ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

 জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ১৩ ডিসেম্বর ॥ আজ জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবির বাগজানা ইউনিয়নের ভূইডোবা গ্রাম সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা পাঁচবিবি হয়ে জয়পুরহাটে প্রবেশ করে। তারা পাঁচবিবি থানা ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জয়পুরহাটে এসে জয়পুরহাট ডাকবাংলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। এই সময় মুহু মুহু গুলি বর্ষণ করে জানানো হয় বিজয়বার্তা। মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে বিজয়ের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত ঘোষণা হওয়ার পর পরই জয়পুরহাট শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মুক্তিকামী বাঙালীরা বিজয়ের আনন্দে নেমে পরে। আসাদুজ্জামান বাবলু ডাকবাংলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরই জয়পুরহাট সদর থানায় এসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের কড়ই কাদিপুর ও চকবরকত ইউনিয়নের পাগলা দেওয়ানে গণকবরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে। সাভার সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, আজ ১৪ ডিসেম্বর। সাভার মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে পশ্চাদপসারণকারী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার জিরাব এলাকার ঘোষবাগ-গঙ্গাবাগ গ্রামে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের এক গেরিলা গ্রুপের সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। ওই যুদ্ধে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু নামে এক অকুতোভয় অসীম সাহসী কিশোর শহীদ হন। তার লাল রক্তে সাভারের লাল মাটি রঞ্জিত হয়ে সেদিন সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। মানিকগঞ্জের উত্তর শেওতা গ্রামের তৎকালীন রাজনীতিবিদ ন্যাপ নেতা বাবা গোলাম মোস্তফার অনুপ্রেরণায় ২৭ মার্চ টিটু তার অন্য চার ভাই জাহাঙ্গীর, আলমগীর, শাহগীর ও বন্দেগীরের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করার সঙ্কল্পে ভারত যায় প্রশিক্ষণ নিতে। টিটু তখন ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফের বাহিনীতে সে যুক্ত হয়। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় যুদ্ধে দায়িত্ব নিয়ে আসা ‘মানিক’ গ্রুপের সঙ্গে। তখন সাভারের আশুলিয়ার তৈয়বপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটা ক্যাম্প ছিল। ওই ক্যাম্পে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আসতেন। ঢাকা থেকে নৌকায় চড়ে তখন ওই এলাকায় আসতে হতো। ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাকবাহিনীর সদস্য এবং তাদের দোষররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিভিন্ন এলাকায় নাস্তানাবুদ হচ্ছিল। তাই তারা পিছু হটে ঢাকার দিকে ফিরছিল। এ সময় ঢাকা উত্তর গেরিলা ইউনিটের প্রধান শহীদ রেজাউল করিম মানিকের গেরিলা গ্রুপটির মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকার উত্তরাঞ্চলের কোথাও সেতু উড়িয়ে দিয়ে, ব্যারিকেড দিয়ে অথবা রাস্তা কেঁটে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শত্রুবাহিনীর যোগাযোগ বা চলাচলে বিঘœ ঘটানো। এমনই এক অভিযানে ধামরাইয়ের কালামপুরের অদূরে ডাউটিয়া সেতুটি ডিনামাইটের সাহায্যে ধসে দেয়ার অপারেশনে গ্রুপ কমান্ডার মানিকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ১৩ নবেম্বর শহীদ হন। আমতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী থেকে জানান, ’৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বরগুনার আমতলী থানা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। আজ আমতলী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী হটিয়ে আমতলী থানা মুক্ত করেন। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন। আমতলী মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে র‌্যালি ও আলোচনা সভা। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে ॥ স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর হলেও ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আত্রাই হানাদারমুক্ত হয়। আত্রাইবাসীর জন্য এটি একটি স্মরণীয় দিন। একাত্তরে আজকের এই দিনে আত্রাই উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতার সংগ্রামে সাড়া দিয়ে সারাদেশের ন্যায় এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর আত্রাই উপজেলাবাসী আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস আর ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ জয়ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিল উপজেলার আকাশ-বাতাস। এ এলাকা পাকি হানাদার মুক্ত করতে অসংখ্য জীবন বলিদান এবং কত অসহায় মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছিল সেই ভয়াবহ দিনে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানে না। এছাড়াও পঙ্গুত্বের অভিশাপ আর মা-বাবা, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন হারানো অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে এখনও অনেক নারী-পুরুষ বেঁচে আছেন। স্বাধীনতার এতবছর পেরিয়ে গেলেও কেউ তাদের খোঁজ-খবর রাখেনি।
×