ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীতবস্ত্রের বাজার চড়া, দুদিনে দ্বিগুণের বেশি বিক্রি

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

শীতবস্ত্রের বাজার চড়া, দুদিনে দ্বিগুণের বেশি বিক্রি

ওয়াজেদ হীরা ॥ কুয়াশা ও শীতের তীব্রতার কারণে গত কদিন ধরেই সূর্যের দেখা নেই। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে গরম কাপড় কেনার হিড়িক। হাড় কাঁপানো ঠা-ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। কনকনে শীতে কাঁপছে তরুণ-তরুণীরাও। শীত থেকে রক্ষায় সবাই ছুটছেন গরম কাপড় কিনতে। দোকানিরাও হরেক রকমের শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। নিম্নœবিত্ত, নিম্নœমধ্যবিত্তদের ভরসা তাই ফুটপাথের শীতের গরম কাপড়। গত দু’দিন ধরে ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ফুটপাথের বিক্রেতারা। চাহিদামতো মানুষ বিভিন্ন ধরনের গরম পোশাক যেমন সোয়েটার, কম্বল, জ্যাকেট, হাত মোজা, পা মোজা, মাফলার, কানটুপি কিনছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই বলছেন, ‘শীত বাড়ার সঙ্গে গরম কাপড়ের দামও বেড়েছে।’ শুক্র ও শনিবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শীত বস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরও জানিয়েছে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ রবিবারের আগে কাটবে না। অলিতে গলিতে বিক্রেতারা হাকডাক দিচ্ছেন ‘বাইছা লন ১০০, দেইখা লন ২০০’ ইত্যাদি। রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, মতিঝিল, নিউমার্কেট, মৌচাক, রামপুরা, ফার্মগেট এলাকাঘুরে দেখা গেছে শপিংমল থেকে ফুটপাথ সবখানে শীত বস্ত্রের দোকানে ভিড়। ক্রেতারা শীতের কাপড়ের দাম বেশি অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বলছেন মৌসুমী এই ব্যবসায় চাহিদার ওপর নির্ভর করে দাম। ক’দিন আগে দাম খুবই কম ছিল। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেও দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। নিউমার্কেট থেকে বাচ্চার জন্য শীতের পোশাক কেনেন ইয়াছিন আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শীতে বাচ্চাদের অল্পতেই ঠা-া লেগে যায়। তবে দিন দিন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। গত শীতের চেয়ে এই শীতে দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে। একই মার্কেটের বিক্রেতা সুলতান বলেন, গত ক’দিন আগেও শীতের কাপড়ের চাহিদা ছিল না। দু-চারদিন ধরে বিক্রি অনেক বেশি আর দামও কিছ্টুা বেশি। গায়ের পোশাকের পাশাপাশি কম্বলের চাহিদাও বেড়েছে। বেচা-বিক্রিও ভাল বলেই জানান তিনি। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে কম্বল বিক্রেতা হামিদুল বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২৫-৪০টি করে কম্বল বিক্রি হচ্ছে একেকটি দোকানে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০-২০টি করে। এসব কম্বলের দামও বেশ কম। ৬০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কম্বল রয়েছে বলেও জানান। গুলিস্তানের হকার্স মার্কেটের দোকানদার আজমত মিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। শুক্রবার শনিবার ক্রেতা সামলানো মুশকিল ছিল। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ছেলে-মেয়েদের জন্য দেশি গার্মেন্টসের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট, ভারি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। হাত-পা মোজা, কানটুপি, মাফলার মিলছে ৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। বঙ্গবাজারে বিভিন্ন ফ্যাশনভিত্তিক শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে। এসবের মধ্যে রয়েছে লেদার জ্যাকেট, ফোম জ্যাকেট, সোয়েটার ইত্যাদি। বসুন্ধরা সিটি, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি, চন্দ্রীমা মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে এখন শুধু শীতের কাপড় কেন্দ্রিক ভিড়। এর বাইরে ফুটপাথেও ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। ফুটপাথের দোকানে কম মূল্যে শীতের পোশাক পাওয়ায় শ্রমজীবী মানুষের ভিড় সেখানে বেশি। