ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারলেন না তামিম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারলেন না তামিম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চলতি বছরের শুরুটা দারুণ ছিল। নিউজিল্যান্ড সফর ও আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজটাও দুর্দান্ত কেটেছিল তামিম ইকবালের। কিন্তু ছন্দপতনের শুরু জুনে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে। গড়পড়তা একটি পারফর্মেন্স দেখিয়ে দারুণভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন ও ভক্ত-সমর্থকদের কাছে চরমভাবে সমালোচিত হন এ বাঁহাতি ওপেনার। সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিশ্বকাপ পরবর্তী শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে সিরিজেও। বাধ্য হয়ে দীর্ঘ বিশ্রামে চলে গিয়েছিলেন, ক্রিকেটে ফিরে আসেন জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) আসরে। একটিই মাত্র ম্যাচ খেলে দুই ইনিংসে ৩০ ও ৪৬ রান করেছিলেন। গত মাসে ভারত সফরের টি২০ ও টেস্ট দলে আবার ফিরেছিলেন কিন্তু পারিবারিক কারণে সরে দাঁড়ান তিনি। অবশেষে আবার ফিরেছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) শুরু থেকেই। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গতে পারেননি তামিম। দীর্ঘদিন পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে সাজঘরে ফিরে গেছেন মাত্র ৫ রান করে। দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের রান খরা দেখতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে দর্শকরা এসেছিলেন তাদের হতাশায় ডুবতে হয়েছে আরেকবার। অথচ বছরের শুরুতেই পূর্ববর্তী বিপিএলের ফাইনালে অপরাজিত ১৪১ রানের ইনিংস খেলে শেষ করেছিলেন গত ফেব্রুয়ারিতে। এ বছর আর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যস্ততা নেই বাংলাদেশ দলের। বঙ্গবন্ধু বিপিএল দিয়েই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের এ বছরের ক্রিকেটীয় কর্মকা-। সেই বছরটার শুরু মধুর হলেও শেষটা ব্যর্থতার বিষাদে ভরপুর তামিমের জন্য। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা। সেই সফরে দুই টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তামিম। চার ইনিংসে তার রান ছিল ১২৬, ৭৪, ৭৪ ও ৪। বছরে আর কোন টেস্ট খেলেননি তিনি। ৬৯.৫০ গড়ে ২৭৮ রান এ বছর টেস্টে, পরিসংখ্যানটা দারুণ পারফর্মেন্সেরই স্পষ্ট উদাহরণ। তবে ওই সফরের ৩ ওয়ানডেতে পুরোপুরি ব্যর্থ তামিমের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫, ৫ ও ০ রান। এরপর মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে সেই ব্যর্থতা ঢেকেছেন খুব ভালভাবেই। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবমিলিয়ে ৪ ওয়ানডেতে তিনি করেন- ৮০, ২১, ৫৭ ও ১৮ রান। সার্বিকভাবে বছরের প্রথম অর্ধভাগ পর্যন্ত তামিমের ব্যাটিং পারফর্মেন্সটা বেশ ভালই ছিল। তবে ছন্দপতনের শুরু হয় বিশ^কাপ থেকে। দলের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হয়েও ভাল কিছু উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। জুন-জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে- ১৬, ২৪, ১৯, ৪৮, ৬২, ৩৬, ২২ ও ৮। বিশ্বকাপের এই বাজে পারফর্মেন্সের পর শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলতে যান তামিম। সেখানে তার পারফর্মেন্স ছিল আরও ভয়াবহ রকমের। তিন ম্যাচে করেন ০, ১৯ ও ২ রান। এরপর আর এ বছরে কোন ওয়ানডে ম্যাচ ছিল না বাংলাদেশের। ১৮ ওয়ানডেতে মাত্র ২৪.৫৫ গড়ে ৩ ফিফটিতে ৪৪২ রান করতে পেরেছেন দেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তামিম। অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় অর্ধভাগটা একেবারেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে কেটেছে এ বাঁহাতির। টানা ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেট থেকেই সাময়িক বিরতিতে যান তামিম। দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ও ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজও খেলেননি। তবে নবেম্বরে ভারত সফরে ফেরার জন্য এনসিএলে খেলায় ফেরেন। সেখানেও এক ম্যাচ খেলে বড় ইনিংস উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ৩০ ও ৪৬ রান করেন দুই ইনিংসে। তবে ভারত সফরের টি২০ ও টেস্ট দলে ফেরেন তামিম। শেষ পর্যন্ত সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে সফরে আর যাননি। দীর্ঘ সময় প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকায় এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের জন্য প্রস্তুত হতে বেশ আগে থেকেই অনুশীলন শুরু করেন তামিম। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই আবার সেই ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী থাকলেন। আবু জায়েদ রাহীকে দারুণ একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন, কিন্তু সেটাকে আর ১ রানের বেশি বড় করতে পারেননি। ৫ রানেই সাজঘরে ফিরে গেছেন রাহীর বলেই সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে। আগামী বছরের প্রায় শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আছে। এর মধ্যে বছরের শেষভাগে টি২০ বিশ্বকাপ এবং বছরজুড়েই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট খেলতে হবে। আগামী বছর ৯ টেস্টে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো তিনটি বড় দল ছাড়াও জিম্বাবুইয়ে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এছাড়া ৬ ওয়ানডে ও প্রায় ২৪ টি২০ ম্যাচ আছে। এ কারণে চলতি বিপিএল বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। টানা ব্যর্থতার কারণে এই আসরে ভাল করার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন এমনকি তামিমও। অতীত পরিসংখ্যানের বিচারে তিনি হয়তো নিয়মিত সদস্য হিসেবেই জাতীয় দলে থাকবেন, কিন্তু বিপিএলে ছন্দে ফিরতে না পারলে আত্মবিশ্বাস থাকবে তলানিতে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার সেই লড়াইয়ে টি২০ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন বৃহস্পতিবার ঢাকা প্লাটুনের হয়ে। কিন্তু রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে আবারও ব্যর্থ হলেন। ওয়ানডে ব্যর্থতার পর এখন টি২০ ক্রিকেটেও কি ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকবেন তামিম? নাকি ফিরে আসতে পারবেন স্বরূপে? অনেকগুলো পরীক্ষাই দিতে পারবেন তিনি চলতি বঙ্গবন্ধু বিপিএলে। বাঁহাতি এই ওপেনারের ফেরার আশায় থাকবে সবাই। কারণ টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা গত বিপিএলের ফাইনালেই খেলেছিলেন তিনি। ৬১ বলে ১০ চার, ১১ ছক্কায় করেছিলেন অপরাজিত ১৪১ রান। বছরও পেরোয়নি সেই ইনিংসটার পরে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুরেই খেলেছিলেন বাংলাদেশীদের মধ্যে সেরা সেই টি২০ ইনিংস।
×