ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ ট্রেনে আগুন

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ ট্রেনে আগুন

ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ক্যাবের বিরুদ্ধে রবিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। আইনটির বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রবিবার সকালেই রাস্তায় নেমে আসে। অন্তত পাঁচটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মুর্শিদাবাদ, ফারাক্কা স্টেশন ও হাওড়ার বাউরিয়া ও নলপুর স্টেশনগুলোতে রেল অবরোধ বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। খবর পিটিআই, বিবিসি ও ইন্ডিয়া টুডের। শুধু ট্রেনে আগুন নয়, পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর থেকে গোটা ভারতজুড়ে চলছে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতে আন্দোলনের ডামাডোল ছড়িয়ে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। সে হাওয়া গত শুক্রবারই এসে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গে। তার একদিন পরই আসামের ন্যায় উত্তাল হতে থাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর রাজ্যে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-এনআরসির প্রতিবাদে মমতা নিজেও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এমন ঘোষণায় দ্বিতীয় দিন শনিবার থেকে আন্দোলনের স্রোতে ভাসছে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার পশ্চিমবঙ্গে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। মমতা বলেন, ‘প্রয়োজনে জেলে যাব, তবুও রাজ্যে নাগরিত্ব আইন-এনআরসি হতে দেব না।’ বিক্ষোভকারীরা দফায় দফায় রেল ও সড়ক অবরোধ করে। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তারা। ক্যাবের প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা অসমের গুয়াহাটিতে আহত একজন বিক্ষোভকারী রবিবার মারা গেছেন। বিক্ষোভ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জের ধরে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের গুয়াহাটিসহ ১০টি এলাকায় কার্ফু অব্যাহত রয়েছে। এ বিলের প্রতিবাদে শনিবার ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের ডাকা ‘ভারত বাঁচাও’ সমাবেশ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব আইনের পরে কংগ্রেসের ‘পেট ব্যথা’ করছে। ক্যাব জনবিরোধী নয় আশ্বাস দিয়ে অমিত শাহ বলেন, আমি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে আশ্বাস দিচ্ছি যে তাদের সংস্কৃতি, সামাজিক পরিচয়, ভাষা এবং রাজনৈতিক অধিকারগুলো অক্ষত থাকবে এবং মোদি সরকার তাদের রক্ষা করবে। শনিবার দিল্লীর রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের ‘ভারত বাঁচাও’ সমাবেশে দলটির সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেন, উনি (মোদি) ভারতের অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য একাই যথেষ্ট। ক্যাবের বিরুদ্ধে দেশটিতে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, আমরা এখানে এসেছি এই বার্তা দিতে, কংগ্রেস পিছু হটবে না। আমরা এই জাতি ও আমাদের সংবিধানের মূল্যবোধ বজায় রাখতে আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করব। কংগ্রেসের ভারত বাঁচাও সমাবেশে আরও যোগ দেন দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও। সমাবেশে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। যদি আমরা তা না করি তবে সেই সময় খুব বেশি দূরে নয় যখন এই সরকার ভারতের সংবিধানকে ধ্বংস করে দেবে। তিনি বলেন, আমরা সব জায়গায় ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় দেখতে পাচ্ছি।রবিবার পশ্চিমবঙ্গের পর অসমেও বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের পাশাপাশি বিজেপির নেতাদের বাড়ি এবং রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটের অংশ আসাম গণপরিষদের নেতাদের দফতরের সামনেও বিক্ষোভ করেছে অনেকে। অসমের দেয়ালে দেয়ালে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা হয়েছে। অসমের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও স্লোগান লেখা হয়েছে।
×