান । প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক আতাউর রহমান বলেন, এই নাটকে ব্যক্তি মানুষের অন্তর্গত ও নিত্যকার সংঘাতময় জীবনের আশা-হতাশার দোদুল্যমানতা অনুকরণীয় পারঙ্গময়তায় চিত্রিত হয়েছে। শেক্সপিয়ারের অনন্য লেখনীতে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের ইতি ও নেতির দ্বন্দ্বও বিবৃত হয়েছে নাটকে। নাট্যকাহিনীর সূচনা হয়, ডেনকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যুঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের পিতা। রাজার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ক্লডিয়াস সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং প্রয়াত অগ্রজের স্ত্রী গারট্রুডের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। জনককে হারানোর ব্যথা, জননীর সঙ্গে পিতৃব্যের পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া ইত্যাদি যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়। কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনাপ্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহলগ্নে তার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে জানিয়ে দেয় যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্পদংশনে নিহত হয়েছেন; আসল সত্য হলো, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনাপ্রবাহে আরও কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রানি গারট্রুডের ঘরে মাতাপুত্রের কথোপকথন শোনার জন্য আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভ্রমবশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙ্গে পড়ে এবং আত্মহত্যা করে জীবনের যন্ত্রণা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ার্তেস হ্যামলেটের উর্ধবাহু রক্তাক্ত করলেও লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে হ্যামলেট। এদিকে রানি গারট্রুুডও বিষাক্ত পানীয় পান করে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে, যা পান করার কথা ছিল হ্যামলেটের। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র। যখন রাজার সব ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে যায় মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পানে বাধ্য করে এবং সে নিজেও প্রাণত্যাগ করে। এভাবে চার চারটি জীবনাবসানের মাধ্যমে বিয়োগান্তক পরিণতিতে শেষ হয় বেদনাবিধুর কাহিনী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাস্উদ সুমন, শামীম সাগর, সঙ্গীতা চৌধুরী, আমিনুর রহমান মুকুল মোঃ সোহেল রানা, মেহেজাবীন মুমু, শরীফ সিরাজ, তৃপ্তি রানী মণ্ডল, মেরিনা মিতু প্রমুখ।
×