ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের পদক তালিকার খতিয়ান

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের পদক তালিকার খতিয়ান

স্পোর্টস রিপোর্টার, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ মাত্র চার মাস মাসের প্রস্তুতি। অনেকেই বলেছিলেন এবারের এসএ গেমসে আগের আসরের চেয়েও খারাপ ফল করবে বাংলাদেশ। কিন্তু জাতীয় ও ক্রীড়া পরিষদ এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়কণ্ঠে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলÑ আগের আসরের চেয়েও এবার বেশি স্বর্ণ জিতবে বাংলাদেশ ক্রীড়া দল। তাদের কথাই সত্যি হয়েছে। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ যে বিদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত আসর থেকে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ জেতার পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি স্বর্ণজয় করে করে ফেলবে, এমনটা কি কেউ ভেবেছিল? হ্যাঁ, দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এই আসরে আগের সব অর্জনকেই ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৬ খেলা থেকে এসেছে রেকর্ড ১৯ স্বর্ণ। এর মাধ্যমে ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আসরে ১৮ স্বর্ণকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ রৌপ্য জিতেছে ৩৩টি। আর তাম্রপদক ৯০টি। সবমিলিয়ে ১৪২টি পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। রৌপ্য, ব্রোঞ্জ ও মোট পদকপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নিজেদের অতীতের সর্বোচ্চ অর্জনকে এবার ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১০ আসরে ২৩ রৌপ্য ও ২০১০ এবং ২০১৬ আসরে ৫৬টি করে তাম্রপদক জিতেছিল লাল-সবুজরা। ২০১০ আসরেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ৯৭ পদক জিতেছিল। এবার তার চেয়ে আরও ৪৫টি বেশি পদক জিতেছে তারা। যেসব খেলা থেকে বাংলাদেশ এবার স্বর্ণ জিতেছে, তা হলো ১০টি আরচারি থেকে, ৩টি কারাতে, ২টি ক্রিকেট (পুরুষ ও নারী), ২টি ভারোত্তোলন, ১টি করে ফেন্সিং এবং তায়কোয়ানন্দো থেকে। তবে এত কিছু অর্জনের পরও কিছু হতাশাও আছে। এবারের আসরে বাংলাদেশের ২৫টি ফেডারেশন অংশ নিলেও তার মধ্যে পাঁচটি ফেডারেশন কোন পদকই জিততে পারেনি! এগুলো হচ্ছে : ভলিবল, বাস্কেটবল, সাইক্লিং, টেনিস এবং স্কোয়াশ ফেডারেশন তাদের কাছে যেন পদক জেতা বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা! এছাড়া আলোচনা হতে পারে শূটিং ইভেন্ট নিয়েও। অথচ এসএ গেমসে বাংলাদেশ ২০১৬ আসর পর্যন্ত যত স্বর্ণ জিতেছে (৬৭), তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২টি স্বর্ণপদকই এসেছিল শূটিং থেকে। এসএ গেমস শুরু সেই ১৯৮৪ সাল থেকে। ১৯৯১ সাল থেকে শূটিং ইভেন্টটি অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকে প্রতি আসরেই এই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে আসছিলেন বাংলাদেশী শূটাররা। তবে এর ব্যত্যয় ঘটে ২০০৬ কলম্বো আসরে। সেবার কোন স্বর্ণ জেতেননি বাংলাদেশী শূটাররা। ১৯৯৩ ঢাকা আসরে শূটাররা সর্বোচ্চ ৭টি স্বর্ণ জিতেছিলেন। অথচ এবার শূটাররা পুনরাবৃত্তি করেছেন ২০০৬ আসরের, ১টি স্বর্ণও জেতেননি তারা! এবারের অর্জন ৬ রৌপ্য ও ৪ তাম্রপদক। এর ফলে ১৩ বছর পর শূটিংয়ে স্বর্ণবিহীন সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের। বাস্কেটবলে এবার বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ বিভাগের কোচ, ম্যানেজার, কর্মকর্তা ও খেলোয়াড় মিলিয়ে ৩৩ জন অংশ নেয়। এবারই প্রথম নারী বাস্কেটবল দল অংশ নেয়। তাদের নিয়ে কোন প্রত্যাশা না থাকলেও ছেলেদের নিয়ে ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি। অথচ সেই ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ বাস্কেটবল দল অংশ নিচ্ছে এসএ গেমসে। ১৯৯১, ১৯৯৫ সালে খালি হাতে ফিরলেও ২০১০ সালে ব্রোঞ্জ জিতেছিল পুরুষ বাস্কেটবল দল। এরপর ২০১৬ সালের মতো এবারও কোন পদক জেতেনি বাস্কেটবল দল! ভলিবলে এবার বাংলাদেশ দল নারী, পুরুষ ও বিচ ভলিবল (পুরুষ) তিনটি ইভেন্টে অংশ নেয়। সবমিলিয়ে মোট ৩৮ জনের বহর। কিন্তু তারাও থেকেছে পদকশূন্য হয়ে! বাংলাদেশ ভলিবল দল ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ৫টি ব্রোঞ্জ জিতেছিল। এরপর ২০ বছর হযে গেল কোন পদকই জিততে পারেনি তারা! সাইক্লিং দল তো এবার প্যাডেলই মারতে পারেনি ঠিকমতো। ভুগেছেন শ^াসকষ্টে। করেছেন বমি। দুই ম্যানেজার, তিন কোচ, ১৪ সাইক্লিস্ট ও ৫ কর্মকর্তাসহ মোট ১৯ জনের বহরের প্রয়াস এবার অশ^ডিম্ব! ২০০৬ সাল থেকে সাইক্লিং দল অংশ নিচ্ছে। ২০১০ সালে জিতেছিল ১টি তামার পদক। এবারের আসর নিয়ে ১০ বছর ধরে কোন পদকই জিততে পারছে না তারা! ১৯৯১ সালে ২ ব্রোঞ্জ, ১৯৯৫ সালে ১ ব্রোঞ্জ... এই ছিল এসএ গেমসে বাংলাদেশ টেনিস দলের কীর্তিগাঁথা। ২০১৬ আসরের মতো এবারের আসরেও তারা বেশ ‘দাপট’-এর সঙ্গেই পদকশূন্য থাকার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে! এবার ম্যানেজার, কোচ, খেলোয়াড়সহ মোট ১১ জনের বহর ছিল তাদের। স্কোয়াশের অবস্থাও তথৈবচৈ। এক ম্যানেজার, এক কোচ কাম ম্যানেজার ও চার খেলোয়াড়সহ মোট ৬ জনের বহর তাদের। ফলাফল শূন্য। অথচ শুনলে অবাক হবেন, ১৯৮৯ সাল থেকেই তারা অংশ নিয়ে আসছে এসএ গেমসে। ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৬ সালে ব্রোঞ্জ জেতার পর এবার তাদের অর্জন শূন্য!
×