ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ যোগ্য নেতৃত্ব ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিই হোক অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

অভিমত ॥ যোগ্য নেতৃত্ব ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিই হোক অঙ্গীকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের উন্নতির লক্ষ্যে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। ক্ষুদ্র আয়তনের একটি দেশ হয়েও বাংলাদেশ সারা বিশ্বে আজ উন্নয়নশীল দেশের দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বগুণে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সবগুলো লক্ষ্যই অর্জনে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে চলছে দেশ। আজ শিক্ষাখাতে অর্জন, স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য, নারী ও শিশু উন্নয়নে সাফল্য অর্জন, নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্য অর্জন, কৃষিতে কৃতিত্ব, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুতখাতে সাফল্য, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সাফল্য অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে সাফল্য অর্জনসহ নানা ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে জাতির পিতার কন্যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। সেই লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর যে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান তা সারাবিশ্বে আজ প্রশংসিত। বিএনপি সরকারের আমলে যেখানে দলীয় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরে থাক বরং তাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হতো, সেখানে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজ দলের কতিপয় সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি, করনেও না। তাঁর লক্ষ্য একটাই- তাঁর পিতা ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আমি মনে করি, এই উদ্যোগ সফল হলে একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামী দিনে যোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ জরুরী। তাঁর এই সংগ্রামে দেশের আপামর জনগণের মতো আমিও একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১, ২০৪১ ও আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশের উন্নতি ও উন্নয়নের যে ডেল্টা প্লান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আমরা তাঁর সেই স্বপ্নপূরণের পথে কাজ করে যেতে চাই। আমি মনে করি, সে ক্ষেত্রে দেশের সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ দেশ যত এগিয়ে যাবে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তত সুন্দর একটি দেশ উপহার দিয়ে যেতে পারব। আমরা এখন আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ নই। যারা এক সময় আমাদের এ নামে অবহিত করত আজ তাদের কাছে আমরা বিস্ময়কর, উজ্জ্বল এক উদাহরণ। বাংলাদেশ আজ সফল নেতৃত্বের গুণে, কারিশমায় এগিয়ে যাওয়া এক দেশের নাম। আজ আমরা বিশ্বব্যাংকের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নিজেদের অর্থেই নির্মাণ করছি পদ্মা সেতুর মতো বিশাল একটি প্রকল্পের কাজ। এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর পরিকল্পনাও। আমরা এখন বিশ্বব্যাংকের মুখাপেক্ষী নই বরং বিশ্বব্যাংক এখন আমাদের উন্নয়নের মিছিলে নিজেকে সামিল করতে আগ্রহী। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে বৈপ্লবিক সাফল্য তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞার পরিচয়। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার স্থানীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগ ইউনিট ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতেও ছিলাম। আমি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন রাজপথ কাঁপানো তুখোড় ছাত্রনেতা বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না ভাই। পেশাগতভাবে কারণে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ বা রাজনীতি কোনটা থেকেই আমি দূরে ছিলাম না। দলের সকল কার্যক্রমেই আমি নিয়মিতভাবেই অংশ নিয়েছি। ১৯৯১-৯৬ তৎকালীন দুর্নীতিগ্রস্ত, ফ্যাসিস্ট বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। তারপর ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের দুশাসনের সময় দলীয় বহু নেতাকর্মীর পাশে ছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের রাজনীতিতেও দলের পক্ষে, নেত্রীর পক্ষে কাজ করেছি। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটি এবং বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছি। আমি এক সময় হকি খেলোয়াড় ছিলাম। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশেনের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। সবমিলিয়ে রাজনীতি, ক্রীড়াঙ্গন, সামাজিক কর্মকা- ও নিজের ব্যবসা নিয়েই আমার জীবন। রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হলো আদর্শ, বিশ্বাস আর ভালবাসার প্রতি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞার মূল্য। আমার কাছে সেই আদর্শ, বিশ^াস আর ভালবাসার নাম ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মহান নেতার প্রতি আমার ভাললাগার শুরুটা একেবারে ছোটবেলা থেকেই। আমার বাবা মরহুম মোহাম্মদ ইসা সাখায়াতউল্লাহ তার ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭০-এর আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। ১৯৭১ সালে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে পুরান ঢাকার শেখ বোরহানউদ্দীন কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানম-ি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনবার আব্বাকে জেলে যেতে হয়েছিল তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে অটল থাকার জন্য। মূলত আব্বার কাছেই ছোটবেলা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের গুণাবলী ও আদর্শের কথা শুনে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় আব্বার মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে নিজের কল্পনায় তাকে অনেকবার এঁকেছি নানাভাবে। তখন থেকেই এক ধরনের ভালবাসা, ভাললাগা নিয়ে বড় হয়েছি তাঁর আদর্শকে সাথী করে। এর পুরোপুরি বহির্প্রকাশ ঘটে যখন আমি ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হই। সে সময় এরিক ফেডেরিকের লেখা একটি বইয়ে ‘কারিশমাটিক লিডারশিপ’ নামে একটা অধ্যায় ছিল। সেই অধ্যায়ে সারা বিশ্বের যে অল্প কজন মহান নেতাদের বিষয়ে আলোচনা ছিল তার মধ্যে একটি অংশ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। সেই লেখাটি পড়ে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করি এবং একইসঙ্গে আমার রাজনৈতিক আদর্শ কি হবে বা হওয়া উচিত সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। এ ফাঁকে একটা কথা প্রাসঙ্গিক কারণে বলে রাখি, তা হলো ১৯৭৫-এর সেই বর্বরোচিত হত্যাকা-ের সময় আমি ছোট। কিন্তু একটা বিষয় আমার মনে তখন গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল তা হলো আমার আব্বাকে প্রায় সময় একটা বিষয়ে বেশ কষ্ট নিয়ে কথা বলতে শুনতাম। আব্বা বলতেন, বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা আপনজন হারানোর অসহনীয় যন্ত্রণা-কষ্টের কথা। আমি আব্বার মুখে এই কথাগুলো যখন শুনতাম তখন আমার ছোট্ট মনেও প্রশ্ন জাগত এত কষ্ট নিয়ে মানুষ বাঁচে কিভাবে? সেই অসম্ভব কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষটাই যখন শোককে শক্তিতে পরিণত করে ১৯৮১ সালে সব হুমকি, ষড়যন্ত্র মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে তাঁর পিতার মতো জাতির মুক্তির প্রতীক হয়ে উঠছিলেন- তা দেখতে দেখতে আমার শ্রদ্ধা, ভালবাসার একটা বিশাল অংশ তিনি দখল করে নিয়েছেন। আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিই দীক্ষাই হওয়া উচিত আগামীর রাজনীতিবিদদের পথচলার মন্ত্র। আজ তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্দমনীয় গতিতে। আমরা সবাই সেই গতিকে আরও গতিবান করতে কাজ করে যাব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে -এটাই হওয়া উচিত সবার স্বপ্ন। লেখক : ক্রীড়া সংগঠক
×