ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যতিক্রমী প্রজাপতি মেলা জাবিতে

রঙিন ডানার প্রিয় পতঙ্গ, দিনভর ওড়াউড়ি

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

রঙিন ডানার প্রিয় পতঙ্গ, দিনভর   ওড়াউড়ি

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ প্রজাপতি এখন চাইলেই আর দেখা যায় না। বেশ দুর্লভ। যতদিন যাচ্ছে ততই কমছে সংখ্যায়। এ অবস্থায় প্রিয় পতঙ্গের প্রতি ভালবাসা জানাতে শুক্রবার আয়োজন করা হয়েছিল প্রজাপতি মেলার। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। মেলার স্লোগান: ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি।’ সকাল দশটায় শুরু হয়ে মেলার কার্যক্রম চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে প্রজাপতি অবমুক্ত ও বেলুন উড়িয়ে প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম মোস্তফা। উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার হাওলাদার, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রিয় পতঙ্গটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে মেলায় সকাল থেকেই ভিড় করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। প্রজাপতি মেলার আয়োজন ঘিরে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। জাবি সংবাদদাতা জানান, মেলা ঘুরে দেখা যায় শত শত প্রজাপতির চঞ্চল ওড়াউড়ি। বাতাসে ডানা মেলে উড়তে থাকা প্রজাপতির গায়ের কত যে রঙ! শুধু যে সৌন্দর্য ছড়ায়, তা নয়। পরাগায়নের মাধ্যমে এরা পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখে। আয়োজন থেকে তাই প্রজাপতির অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, জীবন্ত প্রজাপতি বিষয়ক হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে তৈরি ঘুড়ি ওড়ানো, প্রজাপতি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বারোয়ারি বিতর্ক, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান। বাইপাইল এলাকা থেকে মা-বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছিল মর্নিং গ্লোরিং স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আহনাফ আবরার। সে বলছিল, আগে কখন এক সঙ্গে এত জীবন্ত প্রজাপতি দেখিনি। আজ অনেক রঙের প্রজাপতি দেখেছি। আমি আবার আসব। আহনাফের বাবা হামিদুল ইসলাম বলেন, ছেলের আবদার পূরণ করতেই পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রজাপতি মেলায় এসেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রকৃতি খুব ভাল লাগে। যখনই সুযোগ পাই পরিবার নিয়ে ছুটে আসি। প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতিকে চিনলে, প্রজাপতি সংরক্ষণ করলে প্রকৃতি টিকে থাকবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিল তা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব প্রজাপতিকে সংরক্ষণের জন্য আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে জলাবায়ু পরিবর্তনের যে সমস্যাগুলো আছে তা মোকাবেলা করতে পারব। মেলায় প্রজাপতি বিষয়ক গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ বাশারকে ‘বাটারফ্লাই এ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ প্রদান করা হয়। এছাড়া সবুজবাগ সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী অরুণাভ ব্রুনোকে ‘ইয়াং বাটারফ্লাই এনথুজিয়াস্ট এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএ বাশার বলেন, প্রজাপতি হলো একটি অসাধারণ প্রাণী। এই প্রাণীটি প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি জড়িত অন্য কোন প্রাণী এত বেশি জড়িত আছে কিনা তা আমার জানা নেই। মানুষের সুস্থতা, পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রজাপতির ভূমিকা সর্বোচ্চ। প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে হলে শুধু চোখ থাকলে হবে না, অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে প্রজাপতির সংরক্ষণ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতির গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে ধারাবাহিকভাবে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
×