ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাজাইয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ঢাকাকে উড়িয়ে দিল রাজশাহী

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

জাজাইয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ঢাকাকে উড়িয়ে দিল রাজশাহী

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথমদিনটি কি উত্তেজনাময় হয়েছে। মারমুখী, ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে জমজমাট হয়েছে। দুটি ম্যাচেই বড় স্কোরের দেখা মিলেছে। অথচ দ্বিতীয়দিনের প্রথম ম্যাচটিই ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেছে। এরপরও ম্যাচে খানিক প্রাণ এনে দেন আফগান ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাই। তার অপরাজিত ৫৬ রানের ব্যাটিং ধামাকায় মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা প্লাটুনকে উড়িয়ে দিয়েছে আন্দ্রে রাসেলের রাজশাহী রয়্যালস। ৯ উইকেটের বড় জয়ও তুলে নিয়েছে রাজশাহী রয়্যালস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ঢাকা প্লাটুনকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রাজশাহী রয়্যালস। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৪ রান করে। এক এনামুল হক বিজয় (৩৮) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। রাজশাহীর আবু জায়েদ রাহী ২ উইকেট নিলেও ঐক্যবদ্ধ বোলিং নৈপুণ্য মিলেছে। তবে রাজশাহীর ফিল্ডিংয়ের সময় নজর কেড়েছেন রবি বোপারা। তিনি ঢাকার তিন ব্যাটসম্যানের (জাকের আলী, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান) রান আউটে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বল ধরেই দ্রুত বল সঠিক জায়গায় ছুড়ে মারতেই আউটগুলো হয়। তাতে ঢাকা প্লাটুনও বিপদে পড়ে। আর শহীদ আফ্রিদিকে তো টিকতেই দেননি বোপারা। এমন জৌলুস নৈপুণ্য দেখানোর ম্যাচের সেরাও হন বোপারা। জবাব দিতে নেমে জাজাইয়ের সঙ্গে লিটন কুমার দাস (৩৯) ও শোয়েব মালিকের (৩৬*) ব্যাটিং ঝলকে সহজ জয় পায় রাজশাহী রয়্যালস। ১ উইকেট হারিয়ে ১৮.২ ওভারে ১৩৬ রান করে জিতে রাজশাহী রয়্যালস। হযরতুল্লাহ জাজাই ও লিটন কুমার দাস শুরু থেকেই স্লো খেলতে থাকেন। টার্গেট কম। তাই উইকেট না হারিয়ে বড় জয় পাওয়ার ভাবনাই থাকে। দুইজন মিলে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। এমনই অবস্থা হয়, ১০ উইকেটে জিতে যেতে পারে রাজশাহী প্লাটুন, সেই ভাবনাও হয়। দলের যখন ৬২ রান হয় তখন লিটনের (৩৯) উইকেট শিকার করে নেন স্পিনার মেহেদী হাসান। এরপর আর কোন উইকেটের পতন ঘটেনি। জাজাই এমনই মারমুখী হয়ে ওঠেন, শহীদ আফ্রিদির তৃতীয় ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান। ১৫তম ওভারেই ১০০ রান করে ফেলে রাজশাহী। জাজাই-মালিক মিলে দ্রুতই ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। ওয়াহাব রিয়াজের করা ১৭তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জাজাই ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ওয়াহাবেরই করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রাজশাহী রয়্যালসকে জিতিয়ে মাঠও ছাড়েন জাজাই। ৪৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৫৬ রান করেন। শোয়েব মালিকও ৩৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। দুইজন মিলে ৭৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান। মাশরাফি দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে উইকেটশূন্য