ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;রায়ে সন্তোষ প্রসিকিউশনের

রাজশাহীর শিবির নেতা টিপু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজশাহীর শিবির নেতা টিপু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

বিকাশ দত্ত ॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাবেক শিবির নেতা মোঃ আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়। এর আগে ১৭ অক্টোবর প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। রাজাকার টিপু সুলতানসহ অন্যান্য রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। তার মধ্যে শুধু মাত্র টিপু সুলতানই বেঁচে আছেন। ১৭৭ পৃষ্ঠার রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা দুটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগেই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছে। প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল । অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম। প্রসিকিউশন পক্ষ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে আসামি পক্ষ এ রায়ে বিক্ষুব্ধ। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবে। প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইসলামী ছাত্রসংঘ যে আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলেছিল, সে বাহিনী ছিল হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো। আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে সে কথাগুলোই উঠে এসেছে। আসামির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ ছিল। তা প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। তার অপরাধ বিবেচেনা করে ট্রাইব্যুনাল মুত্যুদ-ের রায় প্রদান করেছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেন, এই রায়ে আমার মক্কেল সংক্ষুব্ধ। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন। আশা করি আপীলে তিনি খালাস পাবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধ মামলায় দ-িত আসামি রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করার সুযোগ পান। এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৪১টি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট আসামির সংখ্যা ১০৫ জন। এর মধ্যে সাজা প্রদান করা হয়েছে ৯৫ জনের। রায় হওয়ার পূর্বেই মারা গেছেন ৮ জন। পূর্বেই পলাতক অবস্থায় মারা গেছে ২ জন। এর মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে ১ জন, মৃত্যুদ- ৬৯ জন, আমৃত্যু ২৪ জন, সশ্রম কারাদ- ১ জন। মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের মধ্যে আটক আছে ৩৩ জন। মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক রয়েছে ৩৬ জন , আমৃত্যু কারাদ-ের মধ্যে পলাতক আছে ১২ জন, আমৃত্যু কারাদ-ের মধ্যে আটক রয়েছে ১২ জন, যাবজ্জীবন এক জন, সশ্রম কারাদ- ১ জন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে ৮টি। যার মধ্যে ৬জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে ৩১টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের করা আপীলের মামলার রায় ঘোষণার করা হয়েছে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার অপেক্ষা। এ ছাড়া মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক কৃষিপ্রতিমন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীলের রায় ঘোষণা হবে আগামী ১৪ জানুয়ারি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ মামলার সংখ্যা ৩৩টি। আর আসামি রয়েছে ২১৫ জন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৭ সালের ২ মে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে গত বছর ২৭ মার্চ ছাত্রশিবিরের এই সাবেক নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। গত বছর ২৯ মে প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে ৮ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে টিপু সুলতানের বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন এ মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এছাড়া রাজশাহী জেলার রাজাকার তালিকা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা এবং ১৯৭১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনও জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল। নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া টিপু সুলতানকে (৬৮) একাত্তরের ভূমিকার জন্য রাজশাহীর অনেকে চেনে টিপু রাজাকার নামে।
×