ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই

বিকাশ দত্ত ॥ বহুল আলোচিত ও বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ এ মাসেই শেষ হচ্ছে। পেপারবুক তৈরির পরপরই আগামী বছরের শুরুতেই হাইকোর্টে আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’১৮ সালের ২৭ নবেম্বর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের মামলার রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাইকোর্টে ডেথরেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথিতে রয়েছে হত্যা মামলার ৩৬৯ পৃষ্ঠার ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ৩৫৬ পৃষ্ঠার রায়। আইন মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, পেপারবুক তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করা হচ্ছে এ মাসের শেষের দিকে পেপারবুক তৈরি হয়ে যাবে। ’১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দুটির রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ১৩ জানুয়ারি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এর আগে ২৭ নবেম্বর, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের দুই মামলার রায়সহ নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় নিহত হন ২৪ আহত হন নেতাকর্মী আইনজীবী সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অনেক নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পেপারবুক ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। পেপারবুক তৈরির পর ’২০ সালের প্রথম দিকেই এ মামলার আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে বলে আশা করছি। এর আগে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ মামলায় নি¤œ আদালতে যাদের যাবজ্জীবন কারাদ- ও লঘুদ-ের বিরুদ্ধে আপীল করতে বলা হয়নি। যার কারণে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় আপীল করেনি। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপীল করেছে। পেপারবুক তৈরি হলেই দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করব। গ্রেনেড হামলা মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যারা এ মামলায় পলাতক আছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আসামিদের আপীল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। যতদূর জানি এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় শুনানির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ মামলায় যাদের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে তাদের শাস্তি বাড়ানো হবে কি না তা আপীল শুনানিতেই বলব। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথমসারির নেতাদের হত্যা করাই ছিল এ হামলার প্রধান টার্গেট। ’১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দুটির রায় ঘোষণা করেন। ১০ অক্টোরব একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, আসামি রয়েছে ৪৯। মোট ৫২ আসামির মধ্যে ৩ জন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারেকসহ এখনও পলাতক ১৬ আসামি। এর আগে পৃথক মামলায় তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরের দণ্ড হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অর্থপাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি জরিমানা বহাল রাখে হাইকোর্ট। এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্র প্র্রতিমন্ত্রী লুৎজ্জামান বাবরকে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
×