ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টিটোর ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

 টিটোর ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ

ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ যুবক কামাল উদ্দিন টিটোর। ক্লাসে বসেও আঁকত ছবি। এর জন্য ক্লাস টিচারের মারও খেতে হয়েছে তাকে। ছবি আঁকার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে আসছে। দেশের মানচিত্র, মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি আঁকার মধ্যে টিটোর কেটেছে শৈশব ও কৈশোর। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ এরপর গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী নিয়ে পৈত্রিক জমাজমি দেখাশোনার পাশাপাশি এখন সে ছোট বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখায়। টিটোর শুধু ছবি আঁকার প্রতি মনোযোগ ছিল তা নয়, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা বিষয়ের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ছোট ছোট ভাস্কর্য তৈরির প্রতিও প্রচ- আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকে কাদামাটি নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ’৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন বিভিন্ন কৌশলের ওপর ভাস্কর্য তৈরি করত। অন্য কোন কাজের প্রতি তেমন একটা মনোযোগ না থাকলেও ভাস্কর্য তৈরিতে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নতুন কিছু সৃষ্টির অদম্য ইচ্ছাশক্তি ছিল তার মধ্যে। টিটো মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। বাবা-মায়ের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা। কিন্তু তার আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসই তুলে ধরছেন। টিটোর জন্ম পঞ্চগড় সদর সদর উপজেলার চার মাইল মৌলভীপাড়া গ্রামে। বাবা নওশের আলী পঞ্চগড় সুগার মিলের এসসিডিআই পদে চাকরি করতেন। কয়েক বছর হলো বাবা মারা যান। মা আর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন টিটো। তার একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। বাবার রেখে যাওয়া জমিজমা দেখাশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছবি আঁকা ও ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটান। ছবি আঁকা শিল্পী হিসাবে এলাকায় বেশ নামডাক টিটোর। স্কুলের ছোট বাচ্চারা অঙ্কন স্যার বলে ডাকেন তাকে। তবে, একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভাস্কর্য তৈরি করে এলাকায় বেশ আলোচিত হচ্ছেন তিনি। কাদামাটি দিয়ে তৈরি ছোট আকারের এই ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের মুষ্টিবদ্ধ হাতের প্রতীকী দৃশ্যটি দেখানোর পাশাপাশি অকুতোভয় এক মুক্তিযোদ্ধা হাতে তীরবিদ্ধ (বুলেট) হয়েও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও মুষ্টিবদ্ধ হাতটি তিনি খোলেননি। স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা আর তীরবিদ্ধ হাতের পাশে সোনালি অক্ষরে লেখা জাতির জনকের নামটিও রয়েছে। পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান বলেন, যদিও এটি একটি প্রতীকী ভাস্কর্য। এর পরও এই ভাস্কর্যটিতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো ইতিহাস রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা স্লোগানের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র এবং পতাকা উপহার দিয়েছেন তারও চিত্র নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষুদ্র আকারে তৈরি এই ভাস্কর্যটি তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীকে নিজের হাতে উপহার দিতে চান এবং এটি বড় আকারে তৈরি করে দেশের যে কোন স্থানে স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন ভাস্কর্য শিল্পী টিটো। -এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় থেকে
×