ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্টোকস এখন আদর্শ, বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

স্টোকস এখন আদর্শ, বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বেন স্টোকসের জীবন যেন সিনেমার গল্প। জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিউজিল্যান্ডে। বিদেশ বিভুঁইয়ে পরিবারের সঙ্গী হয়ে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়েছেন বিলেতে। দুর্দান্ত অলরাউন্ডার। কিন্তু মাঠের বাইরে ক্রমাগত অসদাচরণের জন্য নামের সঙ্গে ‘ব্যাডবয়’ তকমা। পানশালায় মারামারি বাধিয়ে এক মৌসুম আগেও যার সবকিছু শেষ হতে বসেছিল সেই তিনি এখন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন তথা বিবিসি’র ২০১৯ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। ঘরের মাটিতে এবার ইংলিশরা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করে। বলাবাহুল্য সেখানে ‘ব্যাডবয়’ খ্যাত এই ভিনদেশীই ছিলেন বৃটিশদের রূপকথার নায়ক। ২০০৫ সালে এ্যান্ড্রুু ফ্লিনটফের পর মাত্র পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এই পুরস্কার জিতলেন ২৮ বছর বয়সী স্টোকস। তালিকায় বাকি তিনজনই কিংবদন্তিÑ জিম লেকার, ডেভিড স্টিল ও ইয়ান বোথাম। ১৯৫৪ সাল থেকে প্রবর্তিত ঐতিহাসিক এ অর্জনে নাম লেখাতে পেরে যারপর নাই খুশি স্টোকস। ‘এটা ব্যক্তিগত পুরস্কার, তবে আমার খেলাটা দলীয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হলো- বিশেষ মুহূর্তগুলো আপনি সতীর্থ, ব্যাকরুম-স্টাফ, ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন- এই গ্রীষ্মে আমরা যেমন করেছি। আমি এখানে এসে এই পুরস্কার নিচ্ছি শুধু আমার কারণে নয়। মাঠে সতীর্থরা না থাকলে, তাদের সহযোগিতা না পেলে এই গ্রীষ্মের পর আমি এখানে আসতাম না। দুই বছর আগে জীবনে একটা কঠিন সময় ছিল আমার। অনেককে পেয়েছিলাম পাশে। আমি জীবিকার জন্য যা করি, আমার কাছে পরিবার তারচেয়েও বড় কিছু। আমার দিন ভাল বা খারাপ যেমনই যাক- তারা সবসময় আমার পাশে থাকে।’ অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন তিনি। ২০১৯ সালে বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হওয়ার দৌড়ে স্টোকসের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ছিলেন ছ’বারের ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন লুইস হ্যামিল্টন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্প্রিন্টার ডাইনা এ্যাশার স্মিথ। ক্রীড়াক্ষেত্রে দারুণ অবদানের জন্য ব্রিটিশ নাগরিক অথবা যুক্তরাজ্যে নির্দিষ্ট সময় খেলা ব্যক্তিদের এ পুরস্কার দেয়া হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে প্রবর্তিত বিবিসি’র করে দেয়া সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় এটি। স্টোকস হয়েছেন বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। আর সেরা ‘স্পোর্টস-মোমেন্ট’-এর পুরস্কার জিতেছে বিশ্বকাপ ফাইনালের সুপার ওভারে মার্টিন গাপটিলকে করা জস বাটলারের রান-আউট দিয়ে ইংল্যান্ডের শিরোপা জেতার মুহূর্তটি। বর্ষসেরা দল নির্বাচিত হয়েছে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী দল। দেশকে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতানোয় গুরুত্বপূর্ণ অবদানই রাখেননি স্টোকস। বিশ্বকাপের স্মরণীয় সেই ফাইনালে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন স্টোকস। এছাড়া গোটা বিশ্বকাপে ৪৬৫ রানের পাশাপাশি ৭ উইকেটও নিয়েছেন তিনি। এরপর এ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টে স্টোকস খেলেছিলেন মহাকাব্যিক ইনিংস। তার অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসে ভর করেই ইংল্যান্ড এক উইকেটে জিতে নিয়েছিল হেডিংলি টেস্ট। সিরিজে সমতায় ফিরেছিলেন জো রুটরা। এ্যাশেজে ব্যাট হাতে ৪৪০ রান করার পাশাপাশি তার ঝুলিতে এসেছিল ৮ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের সঙ্গে যুগ্মভাবে সিরিজের সেরা হন স্টোকস। স্টোকসের বাবা জেরার্ড জেদ জেমস স্টোকস ছিলেন নিউজিল্যান্ড রাগবী দলের খেলোয়াড়। ১৯৮০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত কিউইদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ক্রাইস্টচার্চে জন্ম নেয়া বেন স্টোকস ১২ বছর বয়স পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডেই ছিলেন। এখানেই ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। ২০১৩ সালে বাবা-মা দেশে ফিরলেও বেন স্টোকস থেকে যান ইংল্যান্ডেই। ইয়ন মরগান-জো রুটদের সঙ্গী হয়ে ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত খেলেছেন ৫৯ টেস্ট, ৯৫ ওয়ানডে ও ২৩টি টি২০।
×