ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ‘আমানত বীমা তহবিল’

ব্যাংকের আছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেই

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

ব্যাংকের আছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে একটি আমানত বীমা তহবিল। দিনে দিনে এই তহবিলে জমার পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, আমানত বীমা তহবিলে জমার পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো এই তহবিলে ৮ হাজার ৩০২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। কোন ব্যাংক দেউলিয়া বা অবসায়িত হলে ওই ব্যাংকের একজন আমানতকারীকে বীমা তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার বিধান রয়েছে। আমানতকারীর বাকি পাওনা দেউলিয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি, ঋণগ্রহীতা থেকে অর্থ আদায়সহ অন্যান্য উপায়ে দেয়ার কথা। ব্যাংকের জন্য এই ব্যবস্থা থাকলেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বীমার ব্যবস্থা নেই। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া বা অবসায়িত হলে গ্রাহকেরা এমন কোন তহবিল থেকে কোন অর্থ পান না। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি ও ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর সেটাও অনেক সময় সাপেক্ষ। সম্প্রতি পিপলস লিজিং অবসায়ন করা হলেও বীমা তহবিলের আওতায় না থাকায় এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা এ ধরনের কোন সুবিধা পাবেন না। আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ১৯৮৪ সালে আমানত বীমা তহবিল গঠন করা হয়। পরে ২০০০ সালে আইন প্রণয়ন করে সরকার। ওই সময়ই আইনটি সংশোধন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বীমা তহবিলের আওতায় আনার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া একজন আমানতকারীকে ফেরত দেয়া অর্থের পরিমাণ ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার প্রস্তাবও অনেক দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। ব্যাংকের এই ব্যবস্থায় বীমা থাকলেও এখনও পর্যন্ত দেশের কোন ব্যাংক দেউলিয়া বা অবসায়ন করা হয়নি। যদিও মাঝে মাঝে কিছু ব্যাংক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। ২০০৭ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অধিগ্রহণ করে আইসিবি ইসলামী নামে পুনর্গঠন করা হয়। গত বছর ফারমার্স ব্যাংকের খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারী ব্যাংকের মূলধন জোগান দিয়ে পদ্মা ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়েছে। ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০-এর আওতায় এই তহবিল পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই আইনের আওতায় ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় আমানতের বিপরীতে প্রিমিয়াম কাটা হয়। আগে আমানতের বিপরীতে প্রিমিয়াম নেয়া হতো। সে সময় প্রতি ১০০ টাকা আমানতে ৭ পয়সা নেয়া হতো। পরে ২০১৩ সাল থেকে ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় ক্যামেলস রেটিংয়ের মানের সঙ্গে প্রিমিয়ামের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ভাল অবস্থানে থাকা ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতে ৮ পয়সা প্রিমিয়াম নেয়া হয়। আরলি ওয়ার্নিং তথা মধ্যম মানের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯ পয়সা এবং সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের ১০০ টাকায় ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম বীমা তহবিলে যুক্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড (ডিআইটিএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুন শেষে আমানত বীমা তহবিলের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের তহবিলের বিনিয়োগ থেকে সুদ বাবদ আয় হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। বাকি ৫৭৪ কোটি টাকা এসেছে ব্যাংকগুলোর দেয়া প্রিমিয়াম থেকে। সব মিলিয়ে গত জুন পর্যন্ত আমানত বীমা তহবিলের ৮ হাজার ৩০২ কোটি টাকা সম্পদের মধ্যে বর্তমানে বিনিয়োগে আছে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বিনিময়যোগ্য সম্পদ রয়েছে ১৮০ কোটি টাকার।
×