ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশ মাসেও রহস্যের জট খোলেনি পল্টনে উদ্ধার গুলি-গ্রেনেডের

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

  দশ মাসেও রহস্যের জট খোলেনি পল্টনে উদ্ধার গুলি-গ্রেনেডের

শংকর কুমার দে ॥ ‘মেড ইন পাকিস্তান’-অর্থাৎ ‘পাকিস্তানের তৈরি’ গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধারের মামলার তদন্ত রহস্যের জালে আটকা পড়ে আছে। কে বা কারা পাকিস্তানের তৈরি অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনেছে তার রহস্য বিগত দশ মাসেও উদঘাটন করতে পারেননি তদন্তকারীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে ৫৫ গুলি ও তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর রহস্য উদঘাটনে শুরু হয় তদন্ত। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় উদ্ধার হওয়া ‘মেড ইন পাকিস্তানের’ গুলি গ্রেনেডের চালান আনায় জড়িত চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নাশকতা ও সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের চোরাচালান এনেছিল এই চক্র। রাজনৈতিক কারণে চোরাচালানি চক্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের তৈরি এসব অস্ত্র কে বা কারা এনেছিল তা বের করার জন্য তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ ও নজরদারিতে পাকিস্তানে তৈরি গুলি- গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটাতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের দুই-তিন বছর আগে থেকে দেশে সহিংস সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য করে আসছিল সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী। এর মধ্যে জঙ্গী গোষ্ঠী, জামায়াতশিবির ও বিএনপির উগ্রপন্থী বলে পরিচিত একটি চক্র। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত ১৪ নবেম্বর রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালায় বিএনপির উগ্রপন্থী নেতা-কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। তারা কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করাই ছিল এই সন্ত্রাসী চক্রের মোটিভ। পল্টন থানায় দায়ের তিনটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৭২ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পাকিস্তানের তৈরি অস্ত্র, গ্রেনেড কারা কি উদেশে এনেছিল? ডিএমপির পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিজয়নগরের ডাস্টবিন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার ৮ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের গুলি, ২৮ রাউন্ড একে ফোর্টিসেভেন রাইফেলের গুলি ও ১৯ রাউন্ড শটগানের গুলির গায়ে লেখা ‘মেড ইন পাকিস্তান’। একাদশ সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের দুই-তিন বছর আগে থেকেই দেশে সহিংস সন্ত্রাস-নাশকতা চালানোসহ নানা ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টার সময় উদ্ধার হওয়া এসব গুলিগ্রেনেড আনা হতে পারে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ ও নজরদারিতে ওই জঙ্গী গোষ্ঠীর সহিংসতা ও নাশকতা চালানো সম্ভব হয়ে না ওঠায় ওগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের দল এসে গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করে। তবে কার হেফাজতে ‘মেড ইন পাকিস্তান’ এসব গুলি-গ্রেনেড ছিল তা খুঁজে বের করতে তদন্ত হচ্ছে। এক উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহায়তায় বিএনপি ও জামায়াত ২০১৪-১৫ সালের মতো ঢাকায় আবারও নাশকতা সৃষ্টিতে সক্রিয় হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় আবারও জঙ্গী হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জেএমবি। দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় সহায়তা দিচ্ছে পাকিস্তানের আইএসআই। ‘টাইমস অব অসম’ এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে জামায়াতনিয়ন্ত্রিত সরকার প্রতিষ্ঠায় তৎপর পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা। পল্টনে উদ্ধার এসব গুলি-গ্রেনেডের সঙ্গে তার কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা।
×