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ফুটপাথে। ক্রেতাদের অভিযোগ শীতের কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের চাহিদাও বেড়ে গেছে। কাপড়ের ঘাটতি হওয়ায় বেশি দামে কিনে বেচতেও হচ্ছে একটু বেশি দামে। গুলিস্তান মাজার এলাকায় ফুটপাথে বাচ্চাদের সোয়েটার-জ্যাকেট বিক্রি করছেন সাব্বির। তার দোকানে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। তিনি বলেন, গত দু’তিনদিন থেকে বেচাকেনা বেড়ে গেছে। আগে কাপড় নিয়ে সারাদিন বসে থাকলেও গত কয়েকদিনে মালামালও পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়মিত যে দোকান থেকে পাইকারি পণ্য কেনেন সেখানে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শীতের কারণে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। দামও একটু বেড়ে গেছে। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সোয়েটার ২০০-৪০০ টাকা, মাফলার ১০০-১৫০ টাকা, টুপি ১০০ টাকা, হাত ও পা মোজা ৩০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের জড়তার মধ্যে ফুটপাথের দোকানদারেরা হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। আর তাদের ডাকে ক্রেতাদের সাড়া পড়ছে বেশ ভাল। গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের পাশে টুপি, মোজা, মাফলার বিক্রেতা আল-আমিনের দোকানেও জমে উঠেছে বেচাকেনা। তিনি জানান, দু’দিন থেকে শীত বেড়েছে। বেচাকেনাও বেড়েছে। অনেক নারীকে দেখা গেছে নিজের এবং সন্তানদের জন্য পছন্দের সোয়েটার কিনতে। হকারদের হাঁক-ডাক আর ক্রেতাদের ভিড়ে এসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টিও হচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও বঙ্গবাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি ভিড় ছিল নিউমার্কেট এলাকায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ভিড় করে নিউমার্কেট এলাকায়। মার্কেটের ভেতরের চেয়ে ফুটপাথেই ভিড় বেশি। অলি-গলিতে ভ্যানে করে শীত বস্ত্র বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। এদিকে বিভিন্ন জেলাশহর থেকেও ক্রেতাদের সমাগম বেড়েছে রাজধানীতে। টাঙ্গাইল থেকে আসা আব্দুল জলিল বলেন, জেলা শহরে তার শীতের কাপড়ের দোকান রয়েছে। চাহিদা বেড়েছে তাই আরও কিছু কেনার জন্য ঢাকায় এসেছেন। সদরঘাট এলাকায় ইস্টবেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেট ও গ্রেট ওয়াল শপিং সেন্টারে, সদরঘাট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। মার্কেটের দোকানগুলোতে ঘুরে ঘুরে পছন্দের শীতবস্ত্র জোগাড় করছেন তারা। এসব মার্কেটে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষকেও দেখা গেছে। নগরীর ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন তারা। টাকার অভাবে অনেকেই এখনও শীতবস্ত্র কিনতে পারেননি। তবে বিভিন্ন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান থেকে মাঝেমধ্যে দুই-একটি শীতবস্ত্র পেলেও তাতে শীত নিবারণ হচ্ছে না। শীতের পোশাকের পাশাপাশি ভিড় বেড়েছে শীতের বিভিন্ন জুতা কিনতে। রাজধানীর বাটা সিগন্যালে চৌরঙ্গী ভবনে জুতা কিনতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে কেডস বিক্রি বেড়েছে। তবে জুতার দাম বাড়তি অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন ১০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। আগেরদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে ঢাকায় আগেরদিনের তুলনায় শীত বেড়েছে। শুক্রবার যেখানে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, শনিবার সকালে তা নেমে এসেছে ১২.২ ডিগ্রী সেলিসিয়াসে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। সেই হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ এখন আর নেই। তবে উত্তর-পশ্চিম শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ (জেড বায়ু) বেশি সক্রিয় থাকায় এবং কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। শীতের তীব্রতার কারণে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে এমন আশা বিক্রেতাদের।
×