ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

সদ্যজাত শিশু ও মায়ের সুরক্ষা

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

সদ্যজাত শিশু ও মায়ের সুরক্ষা

মাতৃত্বের চিরায়ত বোধ যে কোন মেয়ের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সেই পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে যে স্বপ্ন শিশু কন্যাটিকে উৎসাহিত করে তোলে সেখান থেকে তৈরি হয় মাতৃত্বের অপার সম্ভাবনা। স্বপ্ন বুননের যাত্রা পথ নির্বিঘœ আর অবারিত হলেও সেটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো অত সহজ ব্যাপার নয়। পশ্চাদপদ রক্ষণশীল সমাজের কন্যা সন্তান মানেই সংসার আর সংস্কারের বোঝাই শুধু নয় অভিশাপও বটে। আমাদের সমাজ সমতাভিত্তিক বলয় তৈরিতে অনেকটা এগিয়ে এলেও অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগও এখন অবধি ঠেকানো সম্ভব নয়। যদিও সংখ্যায় তা কমে আসছে। ফলে বাল্য বিয়ের প্রকোপ এখনও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে। বাল্য বিয়ে মানেই অকাল মাতৃত্ব। যা কোন বালিকার শারীরিক আর মানসিক বিকাশের এক পর্বতপ্রমাণ প্রতিবন্ধকতা। একজন অপ্রাপ্তবয়স্কা কিশোরীর যখন হেসে খেলে মায়ের কোলে তার জীবন গড়ার বিভিন্ন সূচকগুলো নিয়ে ভাবার কথা তেমন যুগসন্ধিক্ষণে সে যদি বিয়ের পিঁড়িতে বসে অন্য খানে যাত্রার পথে এগিয়ে যায় সেখানে কতটুকু তার মঙ্গল আর কল্যাণ নিহিত সে ব্যাপারে ভাববার অবকাশও থাকে না অভিভাবকদের। ফলে যে কন্যা সন্তানটির শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা অত্যন্ত জরুরী ছিল সেখানে তাকে পাত্রস্থ করে পরের সংসারে পাঠানো বাবা-মায়ের এক ধরনের দায়বদ্ধতা। বলা বাহুল্য পিতা-মাতারও কোন বিকল্প পথ খোলা থাকে না মেয়েকে প্রচলিত সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে অন্য কোন আলোকিত জগতের পথ দেখানো। তাই এখনও সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়ে আসে বাল্য বিয়ের করুণ ঘটনা। তবে আশ্বস্ত করার বিষয়ও ঘটছে অন্য রকম সাহসিক পদক্ষেপে। অনেক মেয়ে নিজেই তার বিয়েকে ঠেকানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে এবং সফলও হচ্ছে। এ কথা অবধারিত যে নিজের মুক্তির পথে আত্মশক্তি নিবেদন করাই যৌক্তিক এবং কাক্সিক্ষত। তাই বাল্য বিয়ের অশুভ কার্যক্রমকে দৃপ্ত মনোবলে অস্বীকার করে সেখান থেকে বের হয়ে আসা অনেকেই এখন শিক্ষার মাধ্যমে নিজের ভাবী জীবনকে সংহত করতে এগিয়ে আসছে। এখানেই প্রত্যাশা এবং আকাক্সক্ষার বিষয় যে মেয়েরা নিজেই বুঝতে পারছে কোথায় তার মঙ্গলই শুধু নয় পৌঁছানোর ঠিকানাও আপন শক্তিতে তৈরি করে নিতে হবে। মাতৃত্বের আকাক্সিক্ষত জগতকে স্পর্শ করতে গেলে সবার আগে ভাবতে হবে তার শরীর ও মনের স্বাভাবিক পরিপক্বতা যা তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো থেকে শুরু করে সন্তান ধারণ ক্ষমতায় কতখানি জায়গা দিতে পারে। তাই মা হওয়ার আগ অবধি তার প্রস্তুতি প্রয়োজন ভেতর এবং বাইরে থেকেও। একজন মেয়ে যখন আকাক্সিক্ষত মাতৃত্বের সম্ভাবনায় পুলকিত হয় তেমন সুবর্ণ সময়ে গর্ভের সন্তানও নিজের সুরক্ষা দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সেটা যেমন গর্ভবতী মায়ের দিক থেকে একইভাবে পারিবারিক পরিবেশেও তাকে সুরক্ষা দেয়া সচেতন দায়বদ্ধতা। এ সময় সবচেয়ে বেশি যতেœর দরকার প্রসূতির। কারণ মা যদি হরেক রকম বিপন্নতার শিকার হয় তাহলে জঠরে তিল তিল করে তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র প্রাণীটির সমূহ বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই মায়ের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি গর্ভের সন্তান বেড়ে উঠতে নিয়মিত শক্তি। পারিপার্শ্বিক শুদ্ধ, নির্মল প্রতিবেশ ছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। একজন নিরাপদ মা-ই একটি সস্থ সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে। প্রতিনিয়ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ছাড়াও সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে মাকে শরীর ও মনের ওপর নৈমিত্তিক পরিচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন এগিয়ে যাবার সময়টুকু আরও স্পর্শকাতর এবং আনন্দ বিষাদে ভরা এক ক্রান্তিকালীন পর্যায়। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাতৃত্বকালীন পর্বে মেয়েদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় অনেক অনিয়ম এবং বিপত্তি দৃশ্যমান হয়। শেখ হাসিনার সরকার এখন গর্ভবতী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতারও প্রচলন করেছে। যাতে সন্তান এবং মায়ের সুরক্ষা দিতে কোন ধরনের অর্থ সঙ্কটে পড়তে না হয় অপেক্ষাকৃত নি¤œ আয়ের মানুষদের। সব ধরনের ব্যবস্থাপনায় একজন প্রসূতি তৈরি হতে থাকে কিভাবে তার দেহে লালিত শিশুটিকে জন্ম দিয়ে মাতৃত্বের অপার মহিমাকে স্বাগত জানাবে। কান্নার সশব্দ আওয়াজে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানটি যখন তার আগমন বার্তা জানান দেয় তেমন মুহূর্তটির আনন্দঘন আবেগ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বিশেষ করে নয় মাস নয় দিন গর্ভের লালন করে যে মা সন্তানকে নিয়ে আসে তার খুশির জোয়ারের সঙ্গে অন্য কিছু তুলনীয় নয়। এর পরও থাকে অনেক ঘটনা এবং প্রত্যাশা। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানটিকে নতুন করে সুরক্ষা দিতে যা যা প্রয়োজন সবটাই দিতে হবে। মাকে তো বটেই পরিবারের অন্য সবাইকেও। মনে রাখতে হবে এই শিশুই হবে একটি জাতির ভবিষ্যত। নতুন প্রজন্মকে যথার্থ পরিচর্যায় গড়ে তোলা মাও পরিবারের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
×