ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শানাকা ধামাকায় বিশাল জয় কুমিল্লার

প্রকাশিত: ১১:২২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

শানাকা ধামাকায় বিশাল জয় কুমিল্লার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বুধবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুর রেঞ্জার্সকে ১০৫ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ ৩ ওভারে ৬৫ রান তুলে নিয়ে কুমিল্লা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে তুলে ফেলে ১৭৩ রান। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইট জ্বলে উঠতেই আরেকটি দ্যুতি সব আলোকেই ম্লান করে দেয়। আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা। শুরুটা যে নিকষ অন্ধকার ঘনিয়ে এনেছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স তাঁবুতে, সেটিকে আলোকিত করেছেন বিস্ফোরোন্মুখ ব্যাটিং তা-বে। মাত্র ২৩ বলে ফিফটির পর অপরাজিত ছিলেন ৩১ বলে ৭৫ রানে। শানাকা ধামাকাতেই বিশাল সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বিশাল এই সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর রেঞ্জার্স। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পারে মাত্র ৩৬ রান। শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার বোলারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৪ ওভারে ৯ উইকেটে ৬৮ রানেই শেষ হয় রংপুরের ইনিংস। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান ফিল্ডিংয়ের সময় আঘাত পেয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কুমিল্লা পড়ে যায় বিপদে। প্রথম বলেই ইয়াসির আলী রাব্বি বোল্ড হয়ে যান মোহাম্মদ নবির অফস্পিনে। পরে ৪১ রান যোগ করেন ভানুকা রাজাপাকসে ও সৌম্য সরকার। তবু দলীয় ৪৭ রানেই ৩ টপঅর্ডার সাজঘরে ফেরেন। দারুন শুরু করেও ওয়ানডাউনে নেমে সৌম্য ১৮ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় আউট হয়েছেন ২৬ রানে। চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমান ও ইংলিশ তারকা ডেভিড মালান ৩৮ রানের জুটি গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পরপর মালান (২৩ বলে ৪ চারে ২৫) ও সাব্বির (১৭ বলে ৩ চারে ১৯) সাজঘরে ফিরলে অল্প রানেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাতে পড়ে কুমিল্লা। এরপরই শুরু হয় ওয়ান ম্যান শো! শানাকা একাই ধ্বসংযজ্ঞ চালান রংপুর রেঞ্জার্স বোলারদের ওপরে। শুরুটা করেছিলেন এ বছরই ইংলিশ জার্সিতে ৫ টি২০ খেলা ডানহাতি পেসার লুইস গ্রেগোরিকে দিয়ে। ১৮তম ওভারে তার ওপর টর্নেডো চালান শানাকা, তুলে নেন ১৬ রান। অথচ এর আগে ২ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন গ্রেগোরি। এই ঝড় অব্যাহত রাখেন শানাকা। ১৯তম ওভারে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ আসেন আক্রমণে। ৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে উড়ছিলেন এ পেসার। কিন্তু এবার তাকে মাটিতে নামিয়ে আনেন শানাকা। সেই ওভারের প্রথম বলটি ডট হলেও তারপর টানা ৪টি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। একটি নো বলও ছিল, শেষ দুটি বলে অবশ্য আর শানাকাকে ব্যাটেই লাগাতে দেননি মুস্তাফিজ। নিজের ৪ ওভারের স্পেল সমাপ্ত করে বেঁচে যান তিনি। ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। মাত্র ২৩ বলে ফিফটি পেয়ে যান শানাকা। শেষ বলে একটি বাইয়ের সুবাদে ১৯তম ওভারের ২৬ রানই বড় সংগ্রহ পাইয়ে দেয় কুমিল্লাকে। পাক পেসার জুনাইদ খানের ওপরও শেষ ওভারে তা-ব চালান শানাকা। ৩ ছয়, ১ চারসহ তুলে নেন ২৩ রান। মাত্র ৩১ বলে ৩ চার, ৯ ছক্কায় ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। যদিও ১৭ ওভার শেষে কুমিল্লার রান ছিল ৬ উইকেটে মাত্র ১০৮! ম্যাচ যারা দেখছিলেন, সবাই নিশ্চিতভাবে ধরে নিয়েছিলেন খুব একটা ভাল সংগ্রহ পাবেনা তারা। কিন্তু শেষ ৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলে নেয় কুমিল্লা, সেটি সম্ভব হয়েছে শুধু শানাকার এমন মারমুখী ব্যাটিং তা-বের কল্যাণে। অথচ আন্তর্জাতিক টি২০ ক্যারিয়ারে মাত্র একবারই ফিফটি রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৩৫ টি২০ ম্যাচ খেলে সেই ফিফটি করেছিলেন দুই বছর আগে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৩৬ বলে ৫৪ রান করেছিলেন। অবশ্য আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক টি২০ ম্যাচে পরিসংখ্যানটা বেশ ভালই শানাকার। ৮০ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ১৬৪৬ রান আছে তার। সর্বোচ্চ ১৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসও খেলেছেন। সেই পরিসংখ্যানটা বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম দিনেই যেন মনে করিয়ে দিলেন শানাকা। নির্ধারিত ২০ ওভারে তাই ৭ উইকেটে ১৭৩ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়ে যায় কুমিল্লা। মুস্তাফিজ, গ্রেগোরি ও সঞ্জিত সাহা ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে রংপুরের শুরুটাও ভাল হয়নি। আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের আঘাতে আরেক আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ (৮ বলে ২ ছয়ে ১৩) সাজঘরে ফেরেন। দলীয় রান তখন মাত্র ১৫। এরপর আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ ধরে রাখলেও একে একে ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জহুরুল ইসলাম (৫), ফজলে রাব্বি (১) ও গ্রেগোরি (০)। ডানহাতি পেসার আলআমিন হোসেন ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই বলে আঘাত হেনেছেন। দুর্বিষহ পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষ করে তারা ৪ উইকেটে ৩৬ রান নিয়ে। এরপরও বাজে পরিস্থিতি থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি তারা। অধিনায়ক নবিও (১১) দ্রুতই ফিরে গেছেন দলকে চরম বিপর্যয়ে ডুবিয়ে। রংপুরের ধ্বংসস্তূপে যেন স্ফিংসের মতো মাথা উঁচিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান নাইম! কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হন সৌম্যর মিডিয়াম পেসে, এলবিডব্লিউর ফাঁদে আটকে সাজঘরে ফেরেন ২৭ বলে ১ চারে মাত্র ১৭ রান করে। এরপর ১৪তম ওভারের শেষ বলে ৬৮ রানে নবম উইকেটের পতন ঘটতেই শেষ হয়ে যায় রংপুরের ইনিংস। আলআমিন ১৪ রানে ৩টি এবং সৌম্য, সানজামুল ইসলাম ২টি করে উইকেট নেন। জাকির হাসান ফিল্ডিংয়ের সময় আঘাত পাওয়ায় নামতে পারেননি ব্যাটিংয়ে। ১০৫ রানের বিশাল জয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দারুণ শুরু পেয়ে যায় কুমিল্লা। স্কোর ॥ কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস- ১৭৩/৭; ২০ ওভার (শানাকা ৭৫*, সৌম্য ২৬, মালান ২৫, সাব্বির ১৯; গ্রেগোরি ২/২৫, সঞ্জিত ২/২৬, মুস্তাফিজ ২/৩৭)। রংপুর রেঞ্জার্স ইনিংস- ৬৮/৯ (অলআউট); ১৪ ওভার (নাইম ১৭, শাহজাদ ১৩; আলআমিন ৩/১৪, সানজামুল ২/৪, সৌম্য ২/১২)। ফল ॥ কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১০৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ দাসুন শানাকা (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।
×