ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অতঃপর বন্ধ হয়ে গেল শেবাচিমের আইসিইউ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

অতঃপর বন্ধ হয়ে গেল শেবাচিমের আইসিইউ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) কার্যক্রম। দশটি ভেন্টিলেটরের মধ্যে সচল থাকা একমাত্র ভেন্টিলেটরটিও বিকল হয়ে গেছে। বুধবার সকালে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং বরিশালবাসীর আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব পাশে রোগীদের নিবির পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউ চালু করা হয়। দশটি আইসিইউ বেড ও দশটি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন ও একটি সেন্ট্রাল মনিটর নিয়ে চালু হওয়া আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত নার্সের ব্যবস্থাও করা হয়। চিকিৎসক সঙ্কট থাকলেও চালুর পর থেকে জোড়াতালি দিয়ে ইউনিটটিতে রোগী সেবার কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু গত দুইবছরের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আইসিইউর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সূত্রে আরও জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সকালে সচল থাকা মাত্র একটি ভেন্টিলেটর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার কারণে আইসিইউ সেবা না পেয়ে ওইদিনই ডাঃ মারুফ হোসেন নয়ন (৩০) নামের এক জুনিয়র চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে খোদ চিকিৎসকদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ডাঃ নয়ন শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ৪১ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। আইসিইউ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সেবক ও সেবিকারা বলেন, চলতি বছরের ২ অক্টোবর আইসিইউর নতুন নার্সিং ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওইদিন তিনি ১০টির ভেন্টিলেটরের মধ্যে দুইটি সচল অবস্থায় পান। কয়েকদিনের মধ্যে আরও একটি বিকল হয়ে যায়। অবশিষ্ট থাকা মাত্র একটি ভেন্টিলেটর দিয়ে এ যাবত একজন করে রোগীকে নিবির পর্যবেক্ষণে রাখা হতো। কিন্তু শেষ সম্বল একটি ভেন্টিলেটরও মঙ্গলবার বিকল হয়ে যায়। আইসিইউর দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডাঃ নাজমুল হুদা বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে সচল থাকা মাত্র একটি ভেন্টিলেটর মেশিনটি আর কাজ করছে না। এ কারণে মঙ্গলবার আইসিইউর অভাবে ডাঃ মারুফ হোসেন নয়ন নামের একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ডাঃ মারুফ হোসেন নয়ন বরিশাল ডায়াবেটিক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তিনি ভোলা শহরের বাসিন্দা মোশারফ হোসেনের একমাত্র পুত্র। ডাঃ নাজমুল হুদা আরও বলেন, নয়নের এ্যাজমা রোগছিল। এজন্য তাকে খুব দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি। তার আগেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। যা আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক। তিনি বলেন, ভেন্টিলেটর বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। ফলে শেষ ভরসা একমাত্র ভেন্টিলেটরটিও বিকল হওয়ায় আইসিইউ’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
×