ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পার্বত্য এলাকায় ফের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে নামছে বাপেক্স

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

 পার্বত্য এলাকায় ফের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে নামছে বাপেক্স

রশিদ মামুন ॥ পার্বত্য এলাকায় দশ বছর চেষ্টা করেও তেল গ্যাস অনুসন্ধানে অংশীদার নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গত দশ বছরের মধ্যে দুই দফা উদ্যোগ নিলেও সফল হতে পারেনি তেল গ্যাস উত্তোলন অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। ফলে দেশের এক দশমাংশ এলাকা তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বাইরেই রয়ে গেছে। যদিও বাপেক্স বলছে নতুন করে আবারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত তারা এই অঞ্চলে কাজ শুরু করতে চায়। দেশের মোট আয়তন এক লাখ ৪৪ হজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে দেশের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত। যার মোট আয়তন ১৩ হাজার ২৮২ বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে চট্টগ্রামের আয়তন পাঁচ হাজার ২৮২ বর্গকিলোমিটার যোগ করলে প্রায় ১৩ ভাগ এলাকা তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বাইরেই রয়ে গেছে। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের সমুদ্রে সাঙ্গু নামের একটি ছোট আকারের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে। কিন্তু এই এলাকার স্থলভাগ রয়ে গেছে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বাইরে। বাপেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, আমাদের কাছে রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ব্রুনাই এবং জাপানের কয়েকটি কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে। এদের সকলে এখানে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও চাই এখানে দ্রুত কাজ করতে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবো। কোন কোম্পানি কি প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের কি প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এই ব্যর্থতার দায় এককভাবে বাপেক্স’র ওপর চাপানো যৌক্তিক নয়। জ¦ালানি বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দেশের পার্বত্য এলাকায় সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে পারেনি বাপেক্স। সূত্রগুলো বলছে, ২০১০-১১ এবং ২০১৪-১৫ সালে দুই দফায় অংশীদার কোম্পানি খোঁজে বাপেক্স। উদ্দেশ্য ছিল এখানে ওইসব কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্স যৌথভাবে কাজ করবে। যেহেতু বাপেক্স’র পার্বত্য এলাকায় কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা নেই তাই অংশীদার খোঁজার অনুমতি দেয় সরকার। প্রথম দফায় কয়েকটি কোম্পানি বাপেক্স’র সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখায়। সেবার সরকারের সায় মিললে এতদিনে ওই এলাকার সম্পদ তুলে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু তখন কোন কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়নি সরকার। ফলে তখন ২০১০-১১ এর প্রক্রিয়া থেমে যায়। যদিও তখন বাপেক্স’র তরফ থেকে বলা হয়, চীনের সিনোপ্যাকের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি তারা চূড়ান্ত করে সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় পাঠায়। ওই সময়ও বলা হয়েছিল যৌথভাবে চট্টগ্রামের পটিয়া, জলাদি এবং সীতাকু-ে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করা হবে। এর চার বছরের মাথায় আবার নতুন করে বাপেক্সকে বলা হয় অংশীদার খুঁজতে। নতুন করে পার্বত্য এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোম্পানির কাছে আগ্রহপত্র চায় বাপেক্স। শেষ পর্যন্ত ২০১৪-১৫ সালে চীনের জিও জাদি পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং লংহুড সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির (বেইজিং) সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে অনেক দূর এগোলেও চীনা কোম্পানিটি আগ্রহ দেখায়নি শেষে। এর ঠিক পাঁচ বছর পর আবারও তেল গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে বাপেক্স। এখন আবার রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ব্রুনাই এবং জাপানের কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। বাপেক্স’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তজা আহমেদ ফারুক চিশতি বলেন, এর আগে দুই দফায় যে প্রস্তাব নেয়া হয়েছে সেখানে প্রথম দফায় সরকারের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। আর দ্বিতীয় দফায় বাপেক্স এবং সরকার চাইলেও আগ্রহী কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত চুক্তি করেনি। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স অভিজ্ঞ নয়। আবার কোন বিদেশী কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করতে চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে করণীয় কি জানতে চাইলে বলেন, সরকার বিকল্প চাইলে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করতে পারে। তাহলে কোন বিদেশী কোম্পানি এককভাবে ওই এলাকা অনুসন্ধান করে দেখবে। সূত্র বলছে, ৫০ দশকের গোড়ার দিকে পটিয়াতে একটি বিদেশী কোম্পানি গ্যাসকূপ খনন করার কাজ শুরু করে। কিন্তু তখন ওই এলাকা দুর্গম এবং নিরাপত্তাহীন হওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের বাজার তৈরি না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। পরবর্তীতে ৬০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে জালদি এবং ৮০ দশকে সিতা পাহাড়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। একটি আইওসি কাছালংয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এই এলাকায় অতীতে যে জরিপ করা হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে রয়েছে। এর ভিত্তিতে জায়গাগুলোকে সম্ভাবনাময় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ওই এলাকায় এর আগে আমরা দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ করে টিম পাঠিয়েছি কিন্তু নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে সেই জরিপ সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সেখানে বড় আকারের কোন মজুদ আছে বলে আমাদের মনে হয়নি। ছোট ছোট অনেকগুলো পকেটে গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে। যেহেতু মজুদের পরিমাণ বিশাল হবে বলে মনে হয়নি এজন্যই বিদেশী কোম্পানিগুলো আগ্রহী হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
×