ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা পেঁয়াজে স্বস্তি

সরবরাহ বাড়ায় শাক-সবজির দাম কমেছে

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

 সরবরাহ বাড়ায় শাক-সবজির দাম কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরবরাহ বাড়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে কমেছে শীতকালীন শাক-সবজির দাম। নতুন উঠা দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে আমদানিকৃত চীনা পেঁয়াজ। সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল ও আটার দাম। চিনির দাম বাড়তির দিকে। এছাড়া বাজারে দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম চড়া। ব্রয়লার মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট এবং মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে কিন্তু দাম চড়া। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১২০ টাকায়। এছাড়া মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে চীনা সাদা পেঁয়াজ। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চীনা পেঁয়াজ ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝাঁজ ও স্বাদ বেশি হওয়ার কারণে দেশী পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে সাধারণ ভোক্তারা এসব পেঁয়াজ কিনতে পারছে না। তাদের ভরসা টিসিবির কম দামের পেঁয়াজ। দেশী পেঁয়াজের চড়া দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের বিক্রেতা আবুল হাসান জনকণ্ঠকে বলের, সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে ঠিক তবে পর্যাপ্ত নয়। বেশি দামের আশায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে আগাম পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। এ কারণে পেঁয়াজের ফলনটা সেভাবে হচ্ছে না। এতে যে পরিমাণ পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা সেইভাবে আসছে না। তিনি বলেন, দেশে এখন আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ ভাল। তড়িঘড়ি করে বেশি দামের আসায় ছোট ছোট পেঁয়াজগুলো না তুলাই ভাল। তিনি বলেন, এখন যে পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তা আর পনের দিন পর উঠানো হলে ফলন দ্বিগুণ বাড়বে। এদিকে, পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের এখনও অসন্তুষ্টি রয়েছে। মৌসুম শুরু হলেও দেশী পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে ১০০ টাকার ওপরে ব্যয় করতে হচ্ছে। এই দাম সাধারণ ভোক্তাদের জন্য অনেক বেশি। এ কারণে বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর কথা বলছেন ক্রেতারা। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশী পুরনো পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি। রোস্ট ও মাংস রান্না করতে বাবুর্চিরা এসব পেঁয়াজ সংগ্রহ করে থাকেন। ঢাকায় প্রতিকেজি দেশী পুরনো পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। বাজার ও মানভেদে কেজিতে শিম ৩০ থেকে ৫০, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫, বেগুন ৪০ থেকে ৬০, মুলা ২০ থেকে ৩০, শালগম ৩০ থেকে ৪০, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ ও শাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মান ও বাজারভেদে কেজিপ্রতি দেশী পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৮০, আমদানি করা পাকা টমেটো ৫০ থেকে ৬০, গাজর ৪০ থেকে ৫০, নতুন আলু ৩০ থেকে ৪০ ও বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজির দাম কমে আসায় খুশি ক্রেতারা। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে বাজার করছিলেন কাটাসুরের বাসিন্দা নাজমুল হক। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন পর কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। সবজির দাম কমায় বাজারে স্বস্তি বিরাজ করছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে চড়া ছিল সবজির বাজার। এতে করে ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হয়েছে। এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভোজ্যতেল নিয়ে। বোতলজাত ও খোলা সব ধরনের সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের দাম এখন বেশি। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশনে। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেয়ার আগেই বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সরকার কার্যকর করবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসলেও বাজারে এখন তেলের দাম বাড়তি। এক্ষেত্রে ভোজ্যতেলের মিল মালিকদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, বাজারে মানভেদে সয়াবিন প্রতি পাঁচ লিটারের বোতল ৪৮০-৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে এসব তেল ৪৪০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতিলিটারে ৪ টাকা বেড়ে ৮৪-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পামওয়েল ৭৪-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে সরু ও চিকন চালের দাম। প্রতিকেজি চায়না ইরি ও স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া সরবরাহ বাড়লেও দেশী বোয়াল, শৈল, কৈ ও চিংড়িসহ সব ধরনের মাছের দাম বেশি।
×