ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইন অমান্য আন্দোলন শুরু

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

আইন অমান্য আন্দোলন শুরু

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ’র) প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানী দিল্লীসহ অন্যান্য স্থানে সমাবেশের ওপর নিষেদ্ধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার প্রতিবাদকারীরা রাজপথে নামে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠক করেন। দিল্লীর জামিয়া মিল্লিয়া থেকেও নতুন করে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। খবর এপি ও এনডিটিভির। মোদি সরকারের হিন্দুত্ববাদী নীতির আলোকে গৃহীত বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রশমনে দেশটির পুলিশ রাজধানী দিল্লীসহ অন্য জায়গায় বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ক্যাব পাশের পর ভারতজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২০ জন নিহত হয়েছে। শনিবার মোদি নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশেই নিহত হয়েছে ১১ জন। জামিয়া মিল্লিয়ার ছাত্রী লাদিলা শাখালুন এবং আয়েশা রিনা শনিবার হায়দরাবাদে প্রতিবাদী এমপি আসাদুন্দিন ওয়াসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই দুই শিক্ষার্থী জামিয়ার সাম্প্রতিক আন্দোলনের পুরোভাগে চলে এসেছেন। কয়েক হাজার লোক আহত হয়েছে। নারীসহ চার হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবারও রাজধানী দিল্লীসহ অন্যত্র সিএএ’র বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়। দিল্লীর ঐতিহাসিক জামা মসজিদের সামনের জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। ক্যাব পাসের পর থেকেই ভারতের বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, নির্দিষ্ট একটি ধর্মের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা ও তাদের কোণঠাসা করতে মোদি সরকার এই আইন করেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মানুষ দিল্লী জামা মসজিদের সামনে জড়ো হয়ে সিএএ’র বিরোধী সেøাগান দেয়। এ সময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা শোভা পাচ্ছিল। আন্দোলন রুখতে পুলিশ কেন্দ্রীয় দিল্লীর চার কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার জমায়েত নিষিদ্ধ করে। দিল্লীর পর সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয় ভারতের উত্তর প্রদেশে। সেখানে শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা পুলিশ চেক পোস্ট ও গাড়িতে আগুন দেয়। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র অবিনাশ আওয়াস্তি বলেন, শুক্রবার পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন মারা গেছে। শতাধিক লোককে আটক করা হয়েছে। সিএএ’তে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতের তিন নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। ভারতের বিরোধী দলগুলো সিএএ’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র এই বিলকে পক্ষপাতমূলক আখ্যা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মুসলিমকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে মোদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভারতের নানা শহরে ছড়িয়ে পড়া সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। ভারতের উত্তর-পূবাঞ্চলীয় রাজ্য অসমের মানুষের রাস্তায় নামার কারণ-রাজ্যটির সঙ্গে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সীমান্ত রয়েছে। অসমের মানুষ মনে করছে, সিএএ’র ফলে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ হিন্দু বাঙালী অসমে প্রবেশে উৎসাহ পাবে। ফলে রাজ্যটিতে বাংলাভাষী আরও বাড়বে। এতে অসমের ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ঝুঁকিতে পড়বে। অসমের মুসলিমরাও আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা মনে করছে, এনআরসির মাধ্যমে মুসলিমদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করে পাশের দেশ থেকে হিন্দুদের এনে ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে মোদি সরকার। অসমের বিক্ষোভ রুখতে রাজ্যের কয়েক জেলায় এখনও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে ইতোমধ্যে ২০ লাখ লোক বাদ পড়েছে। এদের বেশিরভাগই মুসলিম। অসমের পর ত্রিপুরাতে একই কারণে বিক্ষোভ হচ্ছে। চলমান বিক্ষোভে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কারণও আলাদা। তারা মনে করছে, সিএএ প্রধানমন্ত্রী মোদির মুসলিমবিরোধী মনোভাব বাস্তবায়নের একটি নীলনক্সা। কারণ মোদি দীর্ঘদিন থেকেই ভারত থেকে মুসলিমদের অবাঞ্ছিত ঘোষণার স্বপ্ন দেখেন। তাই বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ক্যাব পাসের পর থেকেই মুসলমানদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করছে, এই আইনের ফলে উগ্র হিন্দু জাতীয়বাদীরা তাদের টার্গেট করতে পারে। ১২ ডিসেম্বর ক্যাব পাসের পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা রাস্তায় নেমেছেন।
×