ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য সমস্যা তীব্র করছে

বিশ্বে ‘ডিমেনশিয়া’ রোগীর সংখ্যা ’২৫ সালে হবে ৫ কোটি

প্রকাশিত: ১১:১১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

বিশ্বে ‘ডিমেনশিয়া’ রোগীর সংখ্যা ’২৫ সালে হবে ৫ কোটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মরণশক্তি কমে যাওয়া রোগ ‘ডিমেনশিয়া’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা তীব্রতর করছে। ২০২৫ সালে বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় পাঁচ কোটি। ২০৩০ সালে এ সংখ্যা হবে সাত কোটির বেশি। এখন বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ ডিমেনশিয়া রোগী রয়েছেন। ২০৩০ সালে আমাদের দেশে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সঠিক সেবা ও আদর ভালবাসাই ডিমেনশিয়া রোগীকে শারীরিক ও মানসিক শান্তি দিতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। শনিবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের অডিটরিয়ামে ডিমেনশিয়া কেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ডিমেনশিয়া বিষয়ে জাতীয় সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ফ্রাঙ্ক শেফার। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের প্রতি যতœ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গড় আয়ু এখন ৭০ বছরের ওপরে। ভবিষ্যতে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হন। তবে কম বয়সেও এটা হতে পারে। ডিমেনশিয়া কোন রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু মনে রাখতে পারেন না, আপনজনকেও চিনতে পারেন না, সহজে রেগে যান, অনেকের সন্দেহ বাতিক দেখা দেয়। কারও ডিমেনশিয়া হলে তার প্রতি পরিবারের সবার যতœশীল হতে হবে। অবহেলা করা বা দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। নিবিড় সাহচর্য ছাড়া ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। এসব বিষয়ে দেশের মানুষের সচেতনতা বাড়ানো জরুরী হয়ে পড়েছে। অধ্যাপক ডাঃ কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ডিমেনশিয়া বলতে বোঝায় স্মরণশক্তি কমে যাওয়া। মানুষের মস্তিষ্কে এক ইঞ্চি পুরু খাতার মতো স্থান আছে। মানুষ প্রতিদিন যা দেখে, যা চিন্তাভাবনা করে, এ খাতায় তা লিপিবদ্ধ করা থাকে। ফলে আমরা যা দেখি, তা মনে রাখতে পারি। ডিমেনশিয়া রোগীরা কেন ভুলে যান? তার ‘এক ইঞ্চি খাতা’ অনেক সময় শুকিয়ে এক সেন্টিমিটার হয়ে যায়। এ জন্য তিনি যা দেখেন, তা আর খাতায় লিখে রাখতে পারেন না। তাই একটু পরেই ভুলে যান। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে এখন চারটি ঘাতক ব্যাধি আছে-ক্যান্সার, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়া। শুরুতে ধরা পড়লে ক্যান্সার, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া ও স্ট্রোক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ডিমেনশিয়া নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। অধ্যাপক ডাঃ কাজী দীন মোহাম্মদ আরও বলেন, আমাদের থেকে উন্নত বিশ্ব অনেক বেশি চিন্তিত। তাদের দেশে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ডিমেনশিয়া রোগীদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে তাদের চলতে হয়। তাই ছোটদের মতো আদর-ভালবাসা দিয়ে তাদের দেখে রাখতে হয়। এখন পরিবারে সমাজে এ ধরনের রোগীদের কীভাবে দেখে রাখা হবে, সেটা একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। এ রোগের কোন কার্যকর ওষুধ এখনও নেই। কিছু মূল্যবান ওষুধ আছে। এর মাধ্যমে এ রোগ সারার কোন নিশ্চয়তা নেই। একজন শিশুর মতো তাকে দেখভাল করে রাখাই হচ্ছে তার চিকিৎসা। এটি যে যতভাবে করতে পারবে সে রোগী তত ভাল থাকবে।
×