ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী খাতে লিজ দেয়ার পরিণতি

প্রকৃতির ছোঁয়া হারাচ্ছে ফয়’স লেক

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রকৃতির ছোঁয়া হারাচ্ছে ফয়’স লেক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে ফয়’স লেক বেসরকারী খাতে লিজ দেয়ায় প্রকৃতির ছোঁয়া হারাচ্ছে এই আঙ্গিনা। ফলে এই লেকে চিরসুন্দর সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হারিয়েছে দর্শনার্থীরা। কারণ, দর্শনার্থীদের অর্থ ক্ষমতার মধ্যে নেই লেকে প্রবেশাধিকার। জনপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়ার রেকর্ড রয়েছে কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষের। এদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় শুধু পক্ষিশালাই নয় শিশুদের আকর্ষণ কাড়তে কিডস কর্নার খোলা হয়েছে। দর্শনার্থীরা বলছেন, শিশুপার্কেও কির্ডসদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেই। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন একের মধ্যে তিন। অভিযোগ রয়েছে, কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক রেল থেকে লিজ নিলেও চলতি বছর এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রেল কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের লিজ বাতিল করে দিয়েছে। কৃত্রিম স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করায় আদালত রেলের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক রেলকে নীট আয়ের মাত্র তিন শতাংশ মুনাফা প্রদান করে। তবে এরমধ্যে নানা কারচুপির অভিযোগ রয়েছে হিসেবের খাতা নিয়ে। এছাড়াও পাহাড়কেটে বিভিন্ন স্থাপনা যেমন নির্মাণ করেছে কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্ক তেমনি কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কের আওতায় থাকা ফয়’স লেকের প্রবেশ পথে বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কফি হাউসকে ভাড়া দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কাজে সহায়তা করছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী। এদিকে এই হোটেলগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অভিযানের নামে মাসোয়ারা আদায় করছে আকবরশাহ ও খুলশী থানা পুলিশ। এদিকে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক এম এ মান্নানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকায় গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বর্তমানে প্রায় ১০০ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে এই চিড়িয়াখানায়। প্রতিমাসেই এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে এই চিড়িয়াখানায়। তবে ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি হয়। চট্টগ্রাম নগরীতে জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় একটি মাত্র চিড়িয়াখানা হলেও ঢাকার চিড়িয়াখানা থেকে অনেক ভাল ও পরিবেশসম্মত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবয়বে গড়া চিড়িয়াখানাটি ক্রমশ আগতদের মন জয় করে সরকারের আয়বর্ধক প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানার এই পক্ষিশালা ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ৩০ বছরের জীবনে এই প্রথম কোন পক্ষিশালার জন্ম দেশে উদহারণ মাত্র। চট্টগ্রাম ছোট্ট পরিসরে হলেও দেশের কোন চিড়িয়াখানা বা ইকোপার্কে এতবড় পক্ষিশালা নেই। প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ’ রঙ্গিন পাখির সমাবেশ একসঙ্গে করা হয়েছে। প্রাকৃতিক অবয়বে গড়া এই মিনি এভিয়ারি যেন অন্য চিড়িয়াখানার জন্য একটি দিকনির্দেশনা। কৃত্রিমভাবে অবকাঠামো তৈরি করা হলেও প্রথম দেখায় প্রকৃতই মনে হবে। এই পক্ষিশালায় ৬ প্রজাতির ৩৪২টি রঙ্গিন পাখি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের এই পক্ষিশালা প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট লোহার নেটের তৈরি। এই এভিয়ারিতে গাছ গাছালিসহ পাখিদের বসবাসে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় যেন পাখিদের কষ্ট না হয় সেজন্য কৃত্রিম আদলে কলসি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পক্ষিকুলের আবাসস্থল। তবে এই আবাসনে পক্ষিকুল তাদের প্রজনন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে বংশ বৃদ্ধি করতে পারবে। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো তৈরি করে এতে প্রায় ২২ লাখ টাকার পাখি রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে ২০ জোড়া লাভবার্ড, ৫০ জোড়া লাফিং ডাভ, ১০ জোড়া ফিজেন্ট, রিংনেড প্যারোটও রয়েছে ১০ জোড়া, লম্বা লেজের কোকাটেইল রয়েছে ৫০ জোড়া এবং ম্যাকাও আছে একজোড়া। এছাড়াও আরও বেশ কয়েক রকমের পাখি রয়েছে এই পক্ষিশালায়। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব ও হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, শুধু পশুপাখি কেন এ আঙ্গিনায় রয়েছে শিশু কর্নার যেখানে দোলনা, স্লিপারসহ নানা আয়োজন। ফলে শিশুরা বারবার আসতে চায়। এলেও কোন অনীহা নেই তাদের মাঝে। দর্শকের টিকেটের টাকায় এই চিড়িয়াখানার উন্নয়ন অব্যাহত আছে। এর আগে জেব্রা ও সিংহসহ নানা প্রাণী এনে এ চিড়িয়াখানার আকর্ষণ বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা আবারও বর্ণিল আয়োজনে মেতেছে। শিশুদের আকর্ষণে যদিও পক্ষিশালা গড়ে তোলা হয়েছে, মূলত আগতদের আকর্ষণ কাড়বে এই বর্ণিল পক্ষিশালা। আগতরা জানিয়েছেন, পক্ষিশালার ভেতরে শুধু পাখি আর পাখি। সুন্দরী পাখি আর খুদে পাখিরাও ভালবাসার আলিঙ্গনে মিলছে সদা। বন্দীশালায় থাকলেও যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতোই বসবাস। আগতদের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে গুটিকয়েক পাখি ছাড়া বাকি সবগুলো পাখি যেন অচেনা তাদের। বইয়ের পাতায় পাতায় আর এ্যানিমেল ও ডিসকভারি চ্যানেলে দেখা পাখিগুলোর সমাগম ঘটানো হয়েছে এই আঙ্গিনায় এমনটাই বলছেন আগতরা। এক আঙ্গিনায় এত পাখি আগতদের কেউই দেখেনি।
×