থাকেন। ঢাকা প্লাটুন আকর্ষণ কুড়াতে পারেনি। এমনকি দলের ব্যাটসম্যানরাও আকর্ষণীয় কিছু করে দেখাতে পারেননি। তামিম ইকবাল অনেকদিন পর ব্যাট হাতে নামেন। বিশ্বকাপের পর জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। সেই সফর শেষ হওয়ার পর অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লীগের একটি মাত্র ম্যাচ খেলেন। বৃহস্পতিবার বিপিএলের মাধ্যমে আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে নামেন। মাঝপথে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলেননি। ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেননি। নিজেকে ফিরে পেতে ছুটি নিয়ে বিশ্রামে ছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে টি২০ কিংবা টেস্ট সিরিজও খেলেননি। পারিবারিক কারণে ছুটি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে না খেললেও নিজেকে প্রস্তুত করে চলেছিলেন তামিম। বিপিএলে খেলতে নামার আগে সবার আগে অনুশীলনও শুরু করে দেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। তামিমের আউটের ধাক্কা যেন পুরো দলেই পড়ে। ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। দলের ১৫ রানে তামিম আউটের পর ৩৯ রানে লরি ইভান্সও (১৩) সাজঘরের পথ ধরেন। তৃতীয় উইকেটে গিয়ে যদি বিজয় ও জাকের আলী মিলে ৩৯ রানের জুটি না গড়তেন তাহলে হয়তো ১২০ রান করাই ঢাকা প্লাটুনের কঠিন হয়ে পড়ত। শেষে গিয়ে নবম উইকেটে বিশ্বকাপের পর আবার ম্যাচ খেলতে নামা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ওয়াহাব রিয়াজ মিলে ২৩ রানের জুটি গড়াতেই দল ১৩৪ রানে যেতে পারে। মাশরাফি শেষ পর্যন্ত ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। জাকের ২১ ও ওয়াহাব ১৯ রান করেন। কোন হাফ সেঞ্চুরির দেখা মিলেনি। তবে বিজয়, জাকের, ওয়াহাব, মাশরাফির ছোট্ট ছোট্ট ইনিংসগুলোই ঢাকাকে একটু এগিয়ে নিয়ে যায়। যদি তিনটি রান আউট না হতো তাহলে হয়তো আরও ভাল কিছু মিলতে পারত। বিদেশী দুই অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা ও শহীদ আফ্রিদি তো প্রথম ম্যাচে হতাশই করেছেন। আফ্রিদি রানের খাতা খোলার আগে আউট হতেই সব ফরমেটের ম্যাচ মিলিয়ে ১০০তম ম্যাচে শূন্যতেই আউট হন। আসরের প্রথমদিন দুই ম্যাচই জমেছে। রানের ফোয়ারা দেখা গেছে। মোহাম্মদ মিঠুন, ইমরুল কায়েস, দাসুন শানাকা যে মারমুখী ব্যাটিং দেখিয়েছিলেন তা লীগের দ্বিতীয়দিন প্রথম ম্যাচে উধাও হয়ে গেছে। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের পর দর্শকরা একটু মাঠমুখী হন। কিন্তু ঢাকা প্লাটুনের ব্যাটিং হতাশাই ছড়িয়ে দেয়। এবার বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশনে খেলতে নেমে ঢাকাও প্রথম ম্যাচেই হার দেখে। জাজাইয়ের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১০ বল হাতে থাকতেই ঢাকা প্লাটুনকে হারিয়ে রাজশাহী রয়্যালস শুভ সূচনা করে। স্কোর ॥ ঢাকা প্লাটুন-রাজশাহী রয়্যালস ম্যাচ- মিরপুর টস ॥ রাজশাহী রয়্যালস (ফিল্ডিং)। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ১৩৪/৯; ২০ ওভার; তামিম ৫, বিজয় ৩৮, ইভান্স ১৩, জাকের ২১, থিসারা ১, আরিফুল ৫, আফ্রিদি ০, মেহেদী ৬, ওয়াহাব ১৯, মাশরাফি ১৮*, হাসান ০*; রাহী ২/৪৩, ফরহাদ ১/১৪, বোপারা ১/১৫, কাপালী ১/১৮, তাইজুল ১/২৩। রাজশাহী রয়্যালস ইনিংস- ১৩৬/১; ১৮.২ ওভার; জাজাই ৫৬*, লিটন ৩৯, মালিক ৩৬*; মেহেদী ১/২৩। ফল ॥ রাজশাহী রয়্যালস ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রবি বোপারা (রাজশাহী রয়্যালস)।
×