ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেবিচকের অনুমোদন ছাড়া ড্রোন ওড়ালে শাস্তি

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

বেবিচকের অনুমোদন ছাড়া ড্রোন ওড়ালে শাস্তি

শংকর কুমার দে ॥ আইনের আওতায় আসছে ‘ড্রোন’। নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন ওড়ানো যাবে না। জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যেতে পারে ড্রোন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এসব বিবেচনা ও আশঙ্কা থেকেই প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড্রোন ওড়াতে হলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে নিবন্ধন করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলেই ড্রোন ওড়ানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করবে পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারী, বেসরকারী, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গ হচ্ছে। নিরাপত্তা হুমকির সমুখীন হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান। জনসাধারণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ খতি করা হতে পারে। অনৈতিক, বেআইনী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করার আশঙ্কা বাড়ছে। এই ধরনের প্রযুক্তির আমদানি, ব্যবহার, উড্ডয়ন অত্যন্ত সীমিত ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই ড্রোন আইন, নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে লক্ষ্য। তবে ড্রোনের ব্যবহার মানবকল্যাণে বা রাষ্ট্রীয় বহুবিধ উন্নয়নে কিংবা নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের জন্যও প্রয়োজন দেখা দেয়। মানবকল্যাণের নামে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে বা নিরাপত্তা বিঘিœত করার কাজে যাতে ড্রোন ব্যবহৃত হতে না পারে সেজন্য ড্রোন ব্যবহারের নীতিমালা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী, সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে ড্রোন। এটার অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্পর্শকাতর স্থানে ড্রোন দিয়ে হামলা করা হতে পারে। বর্তমানে পুলিশের বিশেষায়িত বিভাগ ড্রোন ব্যবহান করে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন করছে। পুলিশের মতো জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা যদি ড্রোনকে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করে তা হলে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ড্রোনের আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়নের সুনিয়ন্ত্রিত অনুমোদন প্রদান এখন সময়ের চাহিদা। এ জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন ওড়াতে হলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এর কাছে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন উড়ালে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে। ড্রোন নিবন্ধনের জন্য বেবিচককে দিতে হবে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য। অনুমতি দেয়ার পর ড্রোন মালিককে দেয়া হবে একটি বিশেষ স্টিকার। এই স্টিকার আবার ড্রোনের গায়ে দৃষ্টিগোচর স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। কেউ নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন উড়ালে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে পুলিশকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন ওড়ানো ও এর দ্বারা কারও ক্ষতি হলে উড্ডয়নকারীকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। একইসঙ্গে গুণতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ১৫ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন আমদানি করতে হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। এসব বিধান রেখে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’। এ নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এর ওপর মতামত দেয়ার জন্য তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী ড্রোন উড্ডয়নের অনুমতি প্রদানের সুবিধার্থে চারটি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। চারটি ক্যাটাগরি মধ্যে আছে ১. বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে ড্রোন, ২. শিক্ষা ও গবেষণার মতো অ-বাণিজ্যিক কাজে সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার ব্যবহার করা যাবে। ৩. সার্ভে, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভ্যাব্যতা যাচাই, বাণিজ্যিক পেশাদার ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যাবে ড্রোন। ৪. রাষ্ট্রীয় বা সামরিক প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়াও ড্রোন উড্ডয়ন বা পরিচালনার জন্য তিনটি জোনে বিভক্ত করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এই জোনগুলো হচ্ছে গ্রীন জোন, ইয়োল জোন ও রেড জোন। গ্রীন জোনের কোন প্রকার অনুমতির প্রয়োজন হবে না। এর পরিধি হবে বিমানবন্দর বা কেপিআইয়ের তিন কিলোমিটার বাইরে এবং ৫০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয়। বিমানবন্দর বা কেপিআইয়ের পাঁচ কিলোমিটার বাইরে এবং ১০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয় এবং বিমানবন্দর বা কেপিআইয়ের ১০ কিলোমিটার বাইরে এবং ২০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয়। ইয়োল জোন যা অনুমতিসাপেক্ষে ব্যবহার করা যাবে নিয়ন্ত্রিত এলাকা, সামরিক এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। রেড জোন যা বিশেষ অনুমতিসাপেক্ষে পরিচালনা করা যাবে নিষিদ্ধ, বিপজ্জনক. বিমানবন্দর, কেপিআই এলাকা।
×