ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘মুক্তির কণ্ঠ’

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘মুক্তির কণ্ঠ’

সাজু আহমেদ ॥ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষে’ উপলক্ষে ‘মুক্তির কণ্ঠ’ নামের নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। জহির আহমেদের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা ও নির্দেশক, ড. চঞ্চল সৈকত। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন ড. চঞ্চল সৈকত, হাসান হারুন, হেলেন হাসান, দীপান্তিতা, রুবেল, শাহানুর, আফিফ, আদর ভূইয়া, ফারদিন, জহির আহমেদ, ফাইয়াদুজ্জামান তামিমসহ আরও অনেকে। নাটকের সেট ডিজাইন, পোশাক পরিকল্পনা, মঞ্চ সজ্জা, আলোক পরিকল্পনা ও রূপসজ্জা পরিকল্পনা করেছেন ড. চঞ্চল সৈকত। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন ফাইয়াদুজ্জামান তামিম। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে নাকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। নাটকের গল্পে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর মুখের প্রতিটি কথাই ছিলো এ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য। তিনি বাঙালীদের অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া আর কিছুই নিয়ে ভাবতেন না। পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বুঝে ফেলেন ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুও বোঝেন বাঙালীদের মনের কথা। তিনি জানতেন বাঙালীরা মুখিয়ে আছে, একটি নির্দেশের অপেক্ষায় আছে, সেই নির্দেশ হলো পাকিস্তানী হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের কাছে বাঙালীর করণীয় ঠিক করে দিলেন। ঢাকা শহরসহ সমগ্র দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। দেশের যুবকরা অনুপ্রাণিত হলো দেশের জন্য জীবনদানে। আজাদ ও তার বন্ধু রফিক ও সুজন প্রতিনিয়ত ঢাকার খবর রাখতে শুরু করল। তারা নিজেদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বঙ্গবন্ধু তার নিজ কণ্ঠে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এটাই ওই শাসকের হাত থেকে বাঙালী জাতির ‘মুক্তির কণ্ঠ’। এই কণ্ঠস্বরই পাকিস্তানীদের আতঙ্ক এবং বাঙালীদের বিজয়ের বার্তা। ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের সংবাদ নিয়ে আসে ঢাকার বিখ্যাত সাংবাদিক আলতাফ। তিনি নিজের সেফটি বিবেচনা করে কিছু দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে আসেন, গ্রামের বাড়ি এসে জানতে পারেন এক সময়ের কুখ্যাত ডাকাত এখন গ্রামে মোল্লাগিরি করছে, রাজাকারি করছে। ইতোমধ্যেই কুখ্যাত রাজাকার সুরুজ মুন্সীর ইশারায় হত্যা করা হয় সাংবাদিক আলতাফকে। একের পর এক গ্রাম আক্রমন করে পাকবাহিনী। গ্রামের সাধারণ মানুষ নিজের জীবন নিয়ে সব ছেড়ে পালিয়ে যায় আর সেই ফেলে যাওয়া সম্পদ দখল করে রাজাকারের দল। আজাদও তার দেশের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করে, তাদের নিরস্ত্র হাতকে এক শক্তিশালী হাতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর বলে যাওয়া ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ আজাদের মনে এক ঐশ্বরিক শক্তি আসে। এদিকে একের পর গ্রাম আক্রমণ করতে থাকে পাক বাহিনী। দেশের নামকরা বুদ্ধিজীবী আসাদ সিদ্দিকীকে হত্যা করে তার একমাত্র মেয়ে রোকেয়ার ইজ্জত সম্মান নষ্ট করতে না পেরে তাকে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয় সুরুজ মুন্সী। আজাদ চোখের সামনে এসব নির্মম অত্যাচার দেখে আর নিজেকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আজাদ সিদ্ধান্ত নেয় দেশের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেবে। গ্রামের ভেতর গড়ে ওঠা পাকবাহিনীর ক্যাম্পে গেরিলা হামলা করে আজাদ ও তার সঙ্গীরা। গেরিলা হামলায় আজাদসহ সবাই নিহত হয়। একটি জাতির যুবকরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে। দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তে জন্ম নেয় এক নতুন বাংলাদেশ। বাঙালী যখনই কোন কালো অন্ধকারের মধ্যে নিপতিত হয়েছে তখনই আলোর বার্তা হিসেবে একটি বজ্র কণ্ঠ দেব দূতের মতো বাঙালীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাঙালীকে দেখিয়েছে সাম্য, স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ। এ বজ্রকণ্ঠ নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ নির্দেশ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে, রেসকোর্স ময়দানে দেয়া জাতির জনকের ভাষণই ছিল এদেশের মানুষের মুক্তির কণ্ঠ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলাদেশ সৃষ্টি থেকে আজ অবধি এই একটি ভাষণই বাংলাদেশের মানুষকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। শোষকের সমস্ত অন্যায়, সমস্ত ষড়যন্ত্র, সমস্ত অবিচারকে রুখে দিয়ে শোষিতকে করেছ মুক্ত, করেছে স্বাধীন। ‘মুক্তির কণ্ঠ’ নাটকটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত। মুক্তিযুদ্ধের নাটক সম্পর্কে নির্দেশক ড. চঞ্চল সৈকত বলেন, আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে জন্ম আমার। ছোট বেলায় পিতা মাতার কাছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বহুবার শুনেছি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহুবার নাটক মঞ্চস্থ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গান করে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ না দেখার একটা আক্ষেপ তো রয়েছে বয়সে ছোট থাকার কারণে তাই এবার বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে জাতির বিবেককে নাড়া দিতে আমরা মঞ্চস্থ করছি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে নাটক ‘মুক্তির কণ্ঠ’। মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্দেশনা দিতে পেরে আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ দেশের জন্য ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদান এবং তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জত হারানোর বেদনার সঙ্গী হতে এবং সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং সাতই মার্চের ভাষণই আমাকে মুক্তিযুদ্ধের এই নাটকটি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। এই নাটকটি একজন মেথর মহিলার দেখা সত্য ঘটনা ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ কেন্দ্র করে রচিত।
×