ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক (ডাঃ) কামরুল হাসান খান

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, আওয়ামী  লীগ এবং বাংলাদেশ

২০ এবং ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে দেশ বিদেশে রয়েছে প্রচুর আগ্রহ, উৎসাহ-উদ্দীপনা। এ দলটি ১৯৪৭ এর ভারতের বিভাজনের পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, ১৯৮১ থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে বার বার সঙ্কটাপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন, দেশকে বিশ্বের দরবার উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত করেছেন। এই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ, রক্ত, অত্যাচার নির্যাতন, বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক, জলবায়ু পরিবর্তন, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির এবং জঙ্গীবাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দক্ষিণ এশিয়ায়ও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। দেশের ভেতরেও নানা সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা ষড়যন্ত্রকারীরা অব্যাহত রেখেছে- এর মধ্যে আগামী জাতীয়-আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম, দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তাঁর অসামান্য যোগ্যতার জন্য ৩৭টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির এক গভীর সঙ্কটে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। নানা চড়াই-উতরাই, ষড়যন্ত্র, জীবননাশের হুমকির মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দলকে পরিচালনা করে চারবার ক্ষমতায় বসিয়েছেন। আওয়ামী লীগ এখন যে কোন সময়ের চেয়ে সুসংগঠিত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। ১৯ বার হত্যা করার চেষ্টা করেও উনাকে উনার বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ থেকে নিভৃত করা যায়নি বরং আরও অসম সাহসের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। হারিয়েছেন স্নেহময়ী পিতা-মাতা, ভাইসহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন। এত কষ্ট-যন্ত্রণা বুকে নিয়ে অসীম ধৈর্য নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থাপন করেছেন বিরল দৃষ্টান্ত। দেশের স্বার্থে কখনও আপোস করেননি বরং পিতার মতোই প্রধানমন্ত্রীর পদও প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিনিময়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন জেল-জুলুম-নির্যাতন। সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয় এনে দিয়েছেন জাতির জন্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা, সৎ, সাহসী, যোগ্য, মেধাবী, কর্মঠ, মানবতাবাদী, গণতান্ত্রিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন (ভিশনারি) নেতা। জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন রূপকল্প ২০২১, উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সময়োপযোগী কূটনৈতিক কৌশল একটি বড় উপাদান। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন এবং বার বার কূটনৈতিক সফলতা অর্জন করছেন। সব মিলিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রনায়ক। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুনের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ ভূখন্ডের মানুষের মন-মননশীলতা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সামাজিকতা ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দলটি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে কখনও বিচ্যুত হয়নি। বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর ব্যক্তিগত আদর্শ, রাজনৈতিক আদর্শ এবং দলীয় আদর্শ সকল সময় উর্ধ্বে তুলে ধরে রেখেছেন এবং একই ধারায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গঠনতন্ত্র মোতাবেক এর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নিয়মিত কাউন্সিল অধিবেশন, কার্যকরী পরিষদ, জাতীয় পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির মাধ্যমের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজনে জনসভার মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট গ্রহণ করে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণার পর ৩৫ দিনে ৩২টি জনসভা করে জনমত সৃষ্টি করে ম্যান্ডেট গ্রহণ করেছিলেন। পাশাপাশি দেশের অন্য দলগুলো একনায়কতন্ত্রের মতো পরিচালিত হয়। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দল পরিচালিত হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নীতি-নৈতিকতার সেখানে কোন বালাই নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। ১৯৫৪ থেকে যতবার মানুষ ভোট প্রদানের সুযোগ পেয়েছে ততবারই তারা ভোটদানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আকাশ-সমুদ্র-সীমান্ত বিজয় পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সব শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশে পদার্পণ করেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ২০০০ ডলার। অর্থনৈতিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপর। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধাপে ধাপে পূরণ হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা রূপকল্প ২০২১ এর সব কর্মসূচী। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বিদ্যুত, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে জ্বাজল্যমান পরিবর্তন। দারিদ্র্য হ্রাস, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এসব কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে বিশেষ অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান হচ্ছে আমূল পরিবর্তন। সময় এখন বাংলাদেশের। সময় এখন শেখ হাসিনার, সময় এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকার জন্য অর্জন করছেন ৩৭টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে হয়েছেন মাদার অব হিউম্যানিটি। বঙ্গবন্ধু বাঙালীকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, স্বাধীনতাপরবর্র্তী সঙ্কট নিরসন করে গেছেন, দেশের সকল ক্ষেত্রে শক্ত ভিত করে গেছেন যার ওপরই হচ্ছে সকল উন্নয়ন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুনরায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলেছেন, বাস্তবায়ন করে চলেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অর্থনৈতিক মুক্তির পথ ধরে সার্থক করে তুলছেন স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু , বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বালাদেশ আওয়ামী লীগ অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের জন্য, জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য, বৈশ্বিক অস্থির রাজনীতি মোকাবেলা করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, জঙ্গীবাদমুক্ত, বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এখন প্রয়োজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুসংগঠিত, ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশবাসীর বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা কাউন্সিলের মাধ্যমে অতীতের ন্যায় প্রবীণ-নবীন, দেশপ্রেমিক, ত্যাগী, দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অভিজ্ঞ, সৎ, নির্লোভ নেতাদের সমম্বয়ে একটি আধুনিক কমিটি গঠন করবেন যারা সমসাময়িক পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করবেন যেখানে অনুপ্রেরণা-আদর্শ হিসেবে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা-সাহস হিসেবে থাকবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বনন্দিত রাজনীতিবিদ জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন সফল হোক, সার্থক হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×