ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে সড়ক নিরাপত্তা

গাড়িভর্তি যাত্রী নিয়ে নিত্য রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় অদক্ষ কিশোর চালক

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

  গাড়িভর্তি যাত্রী নিয়ে নিত্য রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় অদক্ষ কিশোর চালক

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশে যে তুলনায় যানবাহন বাড়ছে সে তুলনায় চালকের সংখ্যা বাড়ছে না । এমন বাস্তবতায় নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দক্ষ চালক সঙ্কট অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে নিবন্ধিত যানের সংখ্যা সাড়ে ৪২ লাখের বেশি। রাজধানীতে চলে ১৫ লাখ ১৭ হাজারের বেশি যানবাহন। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালক প্রায় অর্ধেক। গাড়ি ও বৈধ চালকের এ অসামঞ্জস্য সামনে রেখেই নতুন সড়ক আইন কার্যকর হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চালক তৈরিতে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত দেশে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন বাধ্যতামূলক তেমন তারা সামাজিকভাবেও সচেতন। ফলে ওসব দেশে দুর্ঘটনাও কম। নতুন সড়ক আইনে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হলেও এর প্রতিবাদ জানিয়েছে মালিক-শ্রমিক সংগঠন। তাছাড়া আমাদের দেশে চালকের পেশা এখনও সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে অনেকটাই অবহেলিত। এই সেক্টরে নিয়োজিতদের নিয়ে নানা বদনাম থাকায় শিক্ষিত বেকার যুবকরা চালকের খাতায় নাম লেখাতে খুব একটা আগ্রহী নন। সেই সঙ্গে মালিক পক্ষের চালক-শ্রমিকরা প্রায় ক্ষেত্রেই নিয়োগপত্র পায় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার নিয়ে দীর্ঘদিন সমালোচনার মুখে দেশের পরিবহন খাত। সব পক্ষের দাবির মুখে নতুন আইন কার্যকর করা হলেও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে বৈধ ও দক্ষ চালকের সঙ্কট। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বছরের পর বছর আশ্বাস দেয়া হচ্ছে চালক সঙ্কট সমাধানের। প্রকৃত অর্থে দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে ঠিক। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দক্ষ চালক বাড়ছে না। ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি ছিল ৫শ’ টাকা জরিমানা বা চার মাসের জেল কিংবা উভয় দ-ের বিধান। অন্যদিকে গত ১ নবেম্বর থেকে কার্যকর নতুন সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা ও শাস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। এক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন চালককে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের জেল কিংবা উভয়দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ১৫ লাখ নিবন্ধিত মোটরযানের বিপরীতে চালক মাত্র ১৪ লাখ। একইভাবে লক্ষাধিক ভারি মোটরযানের বিপরীতে ভারি মোটরযানের লাইসেন্সধারী চালক মাত্র ২১ হাজার। অন্যদিকে সাড়ে পাঁচ লাখ হাল্কা মোটরযানের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা চার লাখের সামান্য বেশি। দেশে মধ্যম ও ভারি দুই শ্রেণীর মোটরযানের ক্ষেত্রেই চালক সঙ্কটের কথা পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে। এমনকি খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গত বছর জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের তুলনায় লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা অর্ধেক। বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরযান রয়েছে ৪২ লাখের বেশি। অন্যদিকে গাড়ি চালাচ্ছেন ২০ লাখের বেশি লাইসেন্সবিহীন চালক। তিন স্তরে চালকের লাইসেন্স বিআরটিএর বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পরীক্ষার পর চালককে প্রথমে হাল্কা মোটরযানের (আড়াই হাজার কেজির কম ওজন) পেশাদার লাইসেন্স দেয়া হয়। তিন বছর হাল্কা মোটরযান চালানোর পর একজন চালক মধ্যম শ্রেণীর মোটরযান (আড়াই থেকে সাড়ে ছয় হাজার কেজি) চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেন। একইভাবে তিন বছর হাল্কা মোটরযান চালানোর পর চালককে ভারি মোটরযান (সাড়ে ছয় হাজার কেজির বেশি) চালানোর জন্য পেশাদার লাইসেন্স দেয়া হয়। বাস-ট্রাক চালাতে প্রয়োজন পড়ে ভারি শ্রেণীর মোটরযান চালানোর লাইসেন্স। চালক সঙ্কটের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, দেশে বাস-ট্রাকের ড্রাইভার সঙ্কট দুই লাখের মতো। বিষয়টি আমরা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে অবহিত করে ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছিলাম।
×