ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজশাহী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ আজ ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী হানাদারমুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে রাজশাহী পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দু’দিন আগে দেশ স্বাধীন হলেও রাজশাহীতে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল আজকের এই দিনে। অবরুদ্ধ মানুষ এদিন নেমে এসেছিল রাজশাহীর মুক্ত বাতাসে। হারানো স্বজনদের খুঁজতে তারা ছুটে গিয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল নির্যাতিত অনেকের মরদেহ। রাজশাহীকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সাব-সেক্টরের কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (বীরবিক্রম)। মুক্তিযুদ্ধকালে রাজশাহী ছিল ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন। সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক শহীদ হওয়ার পর এই ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব নেন কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান (বীর উত্তম)। মুক্তিবাহিনীর অগ্রগামী একটি দল সাদা পতাকা উড়িয়ে সাদা পাগড়ি আর আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে এসে গেল। স্বজনদের ভিড় জমে উঠল বন্দীশালার আশেপাশে। বন্দীশালা থেকে বেরিয়ে আসা বন্দীরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ল। স্বজন হারানো শোকে আর বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা নির্যাতিত-অত্যাচারীদের অঝোর অশ্রুতে সিক্ত হতে থাকল রাজশাহীর এই মাটি। পাবনা নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, আজ পাবনা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ যখন বিজয়ের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মাতোয়ারা তখনও পাবনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনার তুমুল যুদ্ধ চলে। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই শুরু হয়। এদিন দুপুর ২টায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী শহরে মটার শেল ও বিমান হামলা চালায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে পাবনা শহর ঘিরে আক্রমণ চালায়। ২ দিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের পর পাকসেনারা পালাতে থাকে। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে শহরে প্রবেশ করেন। এদিন দুপুরে পুরাতন কালেক্টর ভবনের সামনে হাজারও মুক্তিকামী মানুষের সামনে জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম আমজাদ হোসেন পাবনাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। মুক্তিবাহিনী প্রধান সাবেক এমপি মরহুম রফিকুল ইসলাম বকুল এ সময় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুর রব বগা মিয়া, এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, অধ্যাপক আবু সাইদ, মুজিবনগর সরকারের সাবেক সংস্থাপন সচিব মরহুম নুরুল কাদের খানসহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পাবনায় ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে ৩ দফায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১৬৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনীর হাতে প্রায় ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী জনতা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সৈয়দপুর স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় হলেও সৈয়দপুর হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। ছয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন খাদেমুল বাশার ও মিত্রবাহিনীর কমান্ডার কর্নেল জোগল সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেন। সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থান নেয়া পাকি বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালীরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়। মিত্রবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসে প্রবেশ করে তাদের নিরস্ত্র করে। এরপরই হানাদারমুক্ত হয় সৈয়দপুর। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ঢুকে পড়ে শহরে কয়েক হাজার স্বাধীনতাকামী লোক। শহরের পৌরসভা ভবনে উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা।
×