ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন বাংলার গানে উদ্দীপ্ত বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

  স্বাধীন বাংলার গানে  উদ্দীপ্ত বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহরজুড়ে ভেসে বেড়াল স্বদেশের গান। কবিতার দোলায়িত ছন্দে উচ্চারিত হলো দেশপ্রেমের কথা। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় উপস্থাপিত হলো যুদ্ধদিনে বাঙালির বীরত্বের অহঙ্কার। শোনা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। এভাবেই স্বদেশের গান-কবিতায় বিজয় দিবসের আগের দিন রবিবার রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। নগরের নানা প্রান্তজুড়ে সুর ও ছন্দে দীপ্ত হলো বিজয় দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানমালা। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের নিয়ে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন সুরকার ও যন্ত্রশিল্পী জাহাঙ্গীর হায়াত খান, কণ্ঠশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, রফিকুল আলম ও অনুপ ভট্টাচার্য। আলোচনায় অংশ নেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত খবর পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম। স্বাধীন বাংলা বেতারের গানে গানে সাজানো ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। সোহেল রহমানের পরিচালনায় ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ও ‘নোঙ্গর তোল তোল’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির নৃত্যদল। এছাড়াও কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের সুরে পরিবেশিত সমবেত নাচ। ‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামের গান শোনান কাদেরী কিবরিয়া। এছাড়া একক কণ্ঠে রূপা ফরহাদ পরিবেশন করেন ‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও, দেখো মানুষের খুনে রক্তিম বাংলা’ মলয় কুমার গাঙ্গুলির কণ্ঠে গীত হয় ‘আরে ও বাঙালি’ তিমির নন্দী গেয়ে শোনান ‘ভেবো না গো মা,’ শাহীন সামাদ পরিবেশন করেন ‘ওরে শোন বাঙালি’, ফকির আলমগীর গেয়েছেন ‘রুখে দাঁড়াও রাখিতে সম্মান’। একক কণ্ঠে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী, মোঃ রফিকুল আলম, ডালিয়া নওশিন, মোঃ রেজাউল করিম, বুলবুল মহলানবীশ প্রমুখ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ‘বিজয়ের অঙ্গীকার সাংস্কৃতিক অধিকার’ স্লোগানে চার দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল রবিবার। এদিন বিকেল থেকে রাত অবধি রাজধানীর নানা প্রান্তের পাঁচটি মঞ্চে হয়েছে বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা। হেমন্তের বিকেলে স্বদেশের গানের সুরের স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আয়োজনটি। ভেসে বেড়ায় রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের আলোড়িত করা সেই গান ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে জাগছে বাঙালিরা, রুখবে তাদের কারা’ গানের সুর। সম্মেলক সঙ্গীতে পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন ভিন্নধারার শিল্পীরা। স্বভূমি শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘আমরা সবাই বাঙালি’। এছাড়াও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন সংস্কৃতি মঞ্চ ও নিবেদন। একক কণ্ঠে মহাদেব সাহা শুনিয়েছেন ‘ও আমার দেশের মাটি’। রিনা ফেরদৌসী গেয়েছেন ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’। এছাড়াও একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কিমিয়া যোয়ারদার, শরণ বড়ুুয়া ও সালমা চৌধুরী। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্রোত আবৃত্তি সংসদ, মুক্তবাক ও শ্রুতিঘর। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন তিতাস রোজারিও, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী ও মিজানুর রহমান সজল। শিশু সংগঠন পরিবেশনা উপস্থাপন করে রঙ্গপীঠ শিশুদল ও শিল্পবৃত্ত। দলীয় নৃত্য পরিবেশন কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় ও মাস্টার মাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিল্পীরা। পথনাটক পরিবেশন করে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী ও আরণ্যক। এর বাইরে জোটের বিজয় রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানট ও ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিধান চন্দ্র বিশ্বাস, ফকির সিরাজ, মাহজাবীন শাওলী ও নিলুফার বানু লিলি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বনন ও স্বরশ্রুতি। একক আবৃত্তি পরিবেশন ডালিয়া আহমেদ, শাহাদাৎ হোসেন ও অনন্যা লাবনী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সুরবিহার, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস ও স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র। পথনাটক পরিবেশন করে বৃত্ত নাট্যদল ও সুষম নাট্য সম্প্রদায়। শিশু সংগঠন পরিবেশনা উপস্থাপন করে কল্পরেখা ও মৈত্রী চিলড্রেন থিয়েটার ট্রুপস। এছাড়াও এদিন রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মঞ্চ এবং দনিয়া ও মিরপুর মঞ্চের বিজয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ৯ ডিসেম্বর থেকে আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আট দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের সপ্তম দিন ছিল রবিবার। এদিনের বৈকালিক আয়োজনে ছিল তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত ব্যান্ড বাদন। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় কিংশুক পার্টিসিপেটারি হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজ ও ভাষানটেক সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ পরিবেশিত নাটক ‘জেরা’। ফরিদ কামিলের ভাবনায় তারিক আনাম খানের রূপান্তরিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। গণগ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ চলচ্চিত্র উৎসব নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে শনিবার থেকে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র উৎসব। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত উৎসবের শিরোনাম ‘ইভ্যালি সেলুলয়েডে ’৭১’। এই উৎসবের মাধ্যমে বিনা দর্শনীতে দর্শকরা দেখতে পাবেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির সঙ্গে থাকবে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা শুরু হয়ে বেলা তিনটা পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। শনিবার সকালে উৎসব উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম মুভমেন্টের সভাপতি দিলদার হোসেন, এস এস কমিউনিকেশনের প্রধান উপদেষ্টা শওকত হাসান মিয়া, গ্রীনল্যান্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু প্রমুখ । প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আ. ক. ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিচয় তুলে ধরা মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক দায়িত্ব। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সহযোগিতায় উৎসবে প্রদর্শন করা হবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এগুলো হলো চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’, আলমগীর কুমকুমের ‘আমার জন্মভূমি’, হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’, নাসির উদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’ ও তৌকির আহমেদের ‘জয়যাত্রা’। এছাড়া উৎসবে প্রদর্শন করা হবে প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’, ‘দেশে আগমন’ ও ‘নট এ পেনি নট এ গান’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্রের প্রতি সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে বিনামূল্যে চলচ্চিত্র দেখে র‌্যাফেল ড্রর মাধ্যমে সঙ্গীসহ ঢাকা-মালয়েশিয়া-ঢাকা, ঢাকা-ব্যাঙ্কক-ঢাকা ও ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা এয়ার টিকেট বিজয়ী হওয়ার সুযোগ রয়েছে এ উৎসবে।
×