ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরিকায় মুশফিকের টর্নেডো ব্যাটিং

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

সাগরিকায় মুশফিকের টর্নেডো ব্যাটিং

মোঃ মামুন রশীদ ॥ প্রথমবার সুযোগটা এসেছিল, একটিমাত্র বাউন্ডারি হাঁকাতে পারলেই টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলতেন। কিন্তু ৪ রানের আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে মুশফিকুর রহিমের। তবে ৫১ বলে ৯৬ রানের যে বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দিয়েছেন সেটি টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস তার। চলমান বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথমদিনই ব্যাট হাতে একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক। সাগরিকায় টর্নেডো চালিয়ে খেললেন চলতি আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের এই ইনিংস। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া ইনিংসটি খেলে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে জয় এনে দিয়ে মুশফিক হয়েছেন ম্যাচসেরা। এই ইনিংসটির সুবাদে তিনি বিপিএলের সেরা রান সংগ্রাহক তামিম ইকবালের (১৯৩৫) খুব নিকটে পৌঁছে গেছেন। এখন সব বিপিএল মিলিয়ে মুশফিকের রান ১৯০৭। গত মাসে ভারত সফরে গিয়ে টি২০ ক্রিকেটে রানে ফিরেছেন মুশফি৬ক। দেশের অন্য ক্রিকেটাররা তাকে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যা দিলেও গত এক বছরেরও বেশি সময় বড় কোন ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। কিন্তু ভারতে গিয়ে প্রথম টি২০ ম্যাচে ৪৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি২০ জয় পাইয়ে দেন। ১ বছর ৯ মাস ও ১৫ ম্যাচ পর সেটি ছিল তার প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ ফিফটি। তবে নিজেকে ফিরে পাওয়া সেই ইনিংসটির পর দুই ম্যাচে আবার ব্যর্থ হয়েছেন, ৪ ও ০ রানে আউট হয়ে যান পরবর্তী দুই টি২০ ম্যাচে। এবার বিপিএলের প্রথম ম্যাচে তিনি মিরপুরে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তার দল খুলনাকে জিতিয়েছিলেন। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলেন আরেকটি ম্যাচজয়ী ইনিংস। খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ব্যক্তিগত ইনিংস। আগে ব্যাট করে টানা ২ ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয়া রাজশাহী ৪ উইকেটে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছিল। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক ৫০ বলে ৮ চার, ৪ ছক্কায় ৮৭ রানের একটি বিস্ফোরক ইনিংস উপহার দেন। জবাব দিতে নেমে দলীয় ২৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে খুলনা। সে সময় অধিনায়ক হিসেবে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নামেন মুশফিক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫৩ বলে ৭২ রানের জুটি গড়ে দলের প্রাথমিক ফাঁড়াটা কাটিয়ে দেন তিনি। রুশো ৩৫ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪২ রানে সাজঘরে ফেরার পর মুশফিক দুরন্ত হয়ে ওঠেন। ৩০ বলেই ৫ চার, ২ ছয়ে টি২০ ক্যারিয়ারের ২১তম এবং বিপিএলের ১২তম ফিফটি পেয়ে যান তিনি। দলকে জেতাতে একাই এরপর প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে শামসুর রহমান শুভর সঙ্গে ৬১ রানের জুটিটি হয়েছে মাত্র ৩৪ বলে। শামসুরও ২৯ রানে আউট হয়ে যান। কিন্তু মুশফিক এগিয়ে যেতে থাকেন প্রথম টি২০ সেঞ্চুরির দিকে। তবে দলকে জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে রেখে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে। শতক পাওয়ার জন্য বাউন্ডারি হাঁকানো ছাড়া উপায় ছিল না তার। ইংলিশ অলরাউন্ডার রবি বোপারাকে চার হাঁকাতে গিয়ে শোয়েব মালিকের হাতে ক্যাচ হয়ে যান। ৫১ বলে ৯ চার, ৪ ছক্কায় গড়া ৯৬ রানের ইনিংসটি সমাপ্ত হয়ে যায়। তখনও ইনিংসের ৩ বল বাকি ছিল। মুশফিক দলের জয়কে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন, সেটি নিশ্চিত করেছেন পরে দক্ষিণ আফ্রিকান রবি ফ্রাইলিঙ্ক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে এটিই মুশফিকের সেরা ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে বিপিএলে সেঞ্চুরি আছে মাত্র ৪ ব্যাটসম্যানের। তামিম ইকবাল (১৪১*), সাব্বির রহমান (১২২), মোহাম্মদ আশরাফুল (১০৩*) ও শাহরিয়ার নাফীস (১০২*)। সে তালিকায় যোগ হতে পারতেন মুশফিকও। তবে এর আগে বিপিএলে সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছে বেশ কয়েকজনের। নার্ভাস নাইনটিজে গিয়ে দলীয় ইনিংস শেষ হওয়া কিংবা নিজে আউট হওয়ার কারণে শতক পাননি ৬ জন। ২০১৩ সালেই শামসুর রংপুরের হয়ে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ৫০ বলে অপরাজিত ৯৮, রায়ান টেন ডেসকাট চিটাগংয়ের হয়ে খুলনার বিপক্ষে ৬১ বলে অপরাজিত ৯৫, ট্রাভিস বার্ট খুলনার হয়ে ঢাকার বিপক্ষে ৫৬ বলে অপরাজিত ৯৪ ও জেসন রয় চিটাগংয়ের হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে ৫৫ বলে অপরাজিত ছিলেন ৯২ রানে। দলীয় ইনিংস শেষ হওয়াতে কিংবা দল জিতে যাওয়ায় তারা সেঞ্চুরির দেখা পাননি। এছাড়া ২০১৫ সালে ক্রিস গেইলও বরিশাল বুলসের হয়ে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৯২ রানে অপরাজিত ছিলেন। মুশফিকের মতো আউট হওয়ার আক্ষেপ আছে শুধু জিম্বাবুইয়ের সিকান্দার রাজার। ২০১৭ সালে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে এই সাগরিকাতেই ৪৫ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখনও ইনিংসের ৪ বল বাকি ছিল। মুশফিক সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন। তবে এখন তিনি বিপিএলের সর্বাধিক রানে শীর্ষে থাকা তামিমের আরও নিকটতর হয়েছেন। তামিম বিপিএলে ৬১ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৯৩৫ রান, মুশফিকের রান ৭৩ ম্যাচে ১৯০৭। আর ২৯ রান করতে পারলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন তামিমকে এবং ৯৩ রান করতে পারলে সুযোগ রয়েছে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক ২১টি অর্ধশতক এখন মুশফিকের। তার ওপরে আছেন তামিম। তামিম ১৯৪ টি২০ ম্যাচে ৩৪টি, মুশফিক ১৭৭ ম্যাচে ২১টি ও সাকিব আল হাসান ৩০৮ ম্যাচে ১৯টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। রানের দিক থেকে খুব নিকটে চলে এসেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। রিয়াদ ২০৪ ম্যাচে ১২ অর্ধশতকে করেছেন ৩৬৪২ রান। মুশফিকের রান এখন ৩৬১৭। বাংলাদেশের পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে তামিম সবার ওপরে। তার রান ৫৩৩৫। এছাড়া সাকিব ৪৯৭০ রান করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। এরপরই রিয়াদ ও মুশফিক।
×