ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বালিশকা-ের হোতা সেই ঠিকাদার শত কোটি টাকার মালিক

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

বালিশকা-ের হোতা সেই ঠিকাদার শত কোটি টাকার মালিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৪ ডিসেম্বর ॥ রূপপুরের পারমাণবিক প্রকল্পের বালিশকা-ে দুদকের হাতে গ্রেফতারকৃত সুজানগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ঠিকাদার শাহাদত হোসেন ৮-৯ বছর আগেও বেকার অবস্থায় ঢাকার রাজপথে এখানে সেখানে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতেন। কয়েক বছরের মধ্যেই এমনই আলাদ্দিনের চেরাগের নাগাল পেলেন যে ঢাকা-পাবনায় তিনি শত শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বনেছেন। তিনি পাবনা শহরের এডওয়ার্ড কলেজের পাশে ১৫ কোটি ব্যয়ে হেলিপ্যাডসমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছেন। নিজ গ্রামে বিশাল অট্রালিকা, শত শত বিঘা জমি, মৎস্য খামার, ঈশ্বরদীর শ্বশুর বাড়িতে অট্টালিকাসহ শত শত বিঘা জমি ও ঢাকার মিরপুরে ৬তলা ও ৪তলা পৃথক ২টি ভবনসহ কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিক ও নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্স করেছেন। তার ঢাকাতে অন্তত ২০টি ট্রাক রয়েছে। ঠিকাদার শাহাদত হোসেন বিশাল সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তার উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ কতিপয় প্রভাবশালী নেতার কাছে অতি আপনজন হয়ে ওঠেন। জেলা আওয়ামী লীগের হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ নেতাকে তিনি তার দিকে জাদুর মতো বশে আনেন। বিশাল সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তিনি এতই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন সাধারণ কৃষকের শত শত বিঘা জমি তিনি প্রকাশ্যে দখল করে মাছের খামার গড়ে তুললেও কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করলেও তারা না দেখার ভান করেছেন। সুজানগর উপজেলার মাণিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল মরহুম রমজান শেখের ছেলে শাহাদত হোসেন। শাহাদত হোসেনের অপর দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ও সাখাওয়াৎ হোসেন বিএনপির আঞ্চলিক নেতা। ভাই সাজ্জাদ হোসেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। এ পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতিরবিরোধী হলেও এ আমলেই শাহাদতের কপাল খুলে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজ করতেন তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তার কপাল খুলে যায়। অনুসন্ধানে জানা যায় ক্যাসিনোকা-ের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত ঠিকাদার জি কে শামীমের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে শাহাদাত হোসেনের। জিকে শামীমের হাত ধরে সে ঠিকাদারি কাজ বাগাতে থাকেন। ঠিকাদার জি কে শামীম ছাড়াও এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলেকে পার্টনার করে শাহাদত হোসেন প্রায় হাজার কোটির ঠিকাদারি কাজ হাতিয়ে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় শাহাদত হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশান লিঃ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের ‘গ্রীন সিটি’ প্রকল্পে ৭টি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ পায়। এই কাজের চারটিতে তার সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান। আর এ ভবনের বালিশকা-ে জড়িয়ে ঠিকাদার শাহাদত সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এদিকে তার গ্রামের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঠিকাদার শাহাদতের গ্রেফতারের খবর জানাজানি হলে সাধারণ মানুষ নফল নামাজসহ মিলাদেরও আয়োজন করে। তারা শাহাদতের বিরুদ্ধে শত শত বিঘা জমি জোর করে দখল করে এগ্রো খামার করার অভিযোগ তুলেছেন। জানা গেছে, খয়রান ও গাবগাছি মৌজার শত শত বিঘা পেঁয়াজ চাষের জমি দখল করে পুকুর কেটে শাহাদত এগ্রোখামার করেছেন। গাবগাছি গ্রামের ওহাব শেখ জানিয়েছেন তার ১২ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে শাহাদত হোসেন। রাকসু জিএস যুবলীগ কেন্দ্রীয় সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির রানার জমিও দখল করে নিয়েছে শাহাদত ও তার ক্যাডার বাহিনী। গাবগাছি মসজিদের জায়গা ও শাহাদত হোসেন দখল করেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন।
×