ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহান বিজয় দিবসে বাঁধভাঙ্গা গণজোয়ার;###;সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

একাত্তরের গর্জন ॥ যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদমুক্ত দেশ গড়ার শপথ

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

একাত্তরের গর্জন ॥ যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদমুক্ত দেশ গড়ার শপথ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিজয় দিবসে গোটা দেশই মেতে উঠেছিল বাঁধভাঙ্গা বিজয়োৎসবে। নেচে-গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের আনন্দে। বিজয়ের আনন্দ আর নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বত্রই বাঙালীর মনে ছিল এক অন্যরকম বিজয়ের আনন্দ। বাংলাদেশে এ দিন সব ফুল ফুটেছিল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধায়। চারদিকে বিজয়োৎসব। লাল-সবুজের বিজয় নিশান আর ফুল হাতে জনস্রোত সর্বত্র। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির গণজাগরণ আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের তীব্র ঘৃণা ও গণধিক্কার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল এবারের মহান বিজয় দিবসে। সর্বত্রই ছিল মুখে বিজয়ের গান আর যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ। এমন দীপ্ত শপথে সোমবার চারদিকে ছিল নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্মদিনে অন্যরকম এক স্বস্তি ও চেতনায় বিজয়ের উল্লাসে মেতেছিল পুরো জাতি। এক নতুন রূপে ও চেতনায় এবার বিজয় দিবস উদ্যাপন করল দেশবাসী। রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে একাত্তরের মতোই যেন গর্জে উঠেছিল তারা। সারাদেশে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে, ডিসপ্লে, কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে বিজয় উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ঊনপঞ্চাশতম মহান বিজয় দিবসে অহঙ্কার আর অর্জনের বিজয়োল্লাসে মেতে ছিল পুরো বাংলাদেশ। রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব, নিষ্ঠুরতার বিচার করতে পারার তৃপ্তি। বিজয়োৎসবে মাঠে নামা কোটি মানুষের একাত্তরের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত শির আর চোখে ছিল একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণার আগুন। এসব প্রমাণ করে দেয়, সেই রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের প্রতিটি ক্ষণ কৃতজ্ঞ জাতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে না, ভোলেনি। আর ভুলবেও না। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি গভীর শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির মিনার। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পর রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ নিয়ে সোমবার বিজয়ের ৪৮ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ। তবে আনন্দমুখর এ উৎসবে বরাবরের মতো এবারও অন্তঃস্রোত বয়ে গেছে স্বজন হারানোর বেদনা। বিজয় দিবসের নানা আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দোলা দিয়েছে, স্মৃতির ঝাপিতে নাড়া দিয়েছে ইতিহাসের সেদিনের সাক্ষীদের। বাংলাদেশের সোঁদাগন্ধ ময়ী মাটির যে হৃদস্পন্দন সেখানে এই বাংলার প্রতিটি সন্তানের ভিন্ন মাত্রিক সম্পর্ক দেশপ্রেমের দর্শনকে ক্রমাগত শানিত করেছে। ঢাকা থেকে ওঠা রাজাকার-আলবদরমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই দাবি বিজয়ের দিনে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে গোটা দেশে। এভাবেই স্বস্তির পরিবেশে মুক্ত আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো লাখো জনতার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ উচ্ছ্বাস, মহান শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে জাতি পালন করল মহান বিজয় দিবস। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অলি গলি পাড়া মহল্লা রাজপথে বিনা বাধায় দিনভর বেজেছে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণের রেকর্ড আর কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানগুলো। বাঙালী জাতি আনন্দ, বেদনা আর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদকে, স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিবসটির মূল অঙ্গীকারই ছিল পরাজিত জঙ্গীবাদমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিজয় দিবসের কেক কাটেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় সশস্ত্র বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। দিবসটি ঘিরে আলোচনা, সেমিনার, বক্তৃতা ও যুক্তিতর্কসহ সবকিছুতেই ঘুরেফিরে প্রাধান্য পায় জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন এক জন্মভূমির স্বপ্নের কথাও। রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, দোকানপাট, যানবাহন এবং বাসাবাড়িতে পতপত করে উড়েছে লাখো শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকা। ছোট ছোট কাগজ বা কাপড়ের তৈরি পতাকা হাতে নিয়ে বা বুকে-পিঠে লাগিয়ে শিশু-কিশোররা বেরিয়েছিল ঘরের বাইরে। কেউ কেউ মুখে এঁকেছিল লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় দিবসে কোথাও স্বাধীনতাবিরোধী সেই জামায়াত-শিবিরের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত নতুন প্রজন্মের সাহসী পথচলায় এবারের বিজয় দিবসে রাজনৈতিক বিতর্ক বা স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন আস্ফালন ছিল না। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় সূর্যোদয়ের সময় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সোমবার ভোরে বিজয় দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। ভোর থেকেই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ধানম-িতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে নামে জনতার ঢল, সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অন্যদিকে রাজধানী জুড়ে বিজয় দিবস ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। পথে পথে সঙ্গীত, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা এবং সব কর্মসূচীতে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার প্রকাশ পায়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার ছিল সরকারী ছুটি। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক মোহনা জাতীয় ও উৎসব পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। বেতার-টেলিভিশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে দিবসটির মাহাত্ম তুলে ধরা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, শিশুসদন, কারাগার ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল ভোরে কনকনে শীতের মধ্যে কুয়াশায় ঘেরা সাভার স্মৃতিসৌধে নামে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢল। হাতে লাল-সবুজের পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। দেশের শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে ফুলে ঢেকে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের জমায়েতে ছিল বুড়ো থেকে শিশু পর্যন্ত সববয়সীর। ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। সকালের প্রথম প্রহরে ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপ্রতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল তাঁদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতিগণ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিকবৃন্দ শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে স্মরণ করেন একাত্তরের বীর শহীদদের। সাভার থেকে আমাদের সংবাদদাতা অঙ্গন সাহা জানান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের শ্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে ঢল নামে লাখো মানুষের। