ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীন ও মার্কিন দ্বন্দ্বের গ্যাড়াকলে ইন্টারনেট

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

  চীন ও মার্কিন দ্বন্দ্বের গ্যাড়াকলে ইন্টারনেট

হিউনজিন সিয়ো গত বছর জুলাইয়ে বেজিং ভ্রমণে গিয়ে তার স্মার্টফোনে গুগল নিউজে স্ক্রল করে শহরের মার্কিন দূতাবাসে এক হামলার বিষয়ে কয়েকটি রিপোর্ট দেখতে পান। কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিয়ো চীনের কঠোর ডিজিটাল মিডিয়া সেন্সরকে পাশ কেটে যান এবং তার মার্কিন ফোন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পরিকল্পনার প্রতি ধন্যবাদ জানান। ফোন প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণে তিনি প্রবেশের সুযোগ পান গুগলের মতো ওয়েবসাইটে যা চীনে নেই। বিবিসি। অধ্যাপক সিয়ো বলেন, আমি মার্কিন দূতাবাসের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনা বিষয়ে আমার চীনা বন্ধুদের বলছিলাম। তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। কারণ সংবাদটি তাদের সার্চ ফিড্্সে আসেনি। সিয়ো ডিজিটাল মিডিয়া বিষয় পড়ান। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও সফট পাওয়ার নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতার বিষয়ে বিবিসি নিউজের ওপর ইন- ডেপথ কভারেজে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দেশ বেশ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে ইন্টারেনেটের ওপর অত্যন্ত কড়াকড়ি ও সেন্সর রয়েছে। নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে যে, ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ইন্টারনেটের আবির্ভাব হতে পারে। একটি নেতৃত্বে থাকবে চীন এবং অন্যটির যুক্তরাষ্ট্র। গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক শিমিট গত বছর মন্তব্যটি করেছেন। ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে এক অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন নিয়মবিধির সঙ্গে বিভিন্ন সাব-ইন্টারনেটে বিভক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে শিমিট বলেন, আমি মনে করি, আজকের দৃশ্যপটের কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু তিনি বলেন, ইন্টারনেট বরং চীন নেতৃত্বাধীন ইন্টারনেট ও আমেরিকার নেতৃত্বে অচীন নেতৃত্বাধীন ইন্টারনেট। এ দুটি শাখায় বিভক্ত হবে। শিমিট বর্তমানে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি এ্যালফাবেটের একজন বোর্ড সদস্য। ডিজিটাল সীমার মধ্যে নেটওয়ার্ক সেন্সর করার জন্য চীন সরকারের কর্মসূচী গ্রেট ফায়ারওয়ালের কারণে এ ধরনের বিভক্তি এর মধ্যেই স্থান করে নিচ্ছে। চীনের নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা জনপ্রিয় সাইটগুলোর মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, ড্রপবক্স বা পিন্টারেস্টে প্রবেশ করতে পারেন না। তারা অনলাইনে তিয়ান আনমেন স্কয়ারে নৃশংস হত্যাকা-ের তথ্য বা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা পড়তে পারেন না। নেটওয়ার্কের সেন্সরশিপ মানে বিদেশের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষতি যদি ওই ব্যবসায়ীরা চান বিশ্বে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম চীনে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করবেন। চীনে এ্যাপল সার্ভিস ও এর পণ্য লভ্য। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বিশাল প্রযুক্তি কোম্পানির কর্মকান্ড নিয়ে চীনের বাজারে বিরোধের সৃষ্টি হয়। চীন ২০১৭ সালে এ্যাপলকে এর এ্যাপ স্টোর থেকে নিউইয়র্ক টাইমস ও স্কাইপে এ্যাপ থেকে প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেয়। এ্যাপল নির্দেশ মেনে নেয়। গুগলও চীনে কোনরকমে কর্মকান্ড চালাচ্ছে এবং তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, গুগল চীনের বাইদুর বিরুদ্ধে মার্চ ইঞ্জিনের ভাষ্যে গোপনে কর্মকান্ড চালাচ্ছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ ওয়াচডগ ফ্রিডম হাউসের উচ্চপদস্থ চীনা গবেষণা বিশ্লেষক সারাহ কুক বলেছেন, হাউসের বার্ষিক রিপোর্ট ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট’ এ বলা হয় ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে চীনের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক চীনা জনপ্রিয় সংস্কৃতির সহকারী অধ্যাপক রেনবেন ইয়াং বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বৈধতার সঙ্গে সম্পৃক্ত এ সেন্সরশিপ। চীনা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গুগল ও হোয়াটসএ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু চীনের সমকক্ষ বাইদু ও উইচ্যাট ব্যবহার করেন।
×