ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগে যাচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মা

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগে যাচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার বাজার ধরে রাখতে দেশটিতে ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, যা বেক্সিমকো ফার্মা নামেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে মূলধন নিয়ে দেশটিতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সিলন (প্রাইভেট) লিমিটেড’ নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় আবেদন করার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা হয়েছে। তাতে বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়েছে পিইসি। পিইসি সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেক্সিমকো ফার্মার বিনিয়োগ প্রস্তাবটি এখন বিবেচনার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কমিটির অনুমোদন পেলে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে বিনিয়োগ সম্পন্ন করবে বেক্সিমকো। শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ প্রসঙ্গে করা আবেদনে বেক্সিমকো ফার্মা বলেছে, শ্রীলঙ্কার বাজারে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ওষুধ রফতানি করে বেক্সিমকো ফার্মা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কায় ৯০ লাখ ডলার রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা রফতানি করে ২৩ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার ওষুধ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এর আওতায় স্টেট ফার্মাসিউটিক্যালস ম্যানুফ্যাকচারিং করপোরেশন অব শ্রীলঙ্কার (এসপিএমসি) সঙ্গে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের যৌথ উদ্যোগে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। বেক্সিমকো ফার্মা মনে করে, ২০২১ সালের পর শ্রীলঙ্কার বাজারে ওষুধ রফতানির সুযোগ অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কায় প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে রফতানি হারানোর কারণে যে ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে নিতে চায় বেক্সিমকো। বেক্সিমকো ফার্মার চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার আলী নাওয়াজ স্বাক্ষরিত আবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এসপিএমসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষর করে বেক্সিমকো ফার্মা। চুক্তি মোতাবেক কোম্পানিটিতে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার থাকবে ৭০ শতাংশ, এসপিএমসির ১০ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার স্থানীয় উদ্যোক্তার ২০ শতাংশ। তবে এসপিএমসি ১০ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে কোন অর্থায়ন করবে না। তাই বেক্সিমকো ফার্মাকে মোট ৮০ শতাংশ ইক্যুইটি অর্থায়ন করতে হবে। এসপিএমসি তার ধারণ করা ১০ শতাংশ শেয়ার নির্দিষ্ট সময় শেষে ১ রুপি মূল্যে বেক্সিমকো ফার্মাকে হস্তান্তর করে দেবে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলের জন্য বেক্সিমকো ফার্মাকে ১০০ শেয়ারবিশিষ্ট একটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছিল, যার নাম বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সিলন (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিপিসিএল)। এখনো ওই কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মূলধন পরিশোধ হয়নি। এই কোম্পানির অধীনেই যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ অবস্থায় ৮০ শতাংশ শেয়ারের জন্য দুই বছর সময়সীমার ৬০ লাখ ডলার ইক্যুইটি হিসেবে এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) থেকে নেয়ার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত কোম্পানিটির নেয়া প্রকল্প ঋণ ও পরে প্রয়োজনীয় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণের বিপরীতে করপোরেট গ্যারান্টি প্রদানের অনুমোদন চেয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। বেক্সিমকো ফার্মার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ নবেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বেক্সিমকো ফার্মার নামে পরিচালিত ইআরকিউ হিসাবে স্থিতি থাকা সাপেক্ষে তা থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিয়ে ধাপে ধাপে ৬০ লাখ ডলার বা সমমূল্য শ্রীলঙ্কায় পাঠাতে হবে। অনুমোদিত অর্থ বাংলাদেশ থেকে বিপিসিএলের অনুকূলে বেক্সিমকো ফার্মা তাদের এডি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে পারবে। বিপিসিএলের ব্যাংক হিসাবে অর্থ নগদায়ন করতে হবে। এ অর্থ অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পাঠানো বা জমা করা যাবে না। বিপিসিএলের হিসাবে অর্থ জমা হওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিলাদি রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যাংক সংরক্ষণ করবে। বিপিসিএলে এসপিএমসির ১০ শতাংশ শেয়ারের মূল্য বাবদ বেক্সিমকো ফার্মার অর্থ পাঠানোর আগেই সুনির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ওই ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা এসপিএমসি থেকে বেক্সিমকো ফার্মার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্র দাখিল করতে হবে। শ্রীলঙ্কায় বিপিসিএল কোনো ঋণ গ্রহণের বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ সুবিধা নিতে পারবে না। বেক্সিমকো ফার্মার ধারণ করা শেয়ার হস্তান্তর, বিক্রি বা বিনিয়োগ অবলুপ্ত করা হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রির অর্থ বা অবলুপ্তির ক্ষেত্রে বাকি অর্থ বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে। প্রস্তাব মোতাবেক ব্যবসা করতে করতে না পারলে বিনিয়োগের জন্য বিদেশে পাঠানো অর্থ ফেরত আনতে হবে।
×