ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমতলীতে কৃষি জমিতে ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

আমতলীতে কৃষি জমিতে ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ১১ ডিসেম্বর ॥ আইন ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন ইটভাঁটি। পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে আতাত করেই ইটভাঁটির মালিকরা অবৈধভাবে ইটভাঁটি নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। ইটভাঁটির মালিকরা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছে না। এতে ফসলি জমি এবং পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফসলি জমি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ফসলি জমিতে ইটভাঁটি না গড়ার আইন থাকলেও অবৈধ ইটভাঁটি মালিকরা তা মানছে না। বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদফতর, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২৭টি জিগজাগ, ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ও পাঁজা ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি হিসাবে অনেক ইটভাঁটিতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে স্তূপ করে রেখেছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা। কৃষি জমিতে ইটভাঁটি নির্মাণ করায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক এলাকায় ভাটি স্থাপন দ-নীয় অপরাধ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাঁটি স্থাপন করাও নিষিদ্ধ। যদি কোন ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাঁটি স্থাপন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। ইটভাঁটির মালিকরা এ সব আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমি, লোকালয় ও গ্রামীণ সড়কের পাশে ইটভাঁটি নির্মাণ করছে। পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন দেখেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন ও তালতলী উপজেলার ছোটবগী, সোনাকাটা ও কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নে ২৭টি জিগজাগ ও ড্রাম চিমনি ইটভাঁটিতে ইট পোড়াচ্ছেন। বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সেকান্দারখালী নামক স্থানে এসইউএবি, এমএসবি, কেএবি ও জিমিসহ ইটভাঁটি ধান ক্ষেতের মধ্যে জিগজাগের চুল্লি নির্মাণ করে মাটি কেটে ইট পোড়াচ্ছে। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের বাদুরা নামক স্থানের ধান ক্ষেতের পাশে ডিবিএম জিগজাগ ইটভাঁটিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আমতলী পৌরসভা সংলগ্ন চাওড়া ইনিয়নের উতশিতলা এলাকার আকন ব্রিকস চারদিকে ধান ক্ষেত তার মধ্যে ইট পোড়াচ্ছে। চালিতাবুনিয়া পাতাকাটা সড়কের পাশে এইচবিএম ড্রাম চিমনি ইট ভাঁটির চারপাশে ধানক্ষেত। ইট পোড়ানোর কারণে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ স্তূপ করে রেখে দিয়েছেন ড্রাম চিমনি ইটভাঁটির মালিকরা। পাতাকাটা গ্রামের কৃষক মোঃ ফিরোজ, মোঃ শহীদ, রাকিব বলেন, ইট ভাঁটির কারণে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ফসল রক্ষায় দ্রুত ইট ভাঁটিটি সরানোর দাবি জানাই। আমতলী পৌরসভা সংলগ্ন চাওড়া উতশিতলা এলাকার জিগজাগ আকন ইটভাঁটির মালিক মোঃ কামাল আকন বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়েই ইট ভাঁটির কাজ শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, আমার ইট ভাঁটির চারপাশে কোন ফসলি জমি নেই। আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিম রেজাউল করিম বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাঁটি নির্মাণ করায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি জমিতে ইটভাঁটি নির্মাণের জন্য আমি কাউকে প্রত্যয়নপত্র দেইনি। আমার প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ইটভাঁটি। পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল বিভাগ পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবদুল হালিম বলেন, আমতলীর অধিকাংশ জিগজাগ ইটভাঁটির পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দেয়া হয়ছে। কিন্তু ড্রাম চিমনি ইটভাঁটিতে কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ধান ক্ষেত অথবা ফসলি জমিতে কেউ ইটভাঁটি নির্মাণ করতে পারবে না। যারা ধান ক্ষেতে ইটভাঁটি নির্মাণ করেছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাঁটি নির্মাণ করা যাবে না। ফসলি জমিতে ইট ভাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×