ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক আন্তর্জাতিক সফরে চন্দ্রকলা থিয়েটারের ‘শেখ সাদী’

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

একাধিক আন্তর্জাতিক সফরে চন্দ্রকলা থিয়েটারের ‘শেখ সাদী’

সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশের অন্যতম তারুণ্য নির্ভর নাট্য সংগঠন চন্দ্রকলা থিয়েটারের প্রশংসিত প্রযোজনা নাটক ‘শেখ সাদী’ একাধিক আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছে। চন্দ্রকলা থিয়েটার সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে অর্থাৎ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনটি এবং ইরানে একটি প্রদর্শনী হবে। এর মধ্যে ভারতের আগরতলা ধর্মনগর নাট্যোৎসবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর ‘শেখ সাদী’ নাটকটির মঞ্চায়ন হবে। এ জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর ভারত যাচ্ছে চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক ‘শেখ সাদী’। এছাড়া আগামী ২২ জানুয়ারি দিল্লীতে এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার দমদম আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে ‘শেখ সাদী’ নাটকটির মঞ্চায় হবে। এছাড়া শেখ সাদীর জন্মস্থান ইরানেও নাটকটির একটি মঞ্চায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজনা ‘শেখ সাদী’ নাটকটি পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম আশ্রিত এক নান্দনিক প্রযোজনা। নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কু-ু। নাটকটির নির্দেশনা ও নাম ভূমিকায় একক অভিনয় করেন চন্দ্রকলা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এইচ আর অনিক। প্রযোজনা অধিকর্তা মামুনুর রশীদ, সঙ্গীত হামিদুর রহমান পাপ্পু, মঞ্চ ফজলে রাব্বি সূকর্ণ, মঞ্চ সহযোগী মাহমুদুল হাসান মাসুম, আলো এস এম অঙ্গন, কাজী নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা সৈকত, নিশি, পপি, গোলাম সারোয়ার, আনিস, অবনী, মেহেদী, নাহিয়ান এবং মেকাপ জনি সেন। শিল্প নির্দেশনা সুজন মাহাবুব। ‘শেখ সাদী’ নাটকটির কাহিনী এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ঘিরে। দিল্লীর যুবরাজ তার সময়কালে এক বিশ^ কবি সম্মেলনের আয়োজন করেন যেখানে মুখ্য কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। শেখ সাদীর প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু দিল্লীর কবি আমীর খসরু আমন্ত্রণপত্র রচনা করেন এবং শেখ সাদীর আগমন নিশ্চিত করতে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে উৎফুল্ল শেখ সাদী সম্মানিত এবং আনন্দে আপ্লুত হলেও বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত সময়ে একাধিকবার দিল্লী ভ্রমণ করলেও সেবার সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিল্লী আসতে পারেনি। স্বশরীরে না যাওয়ার ক্ষেত্রে অপরাপর আরেকটি কারণ ছিল, শেখ সাদী চেয়েছিলেন তার অন্তিম বেলা কাটুক শিরাজী নগরীতে যেখানে তার জন্ম শৈশব-কৈশর ও যৌবনের বেড়ে ওঠা। ফলে সিরাজ ত্যাগ করে দিল্লীর সে যাত্রায় শেখ সাদী না গেলেও শেখ সাদী তার রচিত গুলিস্তা, বুলিস্তাসহ অন্যান্য রচিত গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন শিরাজীতে অভ্যার্থনা দিল্লীর রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে যুবরাজ ও কবিবন্ধুর প্রতি সম্মানার্থে। ইতিহাসের এই সত্যকে ঘিরেই নাটকটি শুরু হয়। মহাকবি শেখ সাদী তার সৃজন সাহিত্যের সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে শিরাজীর নিজ গৃহে, পারস্য থেকে দিল্লী গামী মুসাফিরদের আসার অপেক্ষায়। দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন, কবি বন্ধুবর আমীর খসরুর আমন্ত্রণে শেখ সাদী অপেক্ষমাণ তার রচিত সাহিত্য সমগ্র আমন্ত্রণের প্রতিদান হিসেবে মুসাফিরদের হাতে তুলে দিতে। ফজরের আজান শেষে ভোরের আলো ফোটাবার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী অপেক্ষমাণ শেখ সাদীর সময়টুকু নিয়েই নাটক ‘শেখ সাদী’। পোশাকের পকেটে খাবার পুরার বহুল প্রচলিত কাহিনীর পাশাপাশি পারস্যের কবি রুদাকী, ফেরদৌসৗ, জালাল উদ্দীন রুমি, ওমর খৈয়ামসহ পূর্বসূরি ও সমসাময়িক সাহিত্যিকদের সামান্তরাল পথচলা, যাপিত জীবনকে তুলে ধরা এবং নিজ সাহিত্য সৃজনের প্রেক্ষাপটকে মনোজগতে পুনরায় ফিরে দেখার এবং অপেক্ষার অবসানে শেখ সাদীর আত্ম উপলব্ধির নাটক ‘শেখ সাদী’ প্রশংসিত হয়েছে। এই নাটকের ধারাভাষ্যে শুরুতে এবং শেষে আইটিআইএর সাম্মানিক সভাপতি শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদারের ভয়েস রয়েছে। ফলে তার কণ্ঠস্বরের ব্যবহারটি নাটকে যে অর্থে সে অর্থ অনুধাবনের জন্য বিপুল সংখ্যক নাট্যকর্মী ‘শেখ সাদী’ দেখবে বলে আমার বিশ্বাস। উপরন্তু আমরা জেনেছি যে, ইরানেও শেখ সাদীকে নিয়ে কোন নাটক মঞ্চায়িত হয়নি। ফলে বাংলাদেশে শেখ সাদী নাটকটি মঞ্চে আনা যে গর্বের গর্বিত অংশীদার সে জায়গা থেকে অজানা শেখ সাদীকে জানার অন্যতম প্রধান সুযোগ ‘শেখ সাদী’। চন্দ্রকলা পরিবার তাদের সর্বোচ্চ শক্তি এবং অভিনয় নৈপুণ্যতা দিয়ে উপস্থিত অনুরাগী দর্শকদের শিল্প পিপাসা নিবৃত করার চেষ্টা করবে। সেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
×