ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় অবহেলিত গণকবর ॥ ৪৮ বছরেও খোঁজ নেয়নি কেউ

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

 নওগাঁয় অবহেলিত গণকবর ॥ ৪৮ বছরেও খোঁজ নেয়নি কেউ

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯ বছরে পা দিলেও নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা জিরো পয়েন্টে অবস্থিত গণকবরটির কেউ খোঁজ রাখেনি। অযতœ আর অবহেলায় সেটি আজ স্মৃতির পাতা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে। উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে জানা গেছে, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপাহার উপজেলাতেও পাকি সেনারা তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। এর পর সেখান থেকে তারা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র মানুষদের বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে মা-বোনদের ইজ্জত হরণ করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সে সময় অসংখ্য স্বাধীনতাকামী মানুষকে ধরে এনে ব্রাশ ফায়ার করে উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় বর্তমানে নবনির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে রাস্তার পাশে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসনমলের একটি বিশাল আকৃতির পাত কুয়ায় ফেলে দিত। এমনকি অনেক সময় জীবন্ত মানুষদেরও সেখানে ফেলে দিয়ে কবর দিত। সে হিসেবে ওই কূপটি একটি গণকবরে পরিণত হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে ১৯৮৫ বা ৮৬ সালের দিকে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত রোস্তম আলী প্রিন্সিপাল ওই গণকবরের কূপটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এ সময় কূপ খননকারী কয়েক মিস্ত্রি সংস্কারের জন্য নামে ওই কূপে। কিন্তু সে সময় সেখান থেকে মানুষের হাড়গোর ও কঙ্কাল বের হতে থাকলে মিস্ত্রিরা ভয়ে আঁতকে ওঠে এবং কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ দেয়ায় তারা হাড়গোরগুলো কূপ থেকে তুলে অন্যত্র দাফন করে কুয়াটিকে সংস্কার করে। এর কয়েক সপ্তাহ পরে সে কুয়ার পানি পানের উপযোগী করে তোলা হয়। এর পর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ, গভীর নলকূপ স্থাপন করে মানুষ পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাতে থাকে। যার ফলে ধীরে ধীরে কূপটি অকেজো হয়ে পানি পানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এক সময় তা ভাগাড়ে পরিণত হয়। পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানকার পরিবেশ এমন মসৃণ হয়ে পড়েছে যে, ওই গণকবর বা কূপটি কোথায় ছিল তা বোঝাও বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে। উপজেলার অনেক স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেউ ওই গণকবরটি খোঁজ নেয়নি কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে স্থানটি ঘিরে রেখেও তার স্মৃতি রক্ষা করেনি। এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ ওমর আলী দুঃখ প্রকাশ করে জানান, স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কিংবা কোন সরকারও জায়গাটির স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সকল গণকবরের স্মৃতি রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলে তিনি সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ওই গণকবরটির তালিকা প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে গণকবরটির স্মৃতি রক্ষায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর সরকারের গণপূর্ত বিভাগের লোকজন জায়গাটি পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু বর্তমানে জায়গাটির স্পেস ছোট হওয়ায় সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী আরবসহ উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবি ছোট পরিসরে হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত করা হোক। এ জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে আকুল আবেদন জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×