ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের আশার আলো

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের আশার আলো

অভয়নগরে প্রতিবন্ধীদের আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে অভয়নগর উপজেলা অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। আধার ঘর আলো করে যখন প্রিয় সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে নেমে আসে আনন্দ উচ্ছ্বাস। কিন্তু প্রিয় সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয় তখন পিতা-মাতার মাঝে নেমে আসে চরম হতাশা। সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন বাবা মা পড়েন দুঃচিন্তায়। প্রতিবন্ধী সন্তানকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অভয়নগর উপজেলা অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়ছে, প্রতিবন্ধী কোন রোগ নয়, এটা এক ধরনের অক্ষমতা, যা চিকিৎসা দ্বারা ভাল করা যায় না। তবে শিক্ষা, প্রশক্ষিণ ও খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ভূমিকা রাখা যায়। জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য কমিটি রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস নেওয়া হয়। বয়স অনুুযায়ী শিশু শ্রেণী ও বৃত্তিমূলক পৃথক ক্লাস রয়েছে। শিক্ষকরা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, গান বাজনারও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রায় ১৭৯ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি এবং অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষার আলো গ্রহণ করছে। সরেজমিনে এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চার কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা টিনের তৈরি ঘরের কক্ষতেই চলছে ক্লাস। একটি কক্ষ শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীরা জানায়, আগে সবসময় মন খারাপ থাকত। পড়তে পেরে আমাদের আর মন খারাপ লাগে না। সমাজের দশজনের মতো আমরাও বাঁচতে চাই। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা ও সঙ্কট মোকাবেলা করে স্কুলটি ৫ বছর অতিক্রম করেছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে স্কুলটি মডেল স্কুলে পরিণত হবে। স্কুলের পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনেক সুন্দরভাবে করা হয় বলে জানান এলাকাবাসীরা। বর্তমানে ওই স্কুলটিতে ১৭৯ প্রতিবন্ধী শিশু পড়াশোনা করছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ সর্বমোট ১৯ শিক্ষক ও কর্মচারী এখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের ক্লাস রুমে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি বেঞ্চ-টেবিলে শিক্ষার্থীদের পাঠাদান দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তখন স্কুলরে ভিতর থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কলরব ভেসে আসছিলে। শির্ক্ষাথীরা সবাই অভয়নগরসহ আশে পাশের উপজেলার বাসিন্দা। এখানে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, গান-বাজনার, সাংস্কৃতিক র্কমকান্ডের ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। কথা হয় স্কুলের সহকারী শিক্ষক হাসনাহেনা ও তুহিন রায়ের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে আসার আগে এক রকম ঘর বন্দী অবস্থায় থাকত। কিন্তু স্কুলে আসার পর থেকেই ওদের জীবন পাল্টে যেতে শুরু করছে। প্রশিক্ষণ পেয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। অভয়নগর উপজেলা অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোসারেফ হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষেরা সাধারণত বেশি মেধাবী। তাদের সুরক্ষায় সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসা উচিত। সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি এগিয়ে আসেন তাহলে প্রতিবন্ধীরা অনেক সহজেই সক্ষম মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করনে তিনি। উপজেলা সমাজ সেবা কার্যলয়ের ফিল্ড সুপার ভাইজার ইসহাক আলী বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সেই আলোকে অভয়নগর অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যাও অনেক। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×