ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা বিনিময়

টাঙ্গাইলে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ট্রাকে বাঁশ পরিবহন

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

টাঙ্গাইলে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ট্রাকে বাঁশ পরিবহন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৪ ডিসেম্বর ॥ সখীপুর উপজেলার বড়চওনা, কালিয়া, কচুয়া ও দেওদীঘি এলাকা থেকে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্পটে স্পটে পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীদের চাঁদা দিয়ে উপজেলার অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী অবাধে বাঁশ পরিবহন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোই মূলত দেশের বাঁশের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কাগজের মিলগুলোও পার্বত্য এলাকার বাঁশের উপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশে ২৩ ধরনের বাঁশ উৎপাদন হয়ে থাকে। এরমধ্যে মধ্যাঞ্চলের পাহাড়ী ও সমতল ভূমিতে উৎপাদিত বোওরা এবং তল্লা বাঁশগুলো সাধারণত টাঙ্গাইল অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে সাধারণ পাঁচটন ট্রাকে ২৫-২৮ ফুট উঁচু করে সাজিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহন করে থাকে। টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঁশ উৎপাদিত হয় সখীপুর ও মধুপুর উপজেলায়। এসব বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জানা গেছে, সখীপুর-গোড়াই, সখীপুর-কালিয়াকৈর, সখীপুর-সিস্টোর, সখীপুরের কচুয়া-ভালুকা সড়কে ট্র্যান্সপোর্ট পাস (টিপি) ছাড়াই স্পটে স্পটে পুলিশ ও বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মীদের চাঁদা দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকযোগে বাঁশ পরিবহন করা হচ্ছে। ওইসব এলাকায় পাঁচ শ’ থেকে ১৫ হাজার পিস ৩০-৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশ ২৫ ফুটের বেশি উঁচু করে প্রতি ট্রাকে সাজিয়ে প্রতিদিন ২৫-৩০টি পাঁচটনী ট্রাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করা হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সখীপুর উপজেলার বড়চওনা, পাথরঘাটা, কালিয়া, কচুয়া এলাকায় সাধারণত ট্রাকে বাঁশ লোড দেয়া হয়। সখীপুর থেকে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে যেতে বিভিন্ন স্পটে প্রতি ট্রাকে কিছু অসাধু পুলিশকে ২-৬ হাজার টাকা ও বন বিভাগের কতিপয় কর্মীদের দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে বাঁশের ওভারলোডিং ট্রাক যাতায়াত করে থাকে। এরমধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে আলাদাভাবে প্রতি ট্রাকে ২-৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বাঁশ পরিবহন খাত থেকে স্থানীয় পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও বন বিভাগের কতিপয় কর্মীরা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বন বিভাগের কর্মীরা বন আইনে মামলা দায়ের করার ভয় দেখায়। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহনের সময় কিছুদিন আগে সখীপুর উপজেলার শোলা প্রতিমা ও প্রতিমাবংকী এলাকায় শরীরে বাঁশ ঢুকে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বাঁশ ব্যবসায়ী শাজাহান, শফি, কালাম, আলতাফ, পাখি মিয়া, হামিদসহ অনেকেই জানান, তারা স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিপিস বড় বাঁশ ১৮০-২৪০ টাকা ও ছোট বাঁশ ৮০-১২০ টাকায় কিনে ট্রাকযোগে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। ওসি আমির হোসেন জানান, বাঁশের ট্রাক থেকে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। বাঁশের ওভারলোডিং ট্রাক যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোঁজখবর নিয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
×