ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার

বিজয়ের ফসল পৌঁছে যাক ১৭ কোটি বাঙালীর ঘরে

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

বিজয়ের ফসল পৌঁছে যাক ১৭ কোটি বাঙালীর ঘরে

আজকে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। খেলাধুলায় স্বর্ণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ঘুরছে বিশ্বের আকাশে। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। শিক্ষার হার বাড়ছে। স্বাস্থ্য সেবার অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। গড় আয়ু ৭৩ এ পৌঁছেছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছেÑ যা শুধু স্বাস্থ্য সূচক নয়, এটি সমাজের- দেশের সামগ্রিক অগ্রসরমানতার সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী টিকাদানের সাফল্যের জন্য সম্প্রতি ‘ভেকসিন হিরো’র খেতাব লাভ করেছেন। উন্নয়ন ও অগ্রসরতার অনেক উদাহরণ দেখানো যাবে। পাশের দেশ থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় গেলে ফ্লাইওভার দেখে বিস্মিত হতে হতো। কারণ, কয়েক দশক আগে তারা আমাদের চেয়ে পিছিয়েছিল। কিন্তু আজ ফ্লাইওভার বা অন্যান্য ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিবেচনায় আমাদের হীনম্মন্যতা অনেকটা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। প্রযুক্তির দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে- আইটি সেক্টরে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য দেখিয়েছে, গ্রামের হেল্থ সেন্টার, স্কুল বা ইউনিয়ন কাউন্সিলের অফিসেও প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এরকম অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে উন্নয়নের সপক্ষে প্রমাণ দেখানো যাবে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই উন্নয়ন, এই সাফল্যের যিনি রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সেখানে থেমে যেতে চান না। তিনি এতে পরিপূর্ণ তৃপ্ত নন। শুধু সূচকের মানে উন্নয়নের পরিমাপ করে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেই থেমে যাননি। তিনি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি, যারা উন্নত-সমৃদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়নিÑসেই দেশী-বিদেশী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে নৃসংশভাবে হত্যা করে। ইতিহাসের দীর্ঘপথ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাই আজ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। তিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। প্রতিকূলতা শুধু যে চিহ্নিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির দিক থেকে এসেছে, তা নয়। নিজের দল এবং বাম-ডান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিও সঙ্কট তৈরি করেছেন। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকার ছিল, বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, ৩০ লাখ শহীদ যে বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ কি আমরা এখনও তৈরি করতে পেরেছি? সে লক্ষ্যে এখনও আমরা পৌঁছতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও সবসময় বলে আসছেন- ‘আমরা একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হলো, আমরা এর থেকে অনেক দূরে রয়েছি। শেখ হাসিনা কাজ করছেন। তাঁর দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী কাজ করছেন, মুক্তিযোদ্ধারা কাজ করছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক মানুষ কাজ করছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি না। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাচ্ছেন। দেশের শ্রমিকরা কাজ করে বিদেশে পণ্য রফতানি করছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বিজয় দিবসে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন পূরণে আমাদের সঙ্কটের কথা। সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আজ দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। স্বয়ং সরকারপ্রধান দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এর বাস্তবায়ন চান। তিনি বলেছেন ‘আমার যত আপনই হোক তিনি শুদ্ধি অভিযানের বাইরে থাকবেন না।’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই বিষয়টিতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অতীতে ১৯৭৫ এর পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ সম্ভবত পাকিস্তানী ধারায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে হাঁটি হাঁটি পা পা করে দলকে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরাপর দলকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে করণীয় হলোÑ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়ার জন্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তৈরি করা। সাধারণভাবে বাংলার মানুষ উদার, মানবিক ও শান্তিপ্রিয়। কিন্তু যুগ যুগ ধরে বিজাতীয়দের দ্বারা শাসিত হওয়ার কারণে দুর্নীতির একটি ব্যাধি সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ আমাদের কর্তব্য হলোÑ ’৭১-এর মতো একটি ইস্পাতদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তাঁর কন্যা রয়েছেন, যার নেতৃত্বে আমরা সেই ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে পারিÑ দেশের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য। দুর্নীতি করে জীবন যাপন করার মতো অগৌরবের কাজ আর নেই। উন্নত বিশ্বে মানুষ সাধারণত দুর্নীতি করে না। এমনকি মিথ্যা কথাও বলে না। দুর্নীতি করে জীবন যাপনের জন্য দেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। সৎভাবে, উন্নত শিরে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে বাঙালী পরিচিতি চায়। কারণ, যুদ্ধ করে, অনেক দাম দিয়ে বাঙালী দেশ স্বাধীন করেছে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গর্ববোধ করার জন্য- বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নই লালন করতেন। বিজয়ের এই দিনে ‘শুদ্ধি অভিযানের’ সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিজয়ের স্বাদ ১৭ কোটি বাঙালীর ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এটিই হোক বিজয় দিবসের প্রত্যয়। লেখক : উপ-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×