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। লাল-সবুজের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিয়ে আসা জনতার ¯্রােত বিজয়ের উৎসব-মিছিলে রূপ নেয়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর ও তাদের প্রেতাত্মারা আজও বাংলার মাটিতে বিজয়কে সুসংহত করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী কোন শক্তি এবং তাদের বংশধরদের ব্যাপারে আমাদের কোন আপস নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি কেবল তারাই আওয়ামী লীগ করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে চেতনার ভিত্তিতে আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যে চেতনায় দেশ স্বাধীন করেছিলাম, এই চেতনার ভিত্তিতে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রকে মুক্ত করব ইনশাল্লাহ। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আজকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী, দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে তাঁকে মুক্ত করতে হবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে শান্তি রক্ষায় জামায়াত-বিএনপি চক্রকে নির্মূল করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এই চক্রকে চিরতরে নির্মূল করা না গেলে দেশে আবারও রাজাকার সমর্থিত সরকার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজাকার সমর্থিত কোন সরকার আর আসবে না, তার নিশ্চয়তা অর্জন করাটাই বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য। এছাড়া শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধে ’৭১, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), যুক্তফ্রন্ট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষি পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাকের পার্টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখার সুযোগ করে দেয় ঢাকা জেলা পুলিশ। স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন। সেখানে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য চিত্রসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, কুচকাওয়াজের দৃশ্য ও উন্নয়নের চিত্র। বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে জনতার ঢল নেমেছিল ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই জনতার ঢল নামে সেখানে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল করে ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মোড়ে জমায়েত হতে থাকে। সকাল ৭টার মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে গোটা এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সরকারপ্রধান হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আরও একবার জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে ফুলে ভরে যায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. জাভেদ পাটোয়ারীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপির একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহীদদের সম্মান জানায়। সাংস্কৃতিক শক্তিকে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ‘বিজয়ের অঙ্গীকার, সাংস্কৃতিক অধিকার’ স্লোগান নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বর্ণাঢ্য শোভযাত্রায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণিল এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। রাষ্ট্রের জন্মদিনে মিলনমেলা বঙ্গভবনে বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্মযুদ্ধে বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্তিতে সুরের মূর্ছনা আর নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় রবিবার মুখর ছিল বঙ্গভবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশী কূটনীতিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সমাজের নানা পেশার মানুষের পদচারণা ছিল রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনে। বিজয় দিবসে বরাবরের মতো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, যা মূলত পরিণত হয় মিলনমেলায়। এবারও কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল বঙ্গভবনের সবুজ গালিচায়। বরেণ্য শিল্পীদের দেশাত্মবোধক ও লোকগান, শিশুশিল্পী আর সশস্ত্র বাহিনীর বাদক দলের সঙ্গীতের মূর্ছনা এই আয়োজনের স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে স্ত্রী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল বঙ্গভবনের মাঠে আসেন রাষ্ট্রপতি। এর কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্ত্রী মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বেলুন উড়িয়ে ‘বিজয় উৎসব’ পালন করা হয়। বঙ্গভবনের মাঠ থেকে কয়েকশ লাল-সবুজ বেলুন উড়িয়ে দেয়া হয় নীল আকাশে। লাল-সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি একটি পতাকা অনুষ্ঠানে আনে ভিন্নমাত্রা। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। তারা ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান মাঠের ভিভিআইপি এনক্লোজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিজয় দিবসের কেক কাটেন। কেক কাটার পর তাঁরা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশী অতিথি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পরে মাঠে ঘুরে ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের এই অনুষ্ঠানে ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন ভ্যাটিক্যানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস, যুক্তরাজ্যের দূত রবার্ট ডিকসন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিফা সেপ্পোসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ভারত ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পী শাহীন সামাদ, তিমির নন্দী, ফাহমিদা নবী, বশিরুজ্জামান সাব্বির, অনুপমা মুক্তি ও আবু বকর সিদ্দিক গান গেয়ে শোনান। এছাড়া শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর বিজয়ের উপহার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানাতে প্রধানমন্ত্রী প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নগরীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য উপহার হিসেবে ফুল, ফল এবং মিষ্টি পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রোটকল অফিসার-১ এস এম খুরশিদ-উল-আলম, উপ প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, প্রোটকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু ও সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সোমবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাঁর এই উপহার সামগ্রী হস্তান্তর করেন। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রতিটি জাতীয় দিবস ও উৎসবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ সময় তাঁরা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন। সোমবার বিকেলে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেন। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ সীলমোহর ব্যবহার করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব নুর-উর-রহমান এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র উপস্থিত ছিলেন। স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটাকার্ড ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি করা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য জিপিও ও প্রধান ডাকঘরসহ দেশের সকল ডাকঘরে এ স্মারক ডাকটিকেট পাওয়া যাবে। উদ্বোধনী খামে ব্যবহারের জন্য চারটি জিপিওতে একটি বিশেষ সিলমোহরেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
×