ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। বুধবার বিকেলের এ মর্মন্তুদ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বারবার মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার খবর আমরা দেখেছি। দগ্ধ ৩৫ জনের মধ্যে সর্বশেষ মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ১৪-তে পৌঁছেছে। মৃতের মিছিল আরও বাড়তে পারে। দগ্ধদের প্রায় সবাই কারখানাটির শ্রমিক। ধারণা করা হচ্ছে, কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এরই শিকার হন অসহায় শ্রমিকরা। ঘটনার পর কেরানীগঞ্জের স্থানীয় এমপি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হাসপাতালে দগ্ধদের দেখতে এসে জানান, ‘কারখানাটির কোন অনুমোদন ছিল না।’ আবাসিক এলাকার মধ্যে অনুমোদন ছাড়াই কারখানাটি গড়ে উঠেছে। তদুপরি এটি ছিল প্লাস্টিক কারখানা। যে কোন কারণে আগুন লাগতে পারে- এমনটা ভেবে নিয়েই ভবনে ও কারখানায় অগ্নিপ্রতিরোধ বা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা অপরিহার্য। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গ্যাস সিলিন্ডার এবং সিগারেটের না নেভানো আগুন থেকে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই বেশি ঘটতে দেখা যায়। ফলে আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা অত্যাবশক। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা মহানগরীর ৯৮ ভাগ ভবন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকই রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। এসব ভবন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আগুন লাগলে ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারী-বেসরকারী কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ নেই। বলাবাহুল্য, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। দেশে ভয়ানক আকারে বেড়ে চলেছে অগ্নি দুর্ঘটনা। সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনা আগের বছরের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত দুই যুগে অগ্নি দুর্ঘটনার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্যমতে শুধু চলতি বছরের প্রথম এগারো মাসে সারাদেশে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২ হাজারের বেশি। হিসাব অনুযায়ী যা গত ২৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এসব অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ২শ’ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, যা একটি দেশে কোনক্রমেই কাম্য নয়। রাজধানীর লালবাগ ফায়ার স্টেশন গত এক বছরে যতগুলো আগুন নিভিয়েছে তার ৭৪ শতাংশই ছিল প্লাস্টিকের কারখানা, গুদাম ও দোকানের। এর মধ্যে প্লাস্টিকের কারখানা প্রায় ৪৮ শতাংশ। কিন্তু এসব কারখানার অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস তেমন কার্যকর কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ওই এলাকায় মাঝে-মধ্যে অগ্নিসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হলেও তার পরিসর খুবই সামান্য। সেগুলো সাধারণ ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলছে না। পোশাক কারখানাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় বৈদেশিক ক্রেতাদের পক্ষ থেকে একটি কারখানায় অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তা সম্পর্কিত পরিদর্শন কার্য পরিচালনা করা হয়। কারখানায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াদি তারা চিহ্নিত করে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এমন পরিদর্শন ব্যবস্থা সব কারখানায় জরুরী। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় কোনভাবেই দাহ্য পদার্র্থের কারবার করতে দেয়া যাবে না। আমরা পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডি দেখেছি। কাছাকাছি এলাকা লালবাগের চুড়িহাট্টার ক্ষতও দেখেছি। আলোচ্য ঘটনা কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার। সতর্ক না হলে এসব ঘটতেই থাকবে। আমরা মনে করি এক্ষেত্রে মালিকদেরই সর্বাগ্রে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরী। কারখানাকে কেবল মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে একই সঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য তারা আরও সজাগ ও সতর্ক হবেন- এমটাই প্রত্যাশা।
×