ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহীন চৌধুরী ডলি

নগরবাসীর নাভিশ্বাস

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

নগরবাসীর নাভিশ্বাস

ক্ষতিকার পদার্থ বাতাসে মেশার ফলাফলে বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণের কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- শিল্প, যানবাহন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, এবং নগরায়ণের বায়ুদূষণ। পরিবেশে বায়ুদূষণের মাত্রা একদিনে বৃদ্ধি পায়নি। মানুষের কা-জ্ঞানহীন কর্মকা-ে পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীতে আজ ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারী এসে জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। মানুষ প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে পরিবেশ দূষণের বিপজ্জনক খেলার কুফল পেতে শুরু করেছে। দিনে দিনে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। দূষণের নগরী হিসেবে এক নম্বরে থাকা দিল্লিকে টেক্কা দিয়ে আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণের নগরীগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছে। ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণ নিয়ে এখন আর চুপচাপ বসে থাকার সুযোগ নেই। মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ভাবতে বাধ্য করছে। পরিবেশবিদদের কথা শুনে চললে দূষণ এত প্রকট আকার ধারণ করত না। এখানে কেউ কারও কথা শোনে না। মানুষ যদি এভাবে চলতে থাকে আর দূষণের পৃষ্ঠপোষণ করতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিবে। বিশুদ্ধ বায়ু প্রাণীর বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান। অথচ বিশ্বজুড়ে আজ ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ চলছে। জ্বালানি তেল, কয়লা ইত্যাদি পুড়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করছে যা বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। যারা ঢাকায় বসবাসকারী এবং কার্যোপলক্ষে ঢাকায় আসেন কাজের জন্য তাদের বাইরে বের হতে হয়। সবাইকে ধুলাবালির জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শীতের শুরুতেই মারাত্মক বায়ুদূষণে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সারা বছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে জমিয়ে রাখা মাটি শীতকালে ধুলো হয়ে উড়ে। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলতেই থাকে। তা থেকে ধুলাবালিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে চারপাশ। ধুলার রাজ্যে অসহায় হয়ে সাধারণ মানুষের যেমন ভোগান্তি বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে রোগবালাই বাড়ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন রকম দূষণের মধ্যে ধুলা দূষণের অবস্থান শীর্ষে। জীবাণুমিশ্রিত ধুলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি যার কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতির প্রভাব বাড়ছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেলের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা সংস্কার, গ্যাস-বিদ্যুত-পানি-টেলিফোন লাইনের জন্য উন্নয়নের নামে উন্মুক্তভাবে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাস্তার ওপর জমিয়ে রাখা মাটি, বালি, পাথর দিনের পর দিন ছড়িয়ে থাকার পর সেগুলো গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে এবং বাতাসের মাধ্যমে ধুলা ছড়িয়ে পড়ে বায়ুদূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকাই এখন ধুলার চাদরে মোড়ানো। বাংলাদেশে প্রতিদিন অবৈধ ইটভাঁটির সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে ইট পুড়ছে, সঙ্গে মানুষের আগামীর সুদিন পুড়ছে। ইটভাঁটির জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি বাড়ছে, জ্বালানি তেল পুড়ছে, দূষণ বাড়ছে। নগরায়নে অট্টালিকা বাড়াতে কাটা হচ্ছে গাছ। রাস্তায় নামছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ গাড়ি। গাড়ির কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় আগামীর বাংলাদেশ অন্ধকারের দিকে ছুটছে। অট্টালিকা, কল-কারখানা নির্মাণে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। গাছ কাটা পড়ছে। নতুন গাছ রোপণের জায়গা কমে যাচ্ছে। জলাশয় বন্ধ পানির সঙ্কট তৈরি করছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। গাড়ি, কল-কারখানার নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে সীসার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। আজকের কথা ভাবতে গিয়ে আগামীর কথা ভুলে গেলে চলবে না। কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেনের নানা অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইডসহ নানা ক্ষতিকারক উপাদানে মানবদেহের মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃদপি-ে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। মানসিক অবসাদ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বায়ুদূষণ অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। চীনা গবেষণায় পরিচালিত তথ্যমতে, তীব্র বায়ুদূষণ মানুষের বুদ্ধি কমায়। বায়ুদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, এ্যাজমা ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
×