ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদনহীন কারখানা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

অনুমোদনহীন কারখানা

আধুনিক ঢাকা শহর বিনির্মাণের লক্ষ্যে বহুতল ভবন, অগণিত টাওয়ার এবং অনুমোদনহীন শিল্প কলকারখানার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কত মূল্যবান জীবনের ভবিষ্যত শেষ হয়ে যায়, সেটা এই শহরের দুঃসহ আখ্যান। দুর্ঘটনা শুধু ভবন ধসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অগ্নিকা-ের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও অনিবার্য বিপর্যয়কে ডেকে আনছে। চরম সর্বনাশের পর স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, কেউ ভবন, কারখানা কিংবা টাওয়ার নির্মাণে বিধি অনুসরণ করে না। এমনকি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে কোন ধরনের অনুমোদন ব্যতিরেকেই ব্যবসায়িক হীন স্বার্থ চরিতার্থে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এমন সব টাওয়ার, ভবন আর কলকারখানায় কর্মরত অসহায়, সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে একেবারে জিম্মির কাতারে। আগুনের সর্বশেষ ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে গাজীপুরে একটি ফ্যানের কারখানায়। ১০ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েই মারা যাওয়ার অসহনীয় চিত্রে স্বজনদের আহাজারি, প্রশাসনের টনক নড়াÑ সব মিলিয়ে যে দৃশ্যটি সামনে আসে তাতে দেখা যায়, এই কারখানাটিরও সংশ্লিষ্ট চারটি সংস্থার কোন ধরনের অনুমোদন ছিল না। শবদেহের পোড়া গন্ধে যখন আকাশ বাতাস ভারি, প্রিয়জনের বুকফাটা কান্নার রোল যে মাত্রায় পুরো পরিস্থিতি শোকাবহ করে তোলে তেমন দুঃসময়ে সবাই জানতে পারে, প্রয়োজনীয় কোন ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি এই কারখানা বৈদ্যুতিক ফ্যান প্রস্তুতের যে নির্মাণশৈলী সেখানে বিন্দুমাত্র অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না। দুর্ঘটনার পর পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে উঠে আসে, এখানে চারটি সংস্থার অনুমোদন অত্যন্ত জরুরী ছিল যার একটিও নেয়া হয়নি। একটি কারখানা তৈরি করতে গেলে কলকারখানা পরিদর্শন, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর আর বিস্ফোরক অধিদফতরের অনুমোদন সাপেক্ষেই নির্মাণ প্রকল্প ছাড়পত্র পেয়ে থাকে। গাজীপুরের গ্রামীণ পরিবেশে কারখানাটি গত চার বছর ধরে ফ্যান উৎপাদন করে আসছিল। শুধুমাত্র ছাড়পত্র যোগাড় করা হয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। ২য় তলায় যেখানে ফ্যান তৈরির কারখানা, সেটা এক সময় আবাসিক ফ্ল্যাট ছিল। অপরিকল্পিতভাবে ছাদে টিনশেডও নির্মাণ করা হয়। একটি ছোট্ট অপ্রশস্ত সিঁড়ি দিয়েই কর্মরত ৮০ জন শ্রমিকের ওঠা-নামার ব্যবস্থা ছিল। সঙ্গত কারণেই আগুন লাগার পর এই অন্ধকার, জ্বলন্ত অগ্নিকু- থেকে হতভাগ্য ১০ জন শ্রমিক বের হতে ব্যর্থ হলে সেখানেই তাদের শেষ যাত্রা নিশ্চিত হয়। এমন করুণ অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বর্ণনারও অতীত। গাজীপুরের এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যুকূপ সবার সামনেই গত চার বছর অবলীলায় ফ্যান উৎপাদনের মতো বৈদ্যুতিক পণ্য প্রস্তুতের কারখানা হিসেবে ব্যহৃত হচ্ছিল। ভয়ঙ্কর অগ্নিসংযোগের আগ পর্যন্ত কারও মাথায়ও আসেনি কতখানি বিপদের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় শ্রমিকরা তাদের কর্ম জীবনকে পার করত। এর আগে কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন লাগায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় তাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানি হয়। এখনও কয়েকজন লাইফ সাপোর্টে। এই প্লাস্টিকের কারখানাটিও অনুমোদনহীন। এখানেও কারখানা নির্মাণের আনুষঙ্গিক বিধিনিষেধ মানা হয়নি। এর জন্য দায়ী অপরাধীদের আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হলেও যে সমূহ ক্ষতির মুখোমুখি হলো নিহতদের পরিবার, নিকটজন তার মূল্য কিসের বিনিময়ে আসবে তা বলা মুশকিল। রাজধানী ঢাকা যখন এমন দুর্যোগ আর ভয়াবহ অবস্থায়, সেখানে দেশের অন্যান্য স্থানের পরিবেশ-পরিস্থিতি কতখানি শঙ্কামুক্ত তাও বিবেচনার দাবি রাখে অবশ্যই।
×