ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘পদ্মার পাড়ে হবে অলিম্পিক ভিলেজ’

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

‘পদ্মার পাড়ে হবে অলিম্পিক ভিলেজ’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসে ইতিহাসের সেরা ফল করেছে বাংলাদেশ, এটা যেমন সত্যি; তেমনি পাঁচটি খেলা থেকে (ভলিবল, বাস্কেটবল, টেনিস, স্কোয়াশ ও সাইক্লিং) একটিও পদক না আসার লজ্জাও পেতে হয়েছে, এটাও রূঢ় সত্য। পদকজয়ী ক্রীড়াবিদ ও তাদের ফেডারেশনকে যেভাবে মূল্যায়ন করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, তেমনি পদকহীন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি তাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে। বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আয়োজিত হয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ২০১৯ সালের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিক্স ওয়ার্ল্ড গেমসে বাংলাদেশের ১৩৯ সদস্যের দল অংশগ্রহণ করে ২২ স্বর্ণ, ১০ রৌপ্য ও ৬ তাম্রপদক জয় করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনে। এই পদকজয়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জাহিদ আহসান রাসেল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে এসএ গেমস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের কাছে বলেছি এসএ গেমসে যারা পদক পেয়েছে, যারা পদক পায়নি বা কি কি সমস্যা হয়েছে, কেন তারা পদকবঞ্চিত হলো এরকম একটা সামগ্রিক চিত্র আমাকে দিতে। যেহেতু মাত্র গেমসটি শেষ হয়েছে তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা এনএসসি থেকে একটি রিপোর্ট এবং তাদের রিপোর্টসহ দুটি সমন্বয় করে আপনাদের জানাব।’ কিছু ফেডারেশন অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েও পদক পায়নি আবার অনেকে বেশি পেয়েও পদক পায়নি। এ নিয়ে রাসেল বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু ফেডারেশনকে অনেক অনুদান দেই। কিন্তু তারা কিছুই পায় না। আশানুরূপ ফলাফল দিতে পারছে না। আবার কিছু দেখা যায় মোটামুটি বরাদ্দ পেয়েও ভাল করছে। যেসব ফেডারেশন ভাল করছে তাদের বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার জন্য বাজেটে একটি বরাদ্দ রেখেছি। যারা এসএ গেমসে ভাল করেছে তাদের জন্য স্পেশাল অনুদান দেব।’ ভেন্যু নিয়েও কথা বলেন রাসেল, ‘ভেন্যু নিয়েও আমরা কাজ করছি। ভেন্যু নিয়ে আমরা এমন একটি কাজ করতে যাচ্ছি আপনারা জানলে খুশি হবেন। স্পোর্টসের ইতিহাসে একটি অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এটা হবে পদ্মার পাড়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি এবং এই অলিম্পিক ভিলেজের নির্মাণ বিষয়ে কি ধরনের ভিলেজ করতে পারে কত টাকা লাগবে, এই বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য আমরা আগামী ২৯ ডিসেম্বর আমাদের মন্ত্রণালয়ে একটা সভা আহ্বান করেছি। সেখানে অলিম্পিক ভিলেজে প্রত্যেকটি ফেডারেশন যাদের খেলার মাঠও রয়েছে তাদের জন্যও মাঠ থাকবে, যাদের নেই, তাদের জন্যও। সেখানে ইনডোর গেমস থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ফেডারেশনের সুযোগ-সুবিধা থাকে, জিমনেশিয়াম থাকে, জিম ফ্যাসিলিটিসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে।’ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ‘ভিলেজটি এমন বড় জায়গা নিয়ে হবে সেখানে কমপক্ষে সাতটি মাঠ হবে। যেখানে ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ যে ধরনের বড় খেলাগুলো হয়, সেই ধরনের মাঠ তৈরি করা হবে। তবে এর সবই এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। অলিম্পিক ভিলেজের জন্য আগামী সভায় আমরা অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের যারা সেনবাহিনী কর্মকর্তা আছেন, তাদেরক ডেকেছি এবং আমাদের মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন সবাইকে মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’ এসএ গেমসে যে পাঁচ ফেডারেশন ব্যর্থ হয়েছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে কি না এ নিয়ে রাসেলের ভাষ্য, ‘অবশ্যই আমরা জবাবদিহি নেব। মাত্র এসএ গেমস শেষ হয়েছে। সবাই ব্যস্ত। আরও কিছুদিন পরে সাউথ এশিয়ান গেমস নিয়ে একটা পর্যালোচনা সভা আহ্বান করব। সেই সভায় কারা কারা ব্যর্থ হয়েছে তাদের কাছে আমরা ব্যর্থতার জবাব চাইব। কারণ এই আসরে আমাদের রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের টাকা খরচ হয়। সেই টাকা সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা ব্যর্থ হয়েছেন তাদের অবশ্যই এই বিষয়ে জবাব দিতে হবে।’ স্পেশাল অলিম্পিকে সফল বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদদের প্রসঙ্গে রাসেল বলেন, ‘আমি গর্বিত আমাদের ক্রীড়াবিদরা স্পেশাল অলিম্পিক গেমসে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আমি তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আশাকরি তারা ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল অর্জন করবে। তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে আমরা সদা প্রস্তুত। এটা সত্য, তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন খেলার মাঠ নেই। আর তাই আমরা জাতীয় সংসদ ভবনের পাশের খোলা মাঠে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই আমরা কমপ্লেক্সের নকশা চূড়ান্ত করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি প্রতিবারই স্পেশাল অলিম্পিক গেমসে সাফল্য অর্জনকারীদের পুরস্কার প্রদান করে থাকেন এবং নিজেই তাদের গণভবনে সংবর্ধিত করেন। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অফিসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্পেশাল অলিম্পিকে যারা পদক পেয়েছেন তাদের একটি তালিকা চেয়েছেন এবং আশা করছি যখন সাউথ এশিয়ান গেমসে যাদের সংবর্ধিত করা হবে, সেই সময় একসঙ্গে স্পেশাল অলিম্পিক্সে যারা পদক পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরও সংবর্ধনা দেবেন।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন।
